কোরআন ও সুন্নতের বিস্ময়ঃ

কোরআন ও সুন্নতের বিস্ময়ঃ

কোরআন ও সুন্নতের বিস্ময়ঃ

আল কুরআআনের বিস্ময়সমূহ

$Dr._YoshiodiKozan.jpg*

প্রফেসর আসুধা কুঝান

টোকিও পর্যবেক্ষণ অধিকর্তা
ভ্রূণের বর্ণনা
“আল কোরআনকে আল্লাহর কালাম বলে গ্রহণ করার ব্যাপারে কোন ধরণের জটিলতা আমি পাইনি। কেননা কোরআনে বর্নিত ভ্রুণের বর্ণনা সপ্ত শতাব্দীতে জানা সম্ভব ছিলনা। এসব কিছু জানার বিবেকসম্মত একমাত্র উপায় ছিল আল্লাহ তায়া’লার পক্ষ থেকে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি প্রেরিত অহী”।

প্রত্যেক রাসুলেরই তাদের নবুয়াত ও রিসালাতের সত্যতার জন্য কিছু মুজিযা ও নিদর্শন থাকে। যেমনঃ মূসা (আঃ) এর মু’জিযা ছিল তাঁর লাঠি, ঈসা (আঃ) এর মু’জিযা ছিল কুষ্ঠ ও শ্বেত রোগীকে অরোগ্য করা, আল্লাহর আদেশে মৃতকে জীবিত করা। সর্বশেষ নবী ও রাসুল মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের রিসালাত যেহেতু সর্বযুগে ও স্থানে প্রযোজ্য ও অবশিষ্ট তাই তাঁর মু’জিযাও ছিল সেসবের সাথে সামাঞ্জস্যপূর্ণ, তা হলো মহাগ্রন্থ আল কোরআন। কোরআন যেহেতু হিদায়েতের কিতাব, তাই এ মোবারকময় কিতাব সব কিছুরই বিস্ময় ও রহস্য। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের রিসালাতের সত্যতা প্রমাণে এ কোরআন বিস্ময় ছিল ও আছে, ইহা স্রষ্টা, রিজিকদাতা, চিরঞ্জীব ও চিরস্থায়ী মহান আল্লাহ তায়া’লার পক্ষ থেকে প্রেরিত। এ কিতাব সর্বশেষ নবী ও রাসুল মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উপর অবতীর্ণ, সর্বকালে ও স্থানে সকলের জন্য প্রযোজ্য। উপরোল্লেখিত নানা রহস্য ও বিস্ময় ছাড়াও আল কোরআন বিজ্ঞানের বিভিন্ন তথ্যের ব্যাপারেও মহাবিস্ময়কর। কোরআনে প্রকৃতির নানা সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম তথ্য বর্ণিত হয়েছে, যা বর্তমানে অনেক গবেষকের প্রচেষ্টায় আধুনিক বিজ্ঞান সে সব কিছু আবিষ্কার করতে সক্ষম হয়েছে। উদাহরণ স্বরূপঃ মানব সৃষ্টির বিভিন্ন ধাপ, ভ্রূণের সৃষ্টি, যা শত শত বছর পূর্বে মানুষ এ সম্পর্কে কিছু জানার আগেই কোরআন এ সম্পর্কে সূক্ষ্ম বর্ণনা দিয়েছে। আল্লাহ তায়া’লা বলেনঃ আমি মানুষকে মাটির সারাংশ থেকে সৃষ্টি করেছি। অতঃপর আমি তাকে শুক্রবিন্দু রূপে এক সংরক্ষিত আধারে স্থাপন করেছি। এরপর আমি শুক্রবিন্দুকে জমাট রক্তরূপে সৃষ্টি করেছি, অতঃপর জমাট রক্তকে মাংসপিন্ডে পরিণত করেছি, এরপর সেই মাংসপিন্ড থেকে অস্থি সৃষ্টি করেছি, অতঃপর অস্থিকে মাংস দ্বারা আবৃত করেছি, অবশেষে তাকে নতুন রূপে দাঁড় করিয়েছি। নিপুণতম সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ কত কল্যাণময়। (সূরা মু’মিনূনঃ ১২-১৪)

আল্লাহ তায়া’লা আরো বলেনঃ তিনি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন তোমাদের মাতৃগর্ভে পর্যায়ক্রমে একের পর এক ত্রিবিধ অন্ধকারে। তিনি আল্লাহ তোমাদের পালনকর্তা, সাম্রাজ্য তাঁরই। তিনি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। অতএব, তোমরা কোথায় বিভ্রান্ত হচ্ছ? (সূরা যুমারঃ ৬)

চিকিৎসকেরা যখন তাদের তথ্যসূত্র ও আবিষ্কারের মূলে চিন্তা গবেষণা করেছেন, তখন তারা মহাজ্ঞানী ও মহাবিজ্ঞ আল্লাহ তায়া’লা যেভাবে বলেছেন সেভাবেই পেয়েছেন।

$Henri_de_Castries.jpg*

হ্যানরী দ্যি কাস্টারী

ফরাসি সাবেক সেনা অফিসার
নিরক্ষর রাসুল
“আমাদের বিবেক দিশেহারা হয়ে যায় যখন ভাবি, কিভাবে এ সব আয়াত একজন নিরক্ষর লোক হতে প্রকাশ পেয়েছে। প্রাচ্যের সকলেই একমত যে, কোরআনের আয়াতসমূহ শাব্দিক বা আর্থিক যেকোন ভাবেই হোক তৈরি করা একজন মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়”।

এছাড়াও শরীরে মানুষের অনুভূতির স্থানগুলোর ব্যাখ্যায়ও তারা কোরআনের অনুরূপ ব্যাখ্যা দিয়েছেন। আল্লাহ তায়া’লা বলেনঃ এতে সন্দেহ নেই যে, আমার নিদর্শন সমুহের প্রতি যেসব লোক অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করবে, আমি তাদেরকে আগুনে নিক্ষেপ করব। তাদের চামড়াগুলো যখন জ্বলে-পুড়ে যাবে, তখন আবার আমি তা পালটে দেব অন্য চামড়া দিয়ে, যাতে তারা আযাব আস্বাদন করতে থাকে। নিশ্চয়ই আল্লাহ মহাপরাক্রমশালী, হেকমতের অধিকারী। (সূরা নিসাঃ ৫৬)

মহাশূন্যের প্রশস্ততার বর্ণনা। আল্লাহ তায়া’লা বলেনঃ আমি স্বীয় ক্ষমতাবলে আকাশ নির্মাণ করেছি এবং আমি অবশ্যই ব্যাপক ক্ষমতাশালী। (সূরা যারিয়াতঃ ৪৭)

সূর্য তার কক্ষপথে ঘূর্ণায়নের বর্ণনা। আল্লাহ তায়া’লা বলেনঃ তাদের জন্যে এক নিদর্শন রাত্রি,আমি তা থেকে দিনকে অপসারিত করি,তখনই তারা অন্ধকারে থেকে যায়। সূর্য তার নির্দিষ্ট অবস্থানে আবর্তন করে। এটা পরাক্রমশালী,সর্বজ্ঞ,আল্লাহর নিয়ন্ত্রণ। (সূরা ইয়াসিনঃ ৩৭-৩৮)

হাদীসের বিস্ময়সমূহ

এ সব বিস্ময়কর ও রহস্যময় তথ্যের ব্যাপারে রাসুলের হাদীসও অনেক তথ্য দিয়েছে। উম্মুল মু’মিনীন আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ “বনী আদমের প্রত্যেককে তিনশত ষাটটি (৩৬০টি গ্রন্থি) জোড়া দিয়ে সৃষ্টি করা হয়েছে। অতএব, যে ঐ তিনশ’ ষাট সংখ্যা পরিমাণ আল্লাহু আকবর, আলহামদুলিল্লাহ, লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ, আস্তাগফিরুল্লাহ বললো, ও মানুষের চলার পথ থেকে একটি পাথর বা একটি কাঁটা বা একটি হাড় সরালো অথবা কাউকে কোন ভাল কাজের উপদেশ দিলো অথবা কোন খারাপ কাজ থেকে নিষেধ করলো, ঐ দিন সে নিজেকে দোযখ থেকে দূরে রাখলো। (মুসলিম শরীফ)।

বর্তমানে বিজ্ঞানের দ্বারা প্রমাণিত যে, মানুষ শরীরে এ সব গ্রন্থি ছাড়া এ জীবনে তার অস্তিত্বের স্বাদ ভোগ করতে পারেনা। তার উপর খিলাফতের যে দায়িত্ব অর্পিত হয়েছে তা আদায় করতে সক্ষম হয়না। এজন্যই মানুষের উচিত প্রত্যহ আল্লাহ তায়া’লার সে সব নিয়ামতের শুকরিয়া জ্ঞাপন করা, যা প্রত্যেক সৃষ্টিকে সুনিপুণ পরিমাপে মহান স্রষ্টার সৃষ্টির সাক্ষ্য বহন করে। এ হাদীসের বিস্ময়কর ব্যাপার হলো মুহাম্মদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মানুষের শরীরের গ্রন্থি সংখ্যা নির্দিষ্ট করে বলেছেন, তিনি এমন এক সময় এ সব তথ্য দিয়েছেন যখন মানুষের পক্ষে এ সব জানা সম্ভব ছিলনা, এ সম্পর্কে তাদের সামান্যতম জ্ঞানও ছিলনা। এমনকি একবিংশ শতাব্দির অনেক মানুষই তা জানেনা, বরং চিকিৎসা বিজ্ঞানের অনেক বিশেষজ্ঞরাও জানতনা!! কিন্তু পরবর্তীতে চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেছেন যে, মানুষের শরীরে ৩৬০টি গ্রন্থি আছে, যা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম চৌদ্দশত বছর পূর্বে নির্ধারণ করে গেছেন। সেগুলো হলোঃ মেরুদন্ডে (১৪৭) টি, বুকে (২৪) টি, শরীরের উপরি অর্ধভাগে (৮৬) টি ও নিম্নার্ধভাগে (১৫)টি এবং মধ্যভাগে (২৯) টি গ্রন্থি রয়েছে।

কে এই নিরক্ষর নবীকে শিক্ষা দিয়েছেন?

$Debora Botter.jpg*

ডেবোরা পটার

মার্কিন মহিলা সাংবাদিক
মহাবিশ্বের বিস্ময়
“জাহেলিয়াতের যুগে বসবাস করে একজন নিরক্ষর লোক মুহাম্মদ কিভাবে কোরআনে উল্লেখিতি মহাবিশ্বের সে সব রহস্য সম্পর্কে জানল যা এখনও আধুনিক বিজ্ঞান আবিষ্কার করতে সক্ষম হয়নি? ইহা এটাই প্রমাণ করে যে, ইহা আল্লাহ তায়া’লার কালাম”।

এখানে প্রশ্ন হলো যে, মহান আল্লাহ তায়া’লা ছাড়া কে সর্বশেষ নবী ও রাসুল মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বিজ্ঞানের এ সব অতিসূক্ষ্ম তথ্য শিক্ষা দিয়েছে, বিংশ শতাব্দী ছাড়া যে সব তথ্য মানুষের পক্ষে জানা সম্ভব হয়নি?!

কার পক্ষে সম্ভব ছিল মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে এ সব অদৃশ্যের বিষয় নিয়ে জানানো?! সর্বজ্ঞানী মহান আল্লাহ তায়া’লা জানতেন যে, একদিন মানুষ শরীরের এ সব সূক্ষ্ম রহস্যের ব্যাখ্যা জানতে পারবে, তখন এ হাদীসের নূরানী ইশারাই তার রাসুলের সত্যতা ও আসমানী অহীর সাথে তার সম্পর্কের সত্যতার সাক্ষ্য হবে।

তবে জ্ঞান-বিজ্ঞান ও সভ্যতার পথ যতক্ষণ আখলাক চরিত্রের পথ না হবে, তাহলে উহা ধ্বংসাত্মক সভ্যতা, নিশ্চিহ্ন, দুর্ভাগ্য ও ধ্বংসের জ্ঞান হবে। মানুষকে সুখী করা ও তাদের সেবায় প্রয়োজনীয় জ্ঞান হবেনা। এজন্যই জ্ঞান ও সভ্যতার পথ আখলাকেরও পথ। এমনিভাবে জ্ঞান ও সভ্যতা ছাড়া সুখ-শান্তির পথ শুধুই কল্পকাহিনী ও অবিশ্বাস্য। অতএব, আখলাক ছাড়া জ্ঞান-বিজ্ঞান ও সভ্যতার পথ ব্যক্তি, জাতি, সমাজ ও মানবতাকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যায়।




Tags: