উন্নত অনুন্নত এমন কোন জাতি বা গোষ্ঠী পাওয়া যাবেনা যাদের সংস্কৃতি নাই, যা তাদের স্বভাবের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে থাকে। সংস্কৃতি হলো জীবন যাপনের পথ, জীবন ও অস্তিত্বের অবস্থান, সুউচ্চ নীতিমালা ও সামাজিকতা যা জীবনের বাহ্যিক দিক ও রূপকে নির্দেশ করে। সকল কার্যকলাপ ও আচার আচরণের প্রতিফলন। ইহা সমাজকে প্রিয় অভ্যাসে অভ্যস্থ করে এবং তার উপর অটল থাকাকে সংরক্ষন করে। আর সভ্যতা হলো সমাজের সংস্কৃতির সাথে বাড়তি একটি বৈশিষ্ট্য, যা অগ্রগতি, উন্নতি, ব্যক্তি ও সমষ্টিক সফলতা, বাস্তবতার আলোকে অর্জন, ইতিহাসের পাতায় উল্লেখযোগ্য প্রভাব, কোন কিছু সৃষ্টিতে কার্যকর ভুমিকা, এমন কার্যকারিতা যা স্থান ও কালের সীমা ছড়িয়ে একত্রিত ও আলাদা রূপে দীপ্তশীল, এসব কিছুকে শামিল করে। এভাবেই সকল সভ্যতা প্রকৃতি, পরিবেশ, রাজনীতি, ধর্ম, সংস্কৃতি, বিজ্ঞান ও আখলাকের সাথে বুনন ও গভীর সম্পর্কের মাধ্যমে সৃষ্টি করে। উক্ত উপাদানগুলো আমরা একই পাত্রে মিশ্রিত দেখি, ইহাই একটি জাতির সভ্যতা, ইহাই উক্ত জাতির বৈশিষ্ট্য ও গুনাবলী।
এভাবে আমরা দেখি যে, ইসলাম অসহিষ্ণু ও অনুন্নত একটি গোষ্ঠীকে মহান আখলাক, সুউচ্চ মূলনীতিবান জাতিতে পরিণত করেছে। মাত্র কয়েক দশকের মাঝে তাদের মধ্যে এমন নাগরিকতা ও সভ্যতা বিস্তার করে, যার দ্বারা তারা পৃথিবী জয় করে নেয়। এ সভ্যতায় সে সময়ে অনেক জনগোষ্ঠীই সাড়া দিয়েছিল, কেননা মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে দ্বীনের সুসংবাদ দিয়েছিলেন তা ছিল সহজ-সরল, ন্যায়নীতি, ভ্রাতৃত্ব ও সাম্যে ভরপুর। ইসলামের সভ্যতা এমন এক সময় এসেছিল যখন মানুষ দাসত্ব ও স্বৈরশাসনের পুরাতন রাষ্ট্র ব্যবস্থায় অতিষ্ট হয়ে পড়েছিল। তারা এ নতুন ব্যবস্থাপনায় আকৃষ্ট হলো, কেননা তারা দেখলো রাজা বাদশাদের স্বৈরচারিতা, একনায়কতন্ত্রের নির্যাতনের পরিবর্তে এতে রয়েছে তাদের জন্য সম্মানবোধ ও মানবতা। ফলে ইসলামই তাদের জন্য ছিল এক সোনালী সুযোগ। কেননা ইহা তাদের অনেক সমস্যার সমাধান দিয়েছে, তারা এখানে সম্মানিত জীবন পেয়েছে, যা তারা প্রত্যাশা করত। এমনিভাবে ইসলাম তাদের থেকে জুলুম, নির্যাতন, অজ্ঞতা ও পশ্চাদপসারতা দূর করল।
ইসলামী সভ্যতা মানুষকে সম্মান দিয়েছে। গোত্র, বর্ণ বা ভাষার কারণে একে অন্যের উপর কোন আলাদা মর্যাদা বা পার্থক্য করেনি। বরং সকলেই আচরণ ও অধিকারের ক্ষেত্রে সমান। মানব জাতির অগ্রগতিতে ইসলামী সভ্যতা কার্যকর ভূমিকা রেখেছে। গোত্রীয় স্বৈরতন্ত্র যা রক্ত ও বংশের ভিত্তিতে গড়ে উঠত, তা পরিবর্তন করে আক্বীদা ও চিন্তাভাবনায় একই সমগোষ্ঠীর পদ্ধতি চালু করেছে, যা ভ্রাতৃত্ব ও সাম্যের ভিত্তিতে সামাজিক বন্ধন সৃষ্টি করে।
ইসলামের দৃষ্টিকোণে সভ্যতার প্রথম লক্ষ্যই হলো সুখ-শান্তি, নিরাপত্তা বাস্তবায়ন, সুন্দর সমাজ গঠন, যে সব জিনিসে কল্যাণ আছে তা দিয়ে মানুষকে সুখী করা এবং সব ধরণের অকল্যাণের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করা। যেহেতু সামাজিকভাবে নানা উপায়ে সভ্যতার উন্নতি মূলত মূল লক্ষ্য-উদ্দেশ্য নয়। বরং প্রকৃত সভ্যতার উদ্দেশ্য হলো সমাজ ও দেশে শান্তি, নিরাপত্তার মাধ্যমে মানুষের মানসিক সুখ, আন্তরিক প্রশান্তি আনা। আর ইহা সম্ভব হয় ভাল ও কল্যাণকর কাজ করা ও মন্দ ও খারাপ কাজ থেকে বিরত থাকার মাধ্যমে।
আধুনিক সভ্যতা ইহার বিপরীত, কেননা তা নিরাশা ও উদ্বিগ্নতা বাড়িয়ে দেয়। মানুষকে অন্যায়ভাবে শারীরিক ও জৈবিক ভ্রষ্টতার নিষ্পেষণে ভোগায়। আর আখলাক-চরিত্র, সম্মানবোধ, ধার্মিকতা ইত্যাদি সুউচ্চ মানবিক গুনাবলী থেকে দূরে সরিয়ে দেয়। মানুষকে যান্ত্রিক করে তোলে, তার কোন আত্মা থাকেনা, শক্তিশালীরা দুর্বলকে জুলুম নিষ্পেষণ করে।