ইসলাম ও জ্ঞান-বিজ্ঞান

ইসলাম ও জ্ঞান-বিজ্ঞান

ইসলাম ও জ্ঞান-বিজ্ঞান

ইসলাম বিজ্ঞান ও জ্ঞানের ধর্ম

$RobertJoseph.jpg*

রবার্ট বায়ের জোসেফ

ফরাসি বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন শাস্ত্রের অধ্যাপক
পড়... ইসলামের আহবান
“নিঃসন্দেহে ইসলাম - জ্ঞান বিজ্ঞানের ধর্ম- ইহা তার অনুসারীদেরকে জ্ঞান বিজ্ঞান ও আমলের দ্বারা পাথেয় সংগ্রহ করতে সর্বদা আহবান করে। এতে কোন সঃন্দেহের অবকাশ নেই; কেননা আল কোরআনের সর্বপ্রথম আয়াতই হলোঃ পড়ুন আপনার রবের নামে”।

নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, সুখ-সৌভাগ্য অবশ্যই জ্ঞান-বিজ্ঞান ও সভ্যতার পথে চলে। অজ্ঞতা ও পশ্চাদগামিতার পথে কখনও চলতে পারেনা। নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আনিত ইসলাম ধর্মের ন্যায় অন্য কোন ধর্ম বা মতবাদ নেই যা জ্ঞানীদের মর্যাদা সুউঁচু করেছে, তাদের সাথে সুন্দর আচরণ করতে বলেছে, জ্ঞানের প্রতি উৎসাহিত করেছে, বিবেবকে কাজে লাগাতে বলেছে ও চিন্তা-গবেষণা করতে আহবান করেছে। তিনি এক মহা সভ্যতা গড়েছেন, যা পৃথিবীর পূর্ব থেকে পশ্চিমে বিস্তৃতি লাভ করে। এজন্যই তাঁর আগমনকে জ্ঞান পিপাসু ও জ্ঞানীদের নিকট প্রকৃত জ্ঞানের এক মহাবিপ্লব হিসেবে গণ্য করা হয়। তাইতো ইসলাম জ্ঞান দিয়েই শুরু করেছে। খোদায়ী হেদায়েতের আলোতে পৃথিবী আলোকিত করেছে। আল্লাহ তায়া’লা বলেনঃ তারা কি জাহেলিয়াত আমলের ফয়সালা কামনা করে? আল্লাহ অপেক্ষা বিশ্বাসীদের জন্যে উত্তম ফয়সালাকারী কে? (সূরা মায়েদাঃ ৫০)

এ ধর্মে অজ্ঞতা, সন্দেহ, ধারণা বা সংশয়ের কোন স্থান নেই। নিরক্ষর নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লামের উপর প্রথমেই অবতীর্ণ হয়ঃপাঠ করুন আপনার পালনকর্তার নামে যিনি সৃষ্টি করেছেন। সৃষ্টি করেছেন মানুষকে জমাট রক্ত থেকে। পাঠ করুন, আপনার পালনকর্তা মহা দয়ালু, যিনি কলমের সাহায্যে শিক্ষা দিয়েছেন, শিক্ষা দিয়েছেন মানুষকে যা সে জানত না। (সূরা আলাকঃ ১-৫)

এটা স্পষ্ট যে, এই প্রথম বিষয়টিই এ ধর্ম বুঝার চাবিকাঠি, দুনিয়া জানার চাবিকাঠি বরং সকল মানুষের গন্তব্যস্থল আখেরাত জানারও চাবিকাঠি।

কুরআন ও হাদীসে বিজ্ঞানের মর্যাদা

$Stanly_Lane-Pool.jpg*

স্ট্যানলি লেন. পল

ব্রিটিশ বিজ্ঞানী
মসজিদ... বিশ্ববিদ্যালয়
“আগেকার দিনে - এখনও কিছু কিছু জায়গায়- মসজিদসমূহ ছিল ইসলামের বিশ্ববিদ্যালয়। জ্ঞান পিপাসু ছাত্রদের দ্বারা ইহা শোরগোলে ভরপুর ছিল। তারা বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ধর্মীয়, শরিয়ত, দর্শন, চিকিৎসা, গণিত ইত্যাদি বিষয়ের জ্ঞান অন্বষণে উলামাদের পাঠদান শুনতে আগমন করত। বিশ্বের নানা প্রান্তর থেকে আরবীতে দক্ষ উলামারা নিজেরাও পাঠদান করতে আসতেন। দেশে জাতি নির্বিশেষে সকল ছাত্রদেরকেই স্বাগত জানানো হতো”।

বরং একটু লক্ষ্য করলেই বুঝা যায় যে, আল কোরআন জ্ঞান-বিজ্ঞানের ব্যাপারে গুরুত্ব শুধুমাত্র প্রথম নাযিলের সময়ই দেয়নি, বরং মানব সৃষ্টির শুরু থেকেই এ ব্যাপারে গুরুত্ব দিয়েছে। কোরআনের অনেক আয়াতে এ ব্যাপারে আলোচনা এসেছে। আল্লাহ তায়া’লা আদম (আঃ) কে সৃষ্টি করলেন, তাঁকে পৃথিবীতে প্রতিনিধি বানালেন এবং ফেরেশতাদেরকে তাঁকে সিজদা করার নির্দেশ দিয়ে অনেক সম্মান ও মর্যাদা দিলেন। অতঃপর তিনি আমাদের ও ফেরেশতাদেরকে তাঁর সুউচ্চ সম্মান ও মর্যাদার কারণ বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেন ইহা জ্ঞানের কারণেই। আল্লাহ তায়া’লা এ ব্যাপারে বলেনঃ আর তোমার পালনকর্তা যখন ফেরেশতাদিগকে বললেনঃ আমি পৃথিবীতে একজন প্রতিনিধি বানাতে যাচ্ছি, তখন ফেরেশতাগণ বলল, তুমি কি পৃথিবীতে এমন কাউকে সৃষ্টি করবে যে দাঙ্গা-হাঙ্গামার সৃষ্টি করবে এবং রক্তপাত ঘটাবে? অথচ আমরা নিয়ত তোমার গুণকীর্তন করছি এবং তোমার পবিত্র সত্তাকে স্মরণ করছি। তিনি বললেন, নিঃসন্দেহে আমি জানি, যা তোমরা জান না। আর আল্লাহ তা’আলা শিখালেন আদমকে সমস্ত বস্তু-সামগ্রীর নাম। তারপর সে সমস্ত বস্তু-সামগ্রীকে ফেরেশতাদের সামনে উপস্থাপন করলেন। অতঃপর বললেন, আমাকে তোমরা এগুলোর নাম বলে দাও, যদি তোমরা সত্য হয়ে থাক। তারা বলল, তুমি পবিত্র! আমরা কোন কিছুই জানি না, তবে তুমি যা আমাদিগকে শিখিয়েছ (সেগুলো ব্যতীত) নিশ্চয় তুমিই প্রকৃত জ্ঞানসম্পন্ন, হেকমতওয়ালা। তিনি বললেন, হে আদম, ফেরেশতাদেরকে বলে দাও এসবের নাম। তারপর যখন তিনি বলে দিলেন সে সবের নাম, তখন তিনি বললেন, আমি কি তোমাদেরকে বলিনি যে, আমি আসমান ও যমীনের যাবতীয় গোপন বিষয় সম্পর্কে খুব ভাল করেই অবগত রয়েছি? এবং সেসব বিষয়ও জানি যা তোমরা প্রকাশ কর, আর যা তোমরা গোপন কর! (সূরা বাকারাঃ ৩০-৩৩)

ইসলামে জ্ঞানের গুরুত্ব ও মর্যাদা শুধু কোরআন নাযিলের শুরুতেই সীমাবদ্ধ ছিলনা, যেহেতু কোরআনের প্রথম শব্দই জ্ঞান সম্পর্কে, আল্লাহ তায়া’লা বলেনঃ পাঠ করুন বরং ইহা এই চিরস্থায়ী সংবিধানের স্থায়ী পথ ও পদ্ধতি। কোরআনের এমন কোন সূরা পাওয়া যাবেনা যেখানে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জ্ঞান সম্পর্কে আলোচনা করা হয়নি। আল্লাহ তায়া’লা জ্ঞানের দ্বারা সর্বোচ্চ সাক্ষ্য তথা তাঁর তাওহীদের সাক্ষ্য-প্রমাণের নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহ তায়া’লা বলেনঃ জেনে রাখুন, আল্লাহ ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। ক্ষমাপ্রার্থনা করুন, আপনার ক্রটির জন্যে এবং মুমিন পুরুষ ও নারীদের জন্যে। আল্লাহ, তোমাদের গতিবিধি ও অবস্থান সম্পর্কে জ্ঞাত। (সূরা মুহাম্মদঃ ১৯)

অতএব, এতে জ্ঞান ও জ্ঞানীদের উচ্চ মর্যাদা প্রমাণিত হয়, বরং যারা জানে ও যারা জানে না তাদের মাঝে সমতা করতে নিষেধ করা হয়েছে। আল্লাহ তায়া’লা বলেনঃ বলুন, যারা জানে এবং যারা জানে না; তারা কি সমান হতে পারে? চিন্তা-ভাবনা কেবল তারাই করে, যারা বুদ্ধিমান। (সূরা যুমারঃ ৯)

বরং তিনি যারা জ্ঞানপ্রাপ্ত তাদের জন্য আখেরাতে অপরিসীম প্রতিদান ছাড়াও দুনিয়াতেও তাদের মর্যাদা উচ্চ করেছেন। আল্লাহ তায়া’লা বলেনঃ তোমাদের মধ্যে যারা ঈমানদার এবং যারা জ্ঞানপ্রাপ্ত,আল্লাহ তাদের মর্যাদা উচ্চ করে দিবেন। আল্লাহ খবর রাখেন যা কিছু তোমরা কর। (সূরা মুজাদিলাঃ ১১)

এছাড়া কোরআনে জ্ঞান ছাড়া অন্য কিছু অধিক প্রাপ্তির জন্য এতো উৎসাহ দেয়নি। আল্লাহ তায়া’লা বলেনঃএবং বলুনঃ হে আমার পালনকর্তা, আমার জ্ঞান বৃদ্ধি করুন। (সূরা তোয়াহাঃ ১১৪)

এ থেকেই বুঝা যায়, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিন্মোক্ত বাণী মোটেও অতিরিক্ত নয়। তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ “যে ব্যক্তি জ্ঞান অন্বেষণের পথে চলবে আল্লাহ তায়া’লা তার জন্য জান্নাতের রাস্তা সহজ করে দিবেন। জ্ঞান অন্বেষণকারীর সন্তুষ্টিকরণে ফেরেশতারা তাদের ডানা বিছিয়ে দেয়। ইলম অন্বেষণকারীর জন্য আসমান ও জমিনের সবাই ইস্তিগফার করতে থাকে, এমনকি পানির নিচের মাছও। আবেদের উপর আলেমের মর্যাদা যেমন সমস্ত গ্রহ-নক্ষত্রের উপর চাঁদের মর্যাদা। উলামাগণ আম্বিয়াদের ওয়ারিশ। আর আম্বিয়া কিরামগণ দিনার বা দিরহামের (অর্থকড়ির) ওয়ারিশ করেননি, তাঁরা ইলমের ওয়ারিশ করেছেন। সুতরাং যে ব্যক্তি ইলম লাভ করল, সে পূর্ণ অংশই প্রাপ্ত হলো”। (মুসলিম শরীফ)। এজন্যই রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আগমনের পরে মসজিদ্গুলো ইলম ও উলামাদের দূর্গে পরিণত হয়েছিল।

$Maurice_Bucaille.jpg*

মরিস বুকাইলী

ফরাসি বিজ্ঞানী ও ডাক্তার
আল কোরআনের বৈজ্ঞানিক বিস্ময়
“আল কোরআনে প্রাকৃতিক বিজ্ঞান সম্পর্কে অনেক আয়াত এসেছে, যা ডঃ ইউসুফ মারওয়াহ তার “আল কোরআনে প্রাকৃতিক বিজ্ঞান” বইয়ে উল্লেখ করেছেন। নির্দিষ্টভাবে বলতে গেলে ইহা (৭৭৪)টি আয়াত। ইহার বিস্তারিত হলো নিম্নরূপঃ গণিত (৬১), পদার্থবিদ্যা (২৬৪), অণু (৫), রসায়ণ (২৯), আপেক্ষিক বিজ্ঞান (৬২), জ্যোতির্বিজ্ঞান (১০০), আবহাওয়া (২০), জলজ (১৪) মহাকাশ বিজ্ঞান (১১), প্রাণিবিদ্যা (১২), কৃষিবিজ্ঞান (২১), জীববিজ্ঞান (৩৬), সাধারণ ভূগোল (৭৩), মানব প্রজনন (১০), ভূতত্ত্ব (২০), মহাবিশ্ব এবং মহাজাগতিক ঘটনার ইতিহাস (৩৬)টি আয়াত”।

সবচেয়ে আশ্চর্যজনক ব্যাপার হলো, কোরআনে “ইলম” শব্দটির বিভিন্ন রুপান্তর পরিসংখ্যান করে দেখা গেছে ইহা (৭৭৯) বার এসেছে, অর্থাৎ কোরআনের প্রত্যেক সূরাতে প্রায় সাত বার করে এসেছে! আর ইহা শুধু তিন অক্ষরের “ইলম” শব্দটির ব্যবহার। তবে ইলমের সমার্থক অর্থে ব্যবহৃত শব্দ অনেক বার এসেছে। যেমনঃ ইয়াকিন, হেদায়েত, আকল, ফিকির বা চিন্তাভাবনা, নজর বা দৃষ্টিপাত, হিকমা বা প্রজ্ঞা, ফিকহ, বুরহান বা প্রমাণ, দলিল, হুজ্জাত বা প্রমাণ, আয়াত বা নিদর্শন, বাইয়্যেনাহ বা স্পষ্ট প্রমাণ এবং এভাবে ব্যবহৃত অনেক শব্দাবলী যা ইলমের অর্থ বুঝায় ও ইলমের প্রতি উৎসাহিত করে। অন্যদিকে রাসুলের সুন্নতে ইহা এত বেশি সংখ্যক বার ব্যবহৃত হয়েছে যে, এর পরিসংখ্যান করাই প্রায় কঠিন ও অসম্ভবপর।

ইসলামের দ্বারাই মানবজাতির উন্নয়ন

$Stanly_Lane-Pool.jpg*

স্ট্যানলি লেন. পল

ব্রিটিশ প্রাচ্যবিশেষজ্ঞ
সংস্কৃতির প্রতি প্রচন্ড ভালবাসা
“মানব ইতিহাসে কখনও সংস্কৃতির জন্য হঠাৎ আবেগময় হয়ে উঠার সেই আন্দোলনের মত আকর্ষনীয় কোন ঘটনা ঘটেনি, যেমনটি ঘটেছিল সে সময়ে সারা মুসলিম জাহান জুড়ে। তখন প্রত্যেক মুসলমান খলিফা থেকে শ্রমিক সকলেই যেন জ্ঞানের জন্য হঠাৎ আসক্ত হয়ে গেল, জ্ঞান অন্বেষণে সফর করতে তৃষ্ণার্ত হয়ে উঠল। আর এটা ছিল ইসলাম সর্বক্ষেত্রে যে সব অবদান রেখেছে তার মাঝে সর্বোত্তম। জ্ঞান পিপাসু ছাত্রদের পদচারণায় তখনকার শিক্ষাকেন্দ্রসমূহ যেমন বাগদাদ নগরী, এরপরে অন্যান্য কেন্দ্রসমূহ যা কলা ও বিজ্ঞানের জন্য প্রস্তুত ছিল ইত্যাদি মুখরিত ছিল। যেমনিভাবে ইউরোপীয় জ্ঞানীদের হাতে আধুনিক মতাদর্শ গড়ে উঠেছিল, তাদের হাতে আধুনিক জ্ঞানের নানা গবেষণায় সেখানকার বিশ্ববিদ্যালয় গুলো তরঙ্গায়িত হতো; বরং তাদের চেয়েও বেশী আকর্ষনীয় ও চমৎকার ছিল”।

কোরআন যদিও রসায়ণ, পদার্থ, জীব বা গণিত শাস্ত্র নয়, কেননা ইহা হেদায়েতের কিতাব, তথাপিও আধুনিক বিজ্ঞান যা কিছু প্রমাণ করেছে তা আল কোরআনের সাথে কখনও বিরোধপূর্ণ নয়।

পরবর্তীতে এ সব কিছুর সুদূর প্রভাব ইসলামী রাষ্ট্রে পরিলক্ষিত হয়েছিল। জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখা-প্রশাখায় অনেক অবিষ্কার হয়েছিল। এমন সব বিস্ময়কর আবিষ্কার যা ইতিহাস কখনও দেখেনি, যা মুসলমানদের হাতে এক মহা সভ্যতা প্রতিষ্ঠা ও বাস্তবায়ন করেছে। তারা মানব সভ্যতা ও সংস্কৃতিতে এমন এক অভূতপূর্ব জ্ঞান ভাণ্ডার রেখে গিয়েছিল যা সারা পৃথিবীবাসীকে ঋণী করে রেখেছে। ম্যাক্স মাইরহোপ বলেনঃ “ইউরোপে পদার্থ বিজ্ঞানের উন্নতি সরাসরি জাবের ইবনে হাইয়ানেরই অবদান। এর সবচেয়ে বড় প্রমাণ হলো ইউরোপের নানা ভাষায় বিজ্ঞানের অনেক পরিভাষায় এখনও তাঁর ব্যবহৃত পরিভাষাই ব্যবহৃত হয়েথাকে”।

$Gustaf_Lubon.jpg*

গোস্তাফ লে বন

ফরাসি ইতিহাসবিদ
জ্ঞান- বিজ্ঞানের সভ্যতা
যখনই আমরা আরব সভ্যতা, তাদের জ্ঞান সমৃদ্ধ বইসমূহ এবং তাদের অবিষ্কার ও শিল্পকলা নিয়ে গভীরভাবে গবেষণা করি, তখন আমাদের সামনে নতুন তথ্য ও বিস্তৃত সম্ভাবনা প্রকাশিত হয়। আমরা সহজেই দেখতে পাই যে, মধ্যযুগে আরবরা পূর্ববর্তীদের জ্ঞান বিজ্ঞানের অধিকারী। পাশ্চাত্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সেসব জ্ঞান বিজ্ঞান সম্পর্কে পাঁচ শতাব্দী ধরে তাদের বইসমূহ ছাড়া কিছুই জানত না। আরবরাই ইউরোপকে পার্থিব, জ্ঞানগত ও চারিত্রিকভাবে সভ্য সংস্কৃত করেছে। ইতিহাসে কোন জাতিকে দেখা যায় না যারা এতো অল্প সময়ে এতো কিছু উপহার দিয়েছে। প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে কেউ তাদের থেকে বেশী অগ্রসর হতে পারেনি”।

আলডোমিলি বলেনঃ “আমরা যখন গণিত ও জ্যোতির্বিদ্যায় তাকাই তবে আমরা প্রথম যুগের বিজ্ঞানীদের কথাই বলতে বাধ্য হব। আর তাদের মধ্যে অন্যতম হলেনঃ আবু আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ ইবনে মূসা আল খাওয়ারেজমী[1].... তিনি বিখ্যাত গণিতবিদদের জন্য গণিতের নানা শাখা প্রশাখা খুলে গেছেন। তাঁর লিখিত বই ষষ্টদশ শতক পর্যন্ত ইউরোপের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠদান করা হত”।

সিগরীড হোংকে (Sigrid Hunke) আল জাহরাবীর “আল তাসরিফ লিমান আজেজা আ’নেত তা’লিফ”[2] কিতাবের পঞ্চম খণ্ডের সার্জারি অধ্যায় সম্পর্কে বলেনঃ এই কিতাবের তৃতীয় অধ্যায় ইউরোপে অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলেছে। কেননা ইহা ইউরোপে সার্জারির মূল ভিত্তি হিসেবে স্বীকৃত। চিকিৎসা বিজ্ঞানে ইহার অপরিসীম মূল্য। ফলে কাটা ছিঁড়া (ব্যবচ্ছেদ) বিজ্ঞানে জখম ও সার্জারি একটি আলাদা বিষয় হিসেবে প্রকাশ পেয়েছে, ইহার রয়েছে নির্ভরযোগ্য মূলনীতি ও ভিত্তি।ইউরোপের অগ্রগতিতে পাঁচ শতাব্দির অধিক কাল ধরে আল জাহরাবীর এ কিতাবের অনেক অবদান রয়েছে। ইউরোপের নানা বিশ্ববিদ্যালয়ে এ কিতাব পাঠদান করা হত, ইউরোপের শৈল্যচিকিতসকরা এ কিতাবের মুখাপেক্ষী হতেন ও ইহার থেকে সাহায্য নিতেন।

এখনও মুসলিম বিজ্ঞানীরা মানবজাতির কল্যাণে অনেক কিছু আবিষ্কার করে আসছে। আহমদ জুয়েল [3] “বিজ্ঞানের যুগ” বইয়ে বলেনঃ “আমার কাজ ছিল অনেকগুলো ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশের একত্রিত ও পৃথক হওয়ার ক্ষেত্রে অনুর পরিবর্তন নিয়ে, অনুরুপভাবে সেকেন্ডের ভিতরের সময় নিয়ে, এমনভাবে যে, সেকেন্ডটা একটা বড় সময় হিসেবে রূপান্তরিত হয়।

এ কথা সকলেরই জানা যে, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আনিত এ জ্ঞান-বিজ্ঞান, হিদায়েত ও আলো মানবজাতিকে বদ্ধতার শৃঙ্খল থেকে মুক্তি দিয়েছে। যুগে যুগে জ্ঞান-বিজ্ঞান, সভ্যতা ও সংস্কৃতির দ্বারা মানবজাতির মর্যাদা সুউচ্চ করেছে।

[1] তিনি বীজগণিত এর প্রতিষ্ঠাতা, ভারতীয় নম্বর সিস্টেমের সংজ্ঞাকারক, গণিত গবেষণা, জ্যোতির্বিদ্যা ও ভূগোলের নানা তথ্যের উদ্ভাবক। [2] ইহা ত্রিশ খন্ডে চিকিৎসা বিশ্বকোষ। এর বৈশিষ্ট্য হলো, এতে রয়েছে প্রচুর চিত্র, এর লেখক আল জাহরাবীর সার্জারিতে ব্যবহৃত প্রচুর যান্ত্রিক রূপ। দ্বাদশ শতকে ল্যাটিন ভাষায় জেরার্ড এই বইয়ের সার্জারি অধ্যয় অনুবাদ করেন। এর পরে এ বইয়ের বিভিন্ন সংস্করণ বের হয়। প্রথম সংস্করণ ১৪৯৭ সালে ভেনিসে, দ্বিতীয় ১৫৪১ সালে বাসেলে এবং তৃতীয় সংস্করণ ১৭৭৮ সালে অক্সফোর্ডে। উনবিংশ শতাব্দীতে ডঃ Leclerc ফরাসি ভাষায় অনুবাদ করেন। [3] মিশরী রাসায়নিক বিজ্ঞানী, ১৯৯৯ সালে ক্যামেরার সূক্ষ্ম বিশ্লেষণের ক্যামেরা আবিষ্কারের জন্য রসায়নে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। (Femtosecond Spectroscopy) পদ্ধতিতে তার গবেষণায় রাসায়নিক বিক্রিয়ার ব্যবহার করেছেন, যাতে সমগ্র বিশ্ব একটি নতুন সময় প্রবেশ করে যা ইতিপূর্বে মানুষ প্রত্যাশা করেনি। এতে রাসায়নিক বিক্রিয়ার ক্ষেত্রে আধুনিক দ্রুত লেজারের মাধ্যমে অণুগুলোর গতি পর্যবেক্ষন সম্ভব হয়। এমনিভাবে ডঃ আহমাদ জুয়েল অস্বাভাবিক দ্রুত ফটোগ্রাপ পদ্ধতি আবিষ্কার করেন,যা লেজারের মাধ্যমে কাজ করে। এর মাধ্যমে একটি অংশ অপর অংশের সাথে মিলিত হওয়া ও আলাদা হওয়ার সময় অংশগুলোর গতি লক্ষ্য রাখা যায়। আর যে সময়ের মাঝে ফটোর কাজ সম্পন্ন হয় তা এক সেকেন্ড এর দশ লক্ষ বিলিয়ন অংশের এক অংশ।

ইসলামের পথ হলো জ্ঞান-বিজ্ঞানের পথ

$Rene_Guenon.jpg*

রিনে জীনো

ফরাসি দার্শনিক
বিস্ময়কর কোরআন
“আমি আল কোরআনে প্রাকৃতিক বিজ্ঞান সম্পর্কিত আয়াতসমূহ গবেষণা করে দেখেছি যে, এসব আয়াত আমাদের আধুনিক জ্ঞানের সাথে পুরোপুরি প্রযোজ্য। আমি বিশ্বাস করেছি যে, হাজার বছর পূর্বে মুহাম্মদ মানবজাতির থেকে কোন শিক্ষকের সাহায্য ছাড়াই স্পষ্ট সত্য নিয়ে আগমন করেছিলেন। যে কোন বিজ্ঞানী বা শিল্পী তার জ্ঞানের সাথে কোরআনের সংশ্লিষ্ট আয়াতসমূহ তুলনা করে, যেমনিভাবে আমি করেছি, তবে নিঃসন্দেহে সে কোরআনের বশ্যতা স্বীকার করবে, যদি সে বিবেকসম্পন্ন হয় এবং হীন উদ্দেশ্য থেকে মুক্ত হয়”।

ইসলাম জ্ঞানের পথে চলার পদ্ধতি নিয়ে এসেছে। যেমনঃ ইসলামে অজ্ঞভাবে কাউকে অনুসরণ করতে নিষেধ করেছে। আল্লাহ তায়া’লা মুশরিকদের সম্পর্কে বলেছেনঃ তখন তারা বলে কখনো না, আমরা তো সে বিষয়েরই অনুসরণ করব। যাতে আমরা আমাদের বাপ-দাদাদেরকে দেখেছি। যদি ও তাদের বাপ দাদারা কিছুই জানতো না, জানতো না সরল পথও। (সূরা বাকারাঃ ১৭০)

জ্ঞানের পথ ছেড়ে ধারণা ও অনুমানের অনুসরণ করতেও নিষেধ করেছে। আল্লাহ তায়া’লা বলেনঃ তারা শুধু অলীক কল্পনার অনুসরণ করে এবং সম্পূর্ণ অনুমান ভিত্তিক কথাবার্তা বলে থাকে। (সূরা আন’আমঃ ১১৬)

এছাড়াও জ্ঞান, যুক্তি, আকল ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার বিপরীতে ভ্রান্ত প্রবৃত্তির অনুসরণও নিষেধ করেছেন। আল্লাহ তায়া’লা বলেনঃঅনেক লোক স্বীয় ভ্রান্ত প্রবৃত্তি দ্বারা না জেনে বিপথগামী করতে থাকে। (সূরা আন’আমঃ ১১৯)

আরো নিষেধ করেছে হিংসা-বিদ্বেষ ও শত্রুতা হতে যা ন্যায় বিচার থেকে দূরে সরিয়ে দেয়। আল্লাহ তায়া’লা বলেনঃ এবং কোন সম্প্রদায়ের শত্রুতার কারণে কখনও ন্যায়বিচার পরিত্যাগ করো না। সুবিচার কর এটাই খোদাভীতির অধিক নিকটবর্তী। আল্লাহকে ভয় কর। তোমরা যা কর, নিশ্চয় আল্লাহ সে বিষয়ে খুব জ্ঞাত। (সূরা মায়েদাঃ ৮)

জ্ঞান-বিজ্ঞানকে পরিবর্তন করে লক্ষ্যচ্যুত করাকেও নিষেধ করেছে। আল্লাহ তায়া’লা ইহুদীদের সম্পর্কে বলেনঃকোন কোন ইহুদী তার লক্ষ্য থেকে কথার মোড় ঘুড়িয়ে নেয় এবং বলে, আমরা শুনেছি কিন্তু অমান্য করছি। (সূরা নিসাঃ ৪৬)

কারো উপর সীমালঙ্ঘন ও ঝগড়া করতে মানা করেছে। আল্লাহ তায়া’লা বলেনঃ অভিযোগ কেবল তাদের বিরুদ্ধে, যারা মানুষের উপর অত্যাচার চালায় এবং পৃথিবীতে অন্যায়ভাবে বিদ্রোহ করে বেড়ায়। (সূরা শুরাঃ ৪২)

মানুষের মাঝে ন্যায় বিচার করতে ইলমী আমানতের থেকে দূরে সরে যেতে নিষেধ করেছে। আল্লাহ তায়া’লা বলেনঃ আর যখন তোমরা মানুষের কোন বিচার-মীমাংসা করতে আরম্ভ কর, তখন মীমাংসা কর ন্যায় ভিত্তিক। (সূরা নিসাঃ ৫৮)

ন্যায়নীতি, ন্যায়ের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকা ও ন্যায়সঙ্গত সাক্ষ্য দেয়া থেকে সরে যাওয়াও নিষেধ করেছে। আল্লাহ তায়া’লা বলেনঃ হে ঈমানদারগণ, তোমরা ন্যায়ের উপর প্রতিষ্ঠিত থাক; আল্লাহর ওয়াস্তে ন্যায়সঙ্গত সাক্ষ্যদান কর, তাতে তোমাদের নিজের যদি ক্ষতি হয় তবুও। (সূরা নিসাঃ ১৩৫)

দলিল, প্রমাণ ও যুক্তিযুক্ত অনুসন্ধান থেকে বিরত থাকতে নিষেধ করেছে। আল্লাহ তায়া’লা বলেনঃ তোমরা যদি সত্যবাদী হও তবে তোমাদের প্রমাণ উপস্থিত কর। (সূরা নামলঃ ৬৪)

এছাড়াও আরো অনেক কিছু, যা জ্ঞান ও সভ্যতার পথে বিজ্ঞান সম্মত পথ ও পদ্ধতি সৃষ্টি করেছে।




Tags: