- আপনি কি এ মহাবিশ্ব ও এর মধ্যে বিদ্যমান আকাশ ও জমিন দেখেছেন?!
- আকাশ, গ্রহরাজি ও ছায়াপথ ইত্যাদির সৃষ্টি নিয়ে আপনি কি কখনো ভেবে দেখেছেন?
- জমিন ও জমিনের মধ্যে বিদ্যমান নদ-নদী, সমুদ্র,সমতল ও পাহাড় ইত্যাদি নিয়ে কি কখনো চিন্তাগবেষণা করেছেন?!
- এ নিখুঁত বিন্যাস ও অনুপম সৃজন কি আপনাকে বিস্ময়াভূত করেনা?!
- আপনার কি ধারণা? কে এ মহাবিশ্ব সৃষ্টি করেছেন এবং পূর্বের কোন নমুনা ছাড়া এত সুন্দর, সুনিপুনভাবে বিস্ময়কর আকৃতিতে তৈরি করেছেন, যা একটি সৌন্দর্য্যের প্রতীক হয়ে আছে ?!
- আপনি কি মনে করেন যে ইহা নিজে নিজেই সৃষ্ট হয়েছে? নাকি এর রয়েছে একজন শক্তিমান মহান স্রষ্টা?!
আল্লাহ তায়া’লা বলেনঃ নিশ্চয় আসমান ও যমীন সৃষ্টিতে এবং রাত্রি ও দিনের আবর্তনে নিদর্শন রয়েছে বোধ সম্পন্ন লোকদের জন্যে। যাঁরা দাঁড়িয়ে, বসে, ও শায়িত অবস্থায় আল্লাহকে স্মরণ করে এবং চিন্তা গবেষণা করে আসমান ও জমিন সৃষ্টির বিষযে, (তারা বলে) পরওয়ারদেগার! এসব তুমি অনর্থক সৃষ্টি করনি। সকল পবিত্রতা তোমারই, আমাদিগকে তুমি দোযখের শাস্তি থেকে বাঁচাও। (আলে ইমরানঃ ১৯০-১৯১)
কখনো কি আপনি নিজের সৃষ্টি নিয়ে চিন্তা করেছেন? আল্লাহ তায়া’লা বলেনঃ
এবং তোমাদের নিজেদের মধ্যেও, তোমরা কি অনুধাবন করবে না? (যারিয়াতঃ২১)
মানুষ কিভাবে সৃষ্ট হয়েছে? আল্লাহ তায়া’লা বলেনঃ
তারা কি আপনা-আপনিই সৃজিত হয়ে গেছে, না তারা নিজেরাই স্রষ্টা? না তারা নভোমন্ডল ও ভূমন্ডল সৃষ্টি করেছে? বরং তারা বিশ্বাস করে না। (তুরঃ ৩৫-৩৬)
মানুষ যখন এমনিতেই সৃষ্টি হয়নি – তারা নিজেদেরকে সৃষ্টি করা থাক দূরের কথা বরং আসমান জমিন কিছুই সৃষ্টি করেনি- তাহলে সন্দেহাতীতভাবে বলা যায় এ মহাবিশ্ব ও এর ভিতর যা কিছু আছে তার একজন মহান স্রষ্টাআছে, তিনি হলেন আল্লাহ তায়া’লা। এসব দলীল প্রমানের পরেও সে সুনিপুণ আকৃতি দানকারী মহান আল্লাহর অস্তিত্বের অস্বীকার কারীদের ব্যাপারে আশ্চর্য না হয়ে পারা যায়না !!
স্বভাবগতভাবেই নিঃসন্দেহে সৃষ্টজীব তার মহান স্রষ্টাকে স্বীকার করে। যেভাবে স্বভাবগতভাবে তারা কল্যাণকর জিনিস পছন্দ করে আর খারাপ জিনিস অপছন্দ করে। বরং স্রষ্টার অস্তিত্ব স্বীকার করা মানুষের মনে স্বভাবজাতগত ও দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত, যার জন্য কোন দলীল প্রমাণের দরকার পড়েনা। আল্লাহ তায়া’লা বলেনঃ
তুমি একনিষ্ঠ ভাবে নিজেকে ধর্মের উপর প্রতিষ্ঠিত রাখ। এটাই আল্লাহর প্রকৃতি, যার উপর তিনি মানব সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহর সৃষ্টির কোন পরিবর্তন নেই। এটাই সরল ধর্ম। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ জানে না। (রূমঃ ৩০)
নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাহিস সালাম বলেছেনঃ “প্রত্যেক ভুমিষ্ঠজাত শিশুই স্বভাবপ্রসূত হয়ে জন্ম গ্রহণ করে” (বুখারী ও মুসলিম)
সৃষ্টির শুরু থেকেই সব জাতি এ ব্যাপারে একমত যে, এ মহাবিশ্ব সৃষ্টি করেছেন মহান আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামীন। সুতরাং একথা দৃঢ়ভাবে বলা যায় যে, আল্লাহ তায়া’লা এ মহাবিশ্ব কোন অংশীদার ছাড়াই সৃষ্টি করেছেন। কোন জাতিই এ কথা বলেননি যে, আসমান- জমীনে আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন স্রষ্টা বা রিজিকদাতা আছেন। বরং যখনই তাদেরকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হয় তখনই তারা অকপটে আল্লাহ তাআলার প্রভূত্বকে স্বীকার করে – শিরক সহকারে- । আল্লাহ তায়া’লা বলেনঃ
যদি আপনি তাদেরকে জিজ্ঞেস করেন, কে নভোমন্ডল ও ভূ-মন্ডল সৃষ্টি করেছে, চন্দ্র ও সূর্যকে কর্মে নিয়োজিত করেছে? তবে তারা অবশ্যই বলবে আল্লাহ। তাহলে তারা কোথায় ঘুরে বেড়াচ্ছে? আল্লাহ তাঁর বান্দাদের মধ্যে যার জন্য ইচ্ছা রিযিক প্রশস্ত করে দেন এবং যার জন্য ইচ্ছা হ্রাস করেন। নিশ্চয়, আল্লাহ সর্ববিষয়ে সম্যক পরিজ্ঞাত। যদি আপনি তাদেরকে জিজ্ঞেস করেন, কে আকাশ থেকে বারি বর্ষণ করে, অতঃপর তা দ্বারা মৃত্তিকাকে উহার মৃত হওয়ার পর সঞ্জীবিত করে? তবে তারা অবশ্যই বলবে, আল্লাহ। বলুন, সমস্ত প্রশংসা আল্লাহরই। কিন্তু তাদের অধিকাংশই তা বোঝে না। (আনকাবুতঃ ৬১-৬৩)
আল্লাহ তায়া’লা আরো বলেনঃ
আপনি যদি তাদেরকে জিজ্ঞাসা করেন কে নভোমন্ডল ও ভূ-মন্ডল সৃষ্টি করেছে? তারা অবশ্যই বলবে, এগুলো সৃষ্টি করেছেন পরাক্রমশালী সর্বজ্ঞ আল্লাহ। (জুখরুফঃ ৯)
তবে নাস্তিকতা ও আল্লাহকে অস্বীকার – যা ইতিপূর্বে খন্ডন করা হয়েছে- অস্বাভাবিকত্ব ও বিচ্ছিন্ন ঘটনামাত্র যা নাস্তিকদেরকে জ্ঞানীদের কাতার থেকে পিছিয়ে রেখেছে, পৃথিবীতে এর ব্যর্থতা ও অসারতা স্পষ্ট হয়ে গেছে।
আল্লাহর অস্তিত্বের প্রমাণে উপরোল্লিখিত এ সব দলীল প্রমাণ ছাড়াও মানুষের বিবেকই সবচেয়ে বড় প্রমাণ যে, এ সুনিপুণ সৃষ্টি নিজে নিজে হতে পারেনা, এগুলো নতুন সৃষ্টবস্তু, যা একসময় ছিলনা। আর প্রত্যেক নতুন সৃষ্টবস্তুই – সন্দেহাতীতভাবে- একজন স্রষ্টার মুখাপেক্ষী।
এখন নিজেকে একটি প্রশ্ন করুনঃ আপনি জীবনে কতবার বিপদে পড়েছেন? সে সময় আপনি কার নিকট আশ্রয় চেয়েছেন? কার নিকট আকুতি মিনতি করেছেন? কার নিকট আশা করেছেন যিনি আপনার বিপদআপদ দূর করে দিবেন?! আল্লাহ পাক বলেনঃ যখন মানুষকে দুঃখ-কষ্ট স্পর্শ করে, তখন সে একাগ্রচিত্তে তার পালনকর্তাকে ডাকে, অতঃপর তিনি যখন তাকে নেয়ামত দান করেন, তখন সে কষ্টের কথা বিস্মৃত হয়ে যায়, যার জন্যে পূর্বে ডেকেছিল এবং আল্লাহর সমকক্ষ স্থির করে; যাতে করে অপরকে আল্লাহর পথ থেকে বিভ্রান্ত করে। বলুন, তুমি তোমার কুফর সহকারে কিছুকাল জীবনোপভোগ করে নাও। নিশ্চয় তুমি জাহান্নামীদের অন্তর্ভূক্ত। (যুমারঃ ৮)
আল্লাহ পাক বলেনঃ তিনিই তোমাদের ভ্রমন করান স্থলে ও সাগরে। এমনকি যখন তোমরা নৌকাসমূহে আরোহণ করলে আর তা লোকজনকে অনুকূল হাওয়ায় বয়ে নিয়ে চলল এবং তাতে তারা আনন্দিত হল, নৌকাগুলোর উপর এল তীব্র বাতাস, আর সর্বদিক থেকে সেগুলোর উপর ঢেউ আসতে লাগল এবং তারা জানতে পারল যে, তারা অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে, তখন ডাকতে লাগল আল্লাহকে তাঁর এবাদতে নিঃস্বার্থ হয়ে যদি তুমি আমাদেরকে এ বিপদ থেকে উদ্ধার করে তোল, তাহলে নিঃসন্দেহে আমরা কৃতজ্ঞ থাকব। তারপর যখন তাদেরকে আল্লাহ বাঁচিয়ে দিলেন, তখনই তারা পৃথিবীতে অনাচার করতে লাগল অন্যায় ভাবে। হে মানুষ! শোন, তোমাদের অনাচার তোমাদেরই উপর পড়বে। পার্থিব জীবনের সুফল ভোগ করে নাও-অতঃপর আমার নিকট প্রত্যাবর্তন করতে হবে। তখন আমি বাতলে দেব, যা কিছু তোমরা করতে। (ইউনুসঃ ২২-২৩)
আল্লাহ পাক আরো বলেনঃ
যখন তাদেরকে মেঘমালা সদৃশ তরংগ আচ্ছাদিত করে নেয়, তখন তারা খাঁটি মনে আল্লাহকে ডাকতে থাকে। অতঃপর তিনি যখন তাদেরকে স্থলভাগের দিকে উদ্ধার করে আনেন, তখন তাদের কেউ কেউ সরল পথে চলে। কেবল মিথ্যাচারী, অকৃতজ্ঞ ব্যক্তিই আমার নিদর্শনাবলী অস্বীকার করে। (লোকমানঃ ৩২)