মানুষ শুরুতেই উপরোল্লিখিত প্রশ্নের জবাব দু’ভাবে খুঁজতে চেষ্টা করে। একটা হলো নাস্তিকতার পদ্ধতিতে, যে পদ্ধতিতে কোন ইলাহে বিশ্বাস করা হয়না এবং মনে করা হয়যে, এ বিশ্ব একটি উপাদান মাত্র।
দ্বিতীয় পদ্ধতিটি হলোঃ সে পদ্ধতি,যাতে বিশ্বাস করা হয় যে, আল্লাহ তায়া’লা সব কিছু সৃষ্টি করেছেন। এদু’ধরণের পদ্ধতির ফলে অনেকগুলো প্রশ্ন দেখা দেয়, তাহলোঃ
-এ মহাবিশ্ব কি কোন সময়ের নির্ধারণ ব্যাতিত আকস্মিক ঘটনাচক্রে শুরু থেকেই এমনিতেই সৃষ্টি হওয়া সম্ভব ?!
- কোন বিবেকবান লোক এটা কি ভাবতে পারে যে, এ সুশৃংখল মহাবিশ্ব আকস্মিক ঘটনাচক্রে সৃষ্ট হয়েছে?!!
-মানুষ সৃষ্টির শুরু থেকে অদ্যবদি যা কিছু পেয়েছে, ইতিহাসের ধারাবাহিকতায় যেসব উন্নতি হয়েছে এগুলো কি শুধুই আকস্মিক ঘটনা?!! আমরা কি শুধুই বাতাসের মুখে পতিত পালকের মত , যা আকস্মিক ঘটনা ও বিশৃঙ্খলতায় উলোট-পালট হতে থাকে?!
- মানুষ কি নিজেই আইন প্রণয়নকারী উপাস্য ? সে কি নিজেই সব কিছুর সৃষ্টিকর্তা? এ সবের পিছনে কি কিছুই নেই?
- আমাদের দৃষ্টির আড়ালে অদৃশ্যজগত কি শুধুই মরীচিকা, যা ধর্মহীনরা ও দৃশ্যমানে বিশ্বাসীরা বলে বেড়ায়?
- মানুষ কি যেকোন বিবেচনায় শুধুই পদার্থ ? নাকি তাদের মূল হচ্ছে বানর, যা যুগের পরিক্রমায় মানুষের রূপ ধারণ করেছে? এ নিষ্প্রাণ পদার্থ থেকে কিভাবে উচ্চ বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন, মহান গুণাবলী ও আশ্চর্য গঠনপ্রণালীর মানুষ সৃষ্টি হওয়া সম্ভব?! যার কাছে যে বস্তু নেই সে কিভাবে অন্যকে তা প্রদান করবে?!
-দুনিয়াই কি মানুষের শেষ লক্ষ্যবস্তু? এতেই কি তার সকল আশার সমাপ্তি? আসমানী ধর্মসমূহ যে বলে, মানুষ ছাড়া অন্য একটি শক্তি আছে বা মানুষের এ জীবন ছাড়াও অন্য একটি জীবন আছে তার কি কোনই বাস্তবতা ও গ্রহণযোগ্যতা নেই?
আল্লাহ তায়া’লা এ সবের ব্যাপারে চিন্তাভাবনা করতে ইরশাদ করেনঃ তারা বলে, আমাদের পার্থিব জীবনই তো শেষ; আমরা মরি ও বাঁচি মহাকালই আমাদেরকে ধ্বংস করে। তাদের কাছে এ ব্যাপারে কোন জ্ঞান নেই। তারা কেবল অনুমান করে কথা বলে। (জাসিয়াঃ ২৪)
যারা এসবের অস্বীকার করে তাদের ব্যাপারে আল্লাহ পাক বলেনঃ তারা অন্যায় ও অহংকার করে নিদর্শনাবলীকে প্রত্যাখ্যান করল, যদিও তাদের অন্তর এগুলো সত্য বলে বিশ্বাস করেছিল। অতএব দেখুন, অনর্থকারীদের পরিণাম কেমন হয়েছিল?(নামলঃ ১৪)
নাস্তিকরা ধর্মের ব্যাপারে যে বলে, ধর্ম শুধুই কাল্পনিক বিষয় এটাই যদি সঠিক হত তাহলে কেন মানুষের মাঝে ধর্মের সম্মানবোধ এভাবে বিরাজ করে।
যুগে যুগে আম্বিয়া কেরামগণ কেন সফল হয়েছেন? তাদের রেখে যাওয়া মতাদর্শ কেন মানুষের মনে এখনো বিরাজ করছে? অথচ অন্যান্য মানুষের চিন্তাভাবনা মুছে যায়, বরং তা যতই বাগ্মিতাপূর্ন হোক যুগের পরিক্রমায় একসময় তা নিঃশেষ হয়ে হয়ে, মানুষ ভুলে যায়।
কে ভাল কাজ করল আর কে খারাপ কাজ করল তা কিভাবে পার্থক্য করা হবে? মানুষকে কোন জিনিস অন্যায় কাজ থেকে বিরত রাখবে? কোন বিষয় ধনীকে গরিবের প্রতি দয়াশীল করবে? চোর, ধোকাবাজ, খিয়ানতকারী, ও নেশাখোরকে কোন জিনিস বিরত রাখবে? ... কোন বিষয় তাদেরকে মনের খামখেয়ালীপণা থেকে বিরত রাখবে?
নাস্তিক্য সমাজব্যবস্থায় মানুষ এমনভাবে বসবাস করে, যেভাবে হিংস্র নেকড়ে অন্যায় অত্যাচার, স্বার্থপরতা ও মনোবাসনাপূরন ইত্যাদি নিয়ে বসবাস করে। এজন্যই নাস্তিকতা হলো দুঃখ-কষ্ট, দারিদ্রতা এবং ঘৃণা-বিদ্বেষ, উদ্বেগ ও অস্তিরতা বৃদ্ধির অন্যতম কারন। আল্লাহ তায়া’লা বলেনঃ এবং যে আমার স্মরণ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে, তার জীবিকা সংকীর্ণ হবে এবং আমি তাকে কেয়ামতের দিন অন্ধ অবস্থায় উত্থিত করব । (ত্বহাঃ ১২৪)
নাস্তিকতা একটি ভ্রান্ত চিন্তাভাবনা যা সুস্থ জ্ঞান ও স্বভাব গ্রহণ করতে পারেনা। ইহা বিজ্ঞানের সাথে এর সম্পর্ক বৈপরিত্বের। এজন্যই অনেক বিজ্ঞানীগণ এটার প্রতিবাদ করেছেন। এমনিভাবে ইহা যুক্তি তর্কেরও বিপরীত। কেননা ইহার মূল ভিত্তিই হলো জীবনের কোন যুক্তি নেই, এ সুন্দর পৃথিবী এমনিতেই সৃষ্টি হয়েছে, জীবনের কোন স্বভাবজাত ধারা নেই। সুস্থ স্বভাব সকল মানুষকে, এমনকি নাস্তিকতার দাবীদারকেও ধর্মের দিকে আহবান করে।
তারা অন্যায় ও অহংকার করে নিদর্শনাবলীকে প্রত্যাখ্যান করল, যদিও তাদের অন্তর এগুলো সত্য বলে বিশ্বাস করেছিল। অতএব দেখুন, অনর্থকারীদের পরিণাম কেমন হয়েছিল? (নামলঃ ১৪)
এ সব প্রশ্নের জবাব খুঁজতে মানুষ অনর্থকই চেষ্টা করে যাচ্ছে। আধুনিক বিজ্ঞান এ সব প্রশ্নের একটিরও যথাযথ উত্তর দিতে সক্ষম হয়নি। কেননা এ সব বিষয় ধর্মের সাথে সম্পৃক্ত, এজন্যই এগুলোর ব্যাপারে অনেক কিচ্ছা কাহিনীর সৃষ্টি হয়েছে, কাল্পনিক নানা গল্প বানানো হয়েছে, যা মানুষকে আরো দিশেহারা ও হয়রান করেছে।
আল্লাহ পাক যদি কাউকে হেদায়েত না দেন ও সঠিক পথের সন্ধান না দেন তার পক্ষে এ সব প্রশ্নের যথাযথ জবাব পাওয়া সম্ভবপর নয়; যে হেদায়েত তাকে নিরাপত্তা, শান্তি, সুখ ও আনন্দ দান করবে।
এসব প্রশ্নের যথাযথ জবাব একমাত্র ধর্মই দিতে সক্ষম, কেননা এগুলো অদৃশ্যের বিষয়। একমাত্র সঠিক ধর্মই এগুলোর ব্যাপারে সত্য বলতে পারে। কেননা এগুলো আল্লাহ তায়া’লা নবী রাসুল প্রেরণ করে অহীর মাধ্যমে মানুষকে জানিয়েছেন। আল্লাহ তায়া’লা বলেনঃ বল, ‘নিশ্চয় আল্লাহর হিদায়াতই হিদায়াত’ (বাক্বারাঃ ১২০)
আল্লাহ তায়া’লা আরো বলেনঃ বলে দিন নিঃসন্দেহে হেদায়েত সেটাই, যে হেদায়েত আল্লাহ করেন। (আলে ইমরানঃ ৭৩)
এজন্যই মানুষের উচিত সঠিক ধর্ম তালাশ করা, ইহা শিক্ষা করা এবং এর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা। যাতে তার সব ধরনের অস্থিরতা দূরীভূত হয়, সব সন্দেহের অবসান ঘটে, সঠিক পথের সন্ধান পায়, এবং সুখ ও মনের শান্তি লাভ করে।
আল্লাহ তায়া’লা বলেনঃ Avi Aek¨B Avwg gvbyl‡K gvwUi wbh©vm †_‡K m„wó K‡iwQ| Zvici Avwg Zv‡K ïµiƒ‡c msiw¶Z Avav‡i ¯’vcb K‡iwQ| Zvici ﵇K Avwg ÔAvjvKvq cwiYZ Kwi| Zvici ÔAvjvKv‡K †MvkZwc‡Ê cwiYZ Kwi| Zvici †MvkZwcʇK nv‡o cwiYZ Kwi| Zvici nvo‡K †MvkZ w`‡q Ave„Z Kwi| AZtci Zv‡K Ab¨ GK m„„wóiƒ‡c M‡o Zzwj| AZGe m‡e©vËg mªóv Avjvn KZ eiKZgq! Gici Aek¨B †Zvgiv gi‡e|Zvici wKqvg‡Zi w`b Aek¨B †Zvgiv cybi“wÌZ n‡e| (মু’মিনুনঃ ১২-১৬)
অতএব, মানুষের সর্বশেষ স্থান ও প্রত্যাবর্তন হলো আল্লাহর কাছে। আল্লাহর এ সৃষ্টি অনর্থক নয় – আল্লাহ পাক কোন অনর্থক কাজ করেন না- বরং এর পিছনে রয়েছে অনেক বড় হিকমত। আল্লাহ পাক বলেনঃ Ô†Zvgiv wK g‡b K‡iwQ‡j †h, Avwg †Zvgv‡`i‡K †Kej Ab_©K m„wó K‡iwQ Ges †Zvgiv Avgvi w`‡K cÖZ¨vewZ©Z n‡e bvÕ? (মু’মিনুনঃ ১১৫)
অতএব, আল্লাহ তায়া’লা মানুষ ও জীন জাতিকে অনর্থক সৃষ্টি করেননি। বরং কোন শরীক ব্যাতিত একমাত্র তারই ইবাদত করার নিমিত্তে সৃষ্টি করেছেন।
আছে সব অর্থেই তাঁর ইবাদত করা, তাঁর ভালবাস অর্জন, তাঁর সন্তুষ্টি অর্জনে নামাজ, জিকির, জমিন আবাদ, মানুষের উপকার সাধন ইত্যাদি সব ধরনের কাজ করা। আল্লাহ তায়া’লা বলেনঃ আমার এবাদত করার জন্যই আমি মানব ও জিন জাতি সৃষ্টি করেছি। (যারিয়াতঃ ৫৬)
সব মানুষই তাঁর নিকট প্রত্যাবর্তন করবে। আল্লাহ তায়া’লা বলেনঃ এবং সবাই কে তাঁর কাছে ফিরে যেতে হবে। (আলে ইমরানঃ ২৮)
মানুষের এ বিশ্বাস জীবনের অনর্থকতাকে দূর করে জীবনের অর্থ প্রদান করে, অন্তরে শান্তি ও সুখ আনয়ন করে। আল্লাহ তায়া’লা বলেনঃ
তারা কি আপনা-আপনিই সৃজিত হয়ে গেছে, না তারা নিজেরাই স্রষ্টা? না তারা নভোমন্ডল ও ভূমন্ডল সৃষ্টি করেছে? বরং তারা বিশ্বাস করে না। (তুরঃ ৩৫-৩৬)
মানুষ যখন এ মহাবিশ্বের সৃষ্টি রহস্য জানতে অক্ষম হয়, তখন সে যদি আল্লাহর সৃষ্ট আসমান, জমিন, গ্রহরাজি, সমগ্র বিশ্বজগত, রাত দিনের পরিক্রমা, জীবন মৃত্যুর ধারাবাহিকতা এবং এ মহাবিশ্বে আল্লাহ পাক আরো যা কিছু সৃষ্টি করেছেন ....ইত্যাদির দিকে তাকায় ও চিন্তা গবেষণা করে তাহলে অবশ্যম্ভাবীভাবে তার স্বভাবজাত প্রবৃত্তিই তাকে জানিয়ে দিবে যে, এ মহাবিশ্ব সৃষ্টির পিছনে রয়েছে একজন মহাস্রষ্টা যিনি সব কিছুর চেয়ে শক্তিশালী, তাঁর সমীপে মাথানত করা, তাঁর ইবাদত করা, তাঁর কাছে প্রতিদান চাওয়া, তাঁর আযাবকে ভয় করা ইত্যাদির তিনিই একমাত্র উপযুক্ত। এমনিভাবে এসব কিছুর চিন্তাভাবনা ব্যক্তিকে সর্বশক্তিমান বিজ্ঞ, মহান স্রষ্টার স্বীকৃতি দানে পৌঁছাবে। এবং এ স্বীকৃতি প্রদানে অনুপ্রাণিত করবে যে, সব পদার্থই আল্লাহর সৃষ্টি, একসময় এগুলোর অস্তিত্ব ছিলনা,পরে তাঁর হুকুমে সৃষ্টি হয়েছে।
সর্বশক্তিমান মহাবিজ্ঞ আল্লাহ তায়া’লা বান্দাহর কাছে নিজের পরিচয় দান করেছেন। এ জন্য অনেক দলিল প্রমাণ, মূ’জেযা দান করেছেন – যদিও এগুলো দেয়া আল্লাহর জন্য জরুরী ছিলনা- তিনি নিজেকে অনেক পূর্নাঙ্গতার গুনাবলীতে গুণান্বিত করে বর্ণনা করেছেন। আসমানী শরিয়ত, বিবেকের জরুরী চেতনা, ও মানুষের স্বভাবজাত ভাবনায় তাঁর অস্তিত্ব, আধিপত্য , খোদায়ী ও একত্ববাদের উপর প্রমাণ মিলে।যুগে যুগে সব জাতিই এ ব্যাপারে একমত হয়েছে।