সৌভাগ্যের উপকরণসমূহ

সৌভাগ্যের উপকরণসমূহ

সৌভাগ্যের উপকরণসমূহ

ইসলামে পার্থিব সুখ শান্তি লাভের অনেকগুলো উৎস ও উপায় রয়েছে, সেগুলো হলোঃ

তাওহীদ ও আল্লাহর প্রতি ঈমানের মাধ্যমে সুখ

$Nazmi_Luqa.jpg*

নাজমি লুক

মিশরী দার্শনিক ও চিন্তাবিদ
সরল বিশ্বাস
“ইসলামী বিশ্বাস এমনই এক সাধারণ বিশ্বাস যা সমস্ত হয়রানী, বিভ্রান্তি ও ভয় থেকে ঈমানদারকে মুক্ত রাখে। সবার অন্তরে প্রশান্তি বয়ে যায়। এ বিশ্বাসের দরজা সকল মানুষের জন্যই উন্মুক্ত। জাতি বা বর্ণের কারণে এর থেকে কেউ বাঁধা দিতে পারেনা। এমনিভাবে মানুষ আল্লাহ প্রদত্ত এ বিশ্বাসের ছায়াতলে সমতা ও ন্যায্যতা পেয়ে থাকে, যেখানে তাকওয়া ছাড়া কোন অগ্রাধিকার ও সম্মান নেই, মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের তাকওয়া”।

তাওহীদের শান্তি ও নিশ্চিন্ততার মত আর কোন সুখ শান্তি, আরাম ও নিশ্চিন্ততা নেই। আল্লাহ তায়া’লা বলেনঃ যারা ঈমান আনে এবং স্বীয় বিশ্বাসকে শেরেকীর সাথে মিশ্রিত করে না, তাদের জন্যেই শান্তি এবং তারাই সুপথগামী। (সূরা আন’আমঃ ৮২)

এজন্যই দুনিয়া ও আখেরাতে তাওহীদের পরিপূর্ণতা মোতাবেক নিরাপত্তা, প্রশান্তি ও সুখ অর্জিত হয়। যেহেতু আল্লাহ তায়া’লা তাওহীদবাদীর বক্ষকে ইসলামের জন্যে উম্মুক্ত করে দেন এবং তাতে সুখ ও আনন্দ দিয়ে দেন। অন্যদিকে শিরক –আল্লাহ পাকের নিকট ইহা থেকে পানাহ চাচ্ছি-ব্যক্তিকে দুঃখ, দুর্দশাগ্রস্থ করে ও তার বক্ষকে সংকীর্ণ করে দেয়, যেন সে সবেগে আকাশে আরোহণ করছে। আল্লাহ তায়া’লা বলেনঃ অতঃপর আল্লাহ যাকে পথ-প্রদর্শন করতে চান, তার বক্ষকে ইসলামের জন্যে উম্মুক্ত করে দেন এবং যাকে বিপথগামী করতে চান, তার বক্ষকে সংকীর্ণ অত্যধিক সংকীর্ণ করে দেন-যেন সে সবেগে আকাশে আরোহণ করছে। এমনি ভাবে যারা বিশ্বাস স্থাপন করে না। আল্লাহ তাদের উপর আযাব বর্ষন করেন। (সূরা আন’আমঃ ১২৫)

অতএব এ দু’ধরণের লোক কখনও সমান হতে পারেনা, যাদের বক্ষকে ইসলামের জন্য উম্মুক্ত করে দিয়েছেন, যারা আল্লাহর হেদায়েতে ও আলোর দিশা পেয়েছে, আর যারা শিরকের অন্ধকারে নিমজ্জিত, আল্লাহর জিকির থেকে দূরে থাকে ও তাদের অন্তর কঠোর, তারা সুস্পষ্ঠ গোমরাহীতে রয়েছে। আল্লাহ তায়া’লা বলেনঃ আল্লাহ যার বক্ষ ইসলামের জন্যে উম্মুক্ত করে দিয়েছেন, অতঃপর সে তার পালনকর্তার পক্ষ থেকে আগত আলোর মাঝে রয়েছে। (সে কি তার সমান, যে এরূপ নয়) যাদের অন্তর আল্লাহ স্মরণের ব্যাপারে কঠোর, তাদের জন্যে দূর্ভোগ। তারা সুস্পষ্ঠ গোমরাহীতে রয়েছে। (সূরা যুমারঃ ২২)

আর যে শিরকের অন্ধকারে নিমজ্জিত ও মৃত ছিল, অতঃপর আল্লাহ তায়া’লা তাঁর করুণা ও রহমতে হিদায়েত দান করেছেন সে ব্যক্তি কখনও ঐ ব্যক্তির সমতুল্য হতে পারেনা, যে অন্ধকারে রয়েছে-সেখান থেকে বের হতে পারছে না। আল্লাহ তায়া’লা বলেনঃ আর যে মৃত ছিল অতঃপর আমি তাকে জীবিত করেছি এবং তাকে এমন একটি আলো দিয়েছি,যা নিয়ে সে মানুষের মধ্যে চলাফেরা করে। সে কি ঐ ব্যক্তির সমতুল্য হতে পারে, যে অন্ধকারে রয়েছে-সেখান থেকে বের হতে পারছে না? এমনিভাবে কাফেরদের দৃষ্টিতে তাদের কাজকর্মকে সুশোভিত করে দেয়া হয়েছে। (সূরা আন’আমঃ ১২২)

আল্লাহর জিকির, দোয়া ও তাঁর নৈকট্যলাভ

$Lauren_Booth.jpg*

লোরেন বুথ

ব্রিটিশ মানবাধিকার মহিলা কর্মী
প্রকৃত নিরাপত্তা
“মুসলমানেরা নামাজে যা অনুভব করে আমিও তা অনুভব করিঃ সুমিষ্ট ঐকতান ও আনন্দের শিহরণ। এ সব কিছুতে আমি ঈমানের অনুগ্রহ অনুভব করে থাকি। এমনিভাবে আমার সন্তানেরাও নিরাপদে আছে। সত্যিকারার্থে আমি এর চেয়ে বেশি কিছু চাইনা”।

মানুষকে যতই পার্থিব সৌন্দর্য দান করা হোক, সে যতই সৌভাগ্যের অধিকারী হোক, আল্লাহর পথ থেকে দূরে থাকলে সে কখনও সুখ শান্তি লাভ করতে পারবেনা। অতএব আল্লাহর সান্নিধ্য ও তাঁর জিকির ব্যতীত মানুষের প্রশান্তি আসতে পারেনা। আল্লাহ তায়া’লা বলেনঃ যারা বিশ্বাস স্থাপন করে এবং তাদের অন্তর আল্লাহর যিকির দ্বারা শান্তি লাভ করে; জেনে রাখ, আল্লাহর যিকির দ্বারাই অন্তর সমূহ শান্তি পায়। (সূরা রা’দঃ ২৮)

কেননা অন্তরে রয়েছে অনেক এলোমেলো ভাবনা, যা আল্লাহর সান্নিধ্য না পেলে সুসজ্জিত হয়না। এতে রয়েছে একাকীত্ব, যা নির্জনে তাঁর ঘনিষ্ঠতা ছাড়া দূরীভূত হয়না। এতে রয়েছে দুশ্চিন্তা, যা আল্লাহর সম্পর্কে জ্ঞান ও সঠিক আচরনের মাধ্যমে আনন্দ ব্যতীত দূর হয়না। এতে রয়েছে উদ্বেগ ও পেরেশানী, যা তাঁর সাথে মিলিত হওয়া ও তাঁর নিকট যাওয়া ব্যতীত প্রশান্তি পেতে পারেনা। এতে রয়েছে দুঃখ-অগ্নি, যা তাঁর আদেশ নিষেধ মান্য করা, তাঁরই ফয়সালা মেনে নেয়া ও বিপদাপদে ধৈর্য ধারণ করা ব্যতীত নিভেনা। এতে রয়েছে অনেক চাহিদা ও ইচ্ছা, যা তাঁর ভালবাসা, সান্নিধ্য, সার্বক্ষণিক জিকির ও একনিষ্ঠতা ব্যতীত থামেনা। অন্যথায় যদিও তাকে দুনিয়ার সব কিছু দান করা হয় তথাপিও তার অভাব কখনও পূরণ হবেনা [1]।

[1] মাদারিকে সালেকিন, ইবনে কাইয়ুম, পৃষ্ঠাঃ ৭৪৩।

সৎকর্ম

আল্লাহ তায়া’লা বলেছেনঃ যারা বিশ্বাস স্থাপন করে এবং সৎকর্ম সম্পাদন করে, তাদের জন্যে রয়েছে সুসংবাদ এবং মনোরম প্রত্যাবর্তণস্থল। (সূরা রা’দঃ ২৯)

অতঃএব, যারা আন্তরিকভাবে আল্লাহ তায়া’লা, তাঁর ফেরেশতা, কিতাবসমূহ, রাসুলগণ ও কিয়ামতের দিবসের উপর ঈমান এনেছে, অন্তরের সৎকাজের মাধ্যমে এ ঈমানকে সত্যে পরিণত করেছে, যেমনঃ আল্লাহর ভালবাসা, তাঁর ভয় ও আশা ইত্যাদি এবং অঙ্গ প্রত্যঙ্গের আমল যেমনঃ নামাজ ইত্যাদি সম্পাদন করেছে, তাদের রয়েছে পরিপূর্ণ আরাম ও প্রশান্তির উত্তম পরিণতি। এভাবেই তারা দুনিয়া ও আখেরাতে আল্লাহ তায়া’লার সন্তুষ্টি ও অনুগ্রহ প্রাপ্ত হবে। অতঃএব, আমাদেরকে ঈমানের সাথে সৎকাজও করতে হবে। আল্লাহ তায়া’লা বলেনঃ নিশ্চয় যারা মুসলমান, যারা ইহুদী, ছাবেয়ী বা খ্রীষ্টান, তাদের মধ্যে যারা বিশ্বাস স্থাপন করে আল্লাহর প্রতি, কিয়ামতের প্রতি এবং সৎকর্ম সম্পাদন করে, তাদের কোন ভয় নেই এবং তারা দুঃখিত হবে না। (সূরা মায়েদাঃ ৬৯)

রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাহিস সালাম নামাজ ও আল্লাহর ইবাদাতে প্রশান্তি ও মজা পেতেন। তিনি বলতেনঃ “হে বিলাল নামাজের আহবান কর, আমাদেরকে এর মাধ্যমে শান্তি দাও”। (আবু দাউদ শরীফ)।

দান খয়রাত সুখের গোপন রহস্য

%%

“বহু বৈজ্ঞানিক গবেষণায় দেখা গেছে, অন্যকে সাহায্য করা মানসিক চাপ থেকে মুক্তি দেয়। মানসিক বিজ্ঞানের বিশেষজ্ঞরা প্রমাণ করেছেন যে, অন্যকে সাহায্য করলে স্নায়ু চাপ কমে, কেননা অন্যকে সাহায্য করলে “এন্ডোফিন” নামক হরমোন নিঃসরিত হয়। এ হরমোন মানুষের আত্মিক শান্তি ও আনন্দ অনুভব করতে সাহায্য করে। আমেরিকার “হেলথ প্রমোশন” ইনস্টিটিউটের চেয়ারম্যান অ্যালেন লিক্স বলেনঃ “অপরের সাহায্য করা মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে। কেননা অন্যকে সাহায্য করলে সে ব্যক্তি দুশ্চিন্তা, দুর্ভাবনা ও ব্যক্তি সমস্যা থেকে মুক্ত হয়, ফলে সে মানসিক শান্তি অনুভব করে”।

এ ব্যাপারটা পরীক্ষিত ও দৃশ্যমান। কেননা আমরা দেখি, যারা অন্যের প্রতি দান সদকা করে, ইহসান করে তারা পৃথিবীতে সবচেয়ে সুখী ও গ্রহণযোগ্য মানুষ। আল্লাহ তায়া’লা বলেনঃ কস্মিণকালেও কল্যাণ লাভ করতে পারবে না, যদি তোমাদের প্রিয় বস্তু থেকে তোমরা ব্যয় না কর। আর তোমরা যদি কিছু ব্যয় করবে আল্লাহ তা জানেন। (সূরা আলে ইমরানঃ ৯২)

দান খয়রাতের অনেক ধরণ আছে, আল্লাহ তায়া’লা কিছু দান সদকা ইসলামের রুকন করেছেন। ধনীদের উপর যাকাত ফরজ করেছেন। তিনি হুকুম করেছেন এ দান হতে হবে সন্তুষ্ট চিত্তে ও সর্বোত্তম ইখলাসের সাথে, আবার অনুগ্রহের কথা প্রকাশ করে মানুষকে খোটা দেয়া যাবেনা। আল্লাহ তায়া’লা বলেনঃ হে ঈমানদারগণ! তোমরা অনুগ্রহের কথা প্রকাশ করে এবং কষ্ট দিয়ে নিজেদের দান খয়রাত বরবাদ করো না। (সূরা বাকারাঃ ২৬৪)

বরং এ দান সদকা শুধু মালের মধ্যে সীমিত না রেখে সব ধরণের দানকে শামিল করেছেন, তা ধন সম্পদ হোক, বা খাদ্য বা পরিশ্রম বা অন্য কোন কাজ। আল্লাহ তায়া’লা বলেনঃ তারা আল্লাহর প্রেমে অভাবগ্রস্ত, এতীম ও বন্দীকে আহার্য দান করে। তারা বলেঃ কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যে আমরা তোমাদেরকে আহার্য দান করি এবং তোমাদের কাছে কোন প্রতিদান ও কৃতজ্ঞতা কামনা করি না। (সূরা দাহারঃ ৮-৯)

এমনকি শুধু মুচকি হাসিও। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাহিস সালাম বলেছেনঃ “তোমার ভাইয়ের সম্মুখে মুচকি হাসিও তোমার জন্য সদকা”। (তিরমিজি শরীফ)। তিনি সাল্লাল্লাহু আলাহিস সালাম আরো বলেছেনঃ “যে ব্যক্তি তার কোন ভাইয়ের প্রয়োজন মিটাবে, আল্লাহ তায়া’লাও তার প্রয়োজন মিটিয়ে দিবেন, কেউ যদি কোন মুসলমানের একটি বিপদ দূর করে দেয়, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তায়া’লাও তার বিপদ দূর করে দিবেন। যে মুসলমানের দোষ-ত্রুটি গোপন রাখে, আল্লাহ তায়া’লাও কিয়ামতের দিনে তার দোষ-ত্রুটি গোপন রাখবেন”। (আবু দাউদ শরীফ)। নিঃসন্দেহে এ ধরণের দান সদকা দুনিয়াতে সুখ শান্তি অত্যাবশ্যকীয় করে দেয়। অন্যদিকে পার্থিব স্বার্থে বা খোটা ও কষ্টের দ্বারা যে দান সদকা করা হয় তাতে সুখের কিছুই অর্জিত হয়না, যদিও বাহ্যিকভাবে অন্যকিছু অর্জিত হয়।

তাওয়াক্কুল সুখের চাবিকাঠি

মানুষ অনেক সময়ই কোন ব্যাপারে অক্ষমতা ও সামর্থ্যহীনতা অনুভব করে। তখন তার চাহিদা পূরণে তার চেয়ে শক্তিশালী কারো সাহায্য কামনা করে ও তার উপর ভরসা করে। আল্লাহ তায়া’লার চেয়ে কে অধিক শক্তিশালী?! নিশ্চয়ই আসমান ও জমিনের মালিক সর্বশক্তিমান আল্লাহ তায়া’লার উপর ভরসাই সৌভাগ্যের চাবিকাঠি। যিনি যখন কোন কিছু করতে ইচ্ছা করেন,তখন তাকে কেবল বলে দেন,‘হও’ তখনই তা হয়ে যায়। আল্লাহ তায়া’লা বলেনঃ তিনি যখন কোন কিছু করতে ইচ্ছা করেন, তখন তাকে কেবল বলে দেন, ‘হও’ তখনই তা হয়ে যায়। (সূরা ইয়াসিনঃ ৮২)

এজন্যই আল্লাহ তায়া’লা একমাত্র তাঁরই উপর নির্ভর ও ভরসা করতে আদেশ দিয়েছেন। আল্লাহ তায়া’লা বলেনঃ আর আল্লাহর উপর ভরসা কর যদি তোমরা বিশ্বাসী হও। (সূরা মায়েদাঃ ২৩)

আল্লাহর ভরসা ও তাঁর যথেষ্টতার চেয়ে কি উত্তম ভরসা হতে পারে? বান্দাহর জন্য আল্লাহই হলেন যথেষ্ট ও কার্যসম্পাদনকারী। আল্লাহ তায়া’লা বলেনঃ এবং ভরসা করুন আল্লাহর উপর, আল্লাহ হলেন যথেষ্ট ও কার্যসম্পাদনকারী। (সূরা নিসাঃ ৮১)

নিঃসন্দেহে ইহা তার জন্য শান্তি, আরাম, সুখ, সৌভাগ্য ও যথেষ্টতা আনয়ন করে এবং সে যা অভিজ্ঞতা ছাড়া জানেনা তা সম্পাদন করে দেয়। আল্লাহ তায়া’লা বলেনঃ আর যে আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ তার জন্যে নিস্কৃতির পথ করে দেবেন। এবং তাকে তার ধারণাতীত জায়গা থেকে রিযিক দেবেন। যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর ভরসা করে তার জন্যে তিনিই যথেষ্ট। আল্লাহ তার কাজ পূর্ণ করবেন। আল্লাহ সবকিছুর জন্যে একটি পরিমাণ স্থির করে রেখেছেন। (সূরা তালাকঃ ২-৩)

তাছাড়া আল্লাহ তায়া’লা তাঁর উপর ভরসাকারীকে শয়তানের থেকে রক্ষা করেন। আল্লাহ তায়া’লা বলেনঃ তার আধিপত্য চলে না তাদের উপর যারা বিশ্বাস স্থাপন করে এবং আপন পালন কর্তার উপর ভরসা রাখে। (সূরা নাহলঃ ৯৯)

শত্রুর থেকেও রক্ষা করেন। আল্লাহ তায়া’লা বলেনঃ যাদেরকে লোকেরা বলেছে যে, তোমাদের সাথে মোকাবেলা করার জন্য লোকেরা সমাবেশ করেছে বহু সাজ-সরঞ্জাম; তাদের ভয় কর। তখন তাদের বিশ্বাস আরও দৃঢ়তর হয়ে যায় এবং তারা বলে, আমাদের জন্য আল্লাহই যথেষ্ট; কতই না চমৎকার কামিয়াবীদানকারী। অতঃপর ফিরে এল মুসলমানরা আল্লাহর অনুগ্রহ নিয়ে, তদের কিছুই অনিষ্ট হলো না। তারপর তারা আল্লাহর ইচ্ছার অনুগত হল। বস্তুতঃ আল্লাহর অনুগ্রহ অতি বিরাট। এরা যে রয়েছে, এরাই হলো শয়তান, এরা নিজেদের বন্ধুদের ব্যাপারে ভীতি প্রদর্শন করে। সুতরাং তোমরা তাদের ভয় করো না। আর তোমরা যদি ঈমানদার হয়ে থাক, তবে আমাকে ভয় কর। (সূরা আলে ইমরানঃ ১৭৩-১৭৫)

তাওয়াক্কুলের রহস্য ও বাস্তবতা হলো একমাত্র আল্লাহ তায়া’লার উপর আন্তরিক নির্ভরশীলতা। অন্তরে তাওয়াক্কুলের সাথে কোন কাজের উপকরণ গ্রহণ করাতে কোন ক্ষতি নেই। এমনিভাবে কারো কথা, অন্যের উপর নির্ভর করে যদি বলে, আমি আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল করেছি, তবে তা কোন কাজে আসবেনা। মুখের তাওয়াক্কুল এক জিনিস আর অন্তরের তাওয়াক্কুল অন্য জিনিস।

আল্লাহর প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস ও ভরসায় সুখ

$Ernest_Renan.jpg*

আর্নেস্ট রিনান

ফরাসি ইতিহাসবিদ
ঈমান...... ও জীবন
“আল্লাহর প্রতি ঈমান এমন এক শক্তি যা ব্যক্তির জীবন যাপনের সহযোগীতায় অত্যাবশ্যক। , আর ঈমান ছাড়া সে জীবনে দুঃখ দুর্দশা লাঘবে অক্ষম হয়ে পড়বে।

আল্লাহর উপর ঈমান মু’মিনকে তাঁর উপর দৃঢ় বিশ্বাস ও পূর্ণ আস্থা এনে দেয়। যা তাকে আত্মবিশ্বাস ও আস্থা জোগায়। ফলে এ দুনিয়াতে সে কিছুই ভয় পায়না। সে জানে যে, সব কিছুই মহান আল্লাহ তায়া’লার পক্ষ থেকে হয়ে থাকে। আল্লাহ তায়া’লা বলেনঃ আর যদি আল্লাহ তোমাকে কোন কষ্ট দেন, তবে তিনি ব্যতীত তা অপসারণকারী কেউ নেই। পক্ষান্তরে যদি তোমার মঙ্গল করেন, তবে তিনি সবকিছুর উপর ক্ষমতাবান। (সূরা আন’আমঃ ১৭)

সে আরো বিশ্বাস করে, তার রিজিক আল্লাহ তায়া’লার হাতে। আল্লাহ তায়া’লা বলেনঃ তোমরা তো আল্লাহর পরিবর্তে কেবল প্রতিমারই পূজা করছ এবং মিথ্যা উদ্ভাবন করছ। তোমরা আল্লাহর পরিবর্তে যাদের এবাদত করছ, তারা তোমাদের রিযিকের মালিক নয়। কাজেই আল্লাহর কাছে রিযিক তালাশ কর, তাঁর এবাদত কর এবং তাঁর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর। তাঁরই কাছে তোমরা প্রত্যাবর্তিত হবে। (সূরা আনকাবুতঃ ১৭)

তিনি জমিনে সমস্ত বিচরণশীল জীবজন্তুর রিজিকের দায়িত্ব নিয়েছেন। আল্লাহ তায়া’লা বলেনঃ আর পৃথিবীতে কোন বিচরণশীল নেই, তবে সবার জীবিকার দায়িত্ব আল্লাহ নিয়েছেন তিনি জানেন তারা কোথায় থাকে এবং কোথায় সমাপিত হয়। সবকিছুই এক সুবিন্যস্ত কিতাবে রয়েছে। (সূরা হুদঃ ৬)

এমনকি সে যদি রিজিকের কাছে নাও যেতে পারে। আল্লাহ তায়া’লা বলেনঃ এমন অনেক জন্তু আছে,যারা তাদের খাদ্য সঞ্চিত রাখে না। আল্লাহই রিযিক দেন তাদেরকে এবং তোমাদেরকেও। তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ। (সূরা আনকাবুতঃ ৬০)

সে বিশ্বাস করে, তার রিজিক অবশ্যই আসবে, ইহা তার অধিকার, এতে কোন সন্দেহ নেই। আল্লাহ তায়া’লা বলেনঃ

আল্লাহ তায়া’লা রিজিকসমূহকে মানুষের মাঝে বণ্টণ ও পরিমাপ করে দিয়েছেন। আল্লাহ তায়া’লা বলেনঃ বলুন, আমার পালনকর্তা যাকে ইচ্ছা রিযিক বাড়িয়ে দেন এবং পরিমিত দেন। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ তা বোঝে না। (সূরা নিসাঃ ৩৬)

সে আরো দৃঢ় বিশ্বাস করে যে, আল্লাহ তায়া’লা তাকে ভাল-মন্দের ব্যাপারে সর্বদা পরীক্ষা করবেন। আল্লাহ তায়া’লা বলেনঃ প্রত্যেককে মৃত্যুর স্বাদ আস্বাদন করতে হবে। আমি তোমাদেরকে মন্দ ও ভাল দ্বারা পরীক্ষা করে থাকি এবং আমারই কাছে তোমরা প্রত্যাবর্তিত হবে। (সূরা আম্বিয়াঃ ৩৫)

মানুষের উপর যদি আল্লাহর দয়া ও অনুগ্রহ না থাকত, তবে তারা ধ্বংস হয়ে যেত। সে আরো জানে যে, এ দুনিয়াতে সে ক্ষণিকের মেহমান, যতই কম বা বেশি বয়স লাভ করুক না কেন। নিঃসন্দেহে সে অন্য জগতে পাড়ি দিবে। এজন্যই সে এ পৃথিবীতে একটা মূলভিত্তির উপর চলছে, যুগের কোন বিপদাপদে সে ভীত হয়না, আল্লাহ ব্যতীত কাউকে ভয় পায়না। যদিও তার শত্রু তীরের ধনুকের মত বা তার চেয়েও নিকটবর্তী থাকে। যখন ফেরাউন ও তার সৈন্যবাহিনী মূসা (আঃ) কে নাগালে পেয়ে গেল, আল্লাহ তায়া’লা সে সম্পর্কে বলেনঃ যখন উভয় দল পরস্পরকে দেখল, তখন মূসার সঙ্গীরা বলল, আমরা যে ধরা পড়ে গেলাম। মূসা বলল, কখনই নয়, আমার সাথে আছেন আমার পালনকর্তা। তিনি আমাকে পথ বলে দেবেন। অতঃপর আমি মূসাকে আদেশ করলাম, তোমার লাঠি দ্বারা সমূদ্রকে আঘাত কর। ফলে, তা বিদীর্ণ হয়ে গেল এবং প্রত্যেক ভাগ বিশাল পর্বতসদৃশ হয়ে গেল। আমি সেথায় অপর দলকে পৌঁছিয়ে দিলাম। এবং মূসা ও তাঁর সংগীদের সবাইকে বাঁচিয়ে দিলাম। অতঃপর অপর দলটিকে নিমজ্জত কললাম। নিশ্চয় এতে একটি নিদর্শন আছে এবং তাদের অধিকাংশই বিশ্বাসী ছিল না। (সূরা শুয়া’রাঃ ৬১-৬২)

বিশ্বাসীদের মহান নেতা মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম, শত্রু পায়ের নিচে তাকালে তাঁকে দেখতে পেতো-যখন মুশরিকরা তাঁকে হত্যা করার জন্য খুজছিল-এমন অবস্থায় তিনি -আল্লাহ তায়া’লার উপর দৃঢ় বিশ্বাস ও আস্থা রেখে তাঁর সঙ্গী আবু বকর (রাঃ) কে পর্বতের গুহায় বললেনঃ “তখন তিনি আপন সঙ্গীকে বললেন বিষন্ন হয়ো না, আল্লাহ আমাদের সাথে আছেন। অতঃপর আল্লাহ তার প্রতি স্বীয় সান্তনা নাযিল করলেন এবং তাঁর সাহায্যে এমন বাহিনী পাঠালেন, যা তোমরা দেখনি। বস্তুতঃ আল্লাহ কাফেরদের মাথা নীচু করে দিলেন আর আল্লাহর কথাই সদা সমুন্নত এবং আল্লাহ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়”। (সূরা তাওবাঃ ৪০)

এমনিভাবে মু’মিন বিশ্বাস করে যে, আল্লাহ তায়া’লাই মৃত্যু দান করেন, সুতরাং সে মৃত্যুকে ভয় পায়না। আল্লাহ তায়া’লা বলেনঃ আল্লাহ মানুষের প্রাণ হরণ করেন তার মৃত্যুর সময়, আর যে মরে না, তার নিদ্রাকালে। অতঃপর যার মৃত্যু অবধারিত করেন, তার প্রাণ ছাড়েন না এবং অন্যান্যদের ছেড়ে দেন এক নির্দিষ্ট সময়ের জন্যে। নিশ্চয় এতে চিন্তাশীল লোকদের জন্যে নিদর্শনাবলী রয়েছে। (সূরা যুমারঃ ৪২)

বরং সে আরো বিশ্বাস করে যে, ইহা চিরন্তন সত্য ও অবশ্যই আসবে, ইহা থেকে কেউ পলায়ন করতে পারবেনা। আল্লাহ তায়া’লা বলেনঃ বলুন, তোমরা যে মৃত্যু থেকে পলায়নপর, সেই মৃত্যু অবশ্যই তোমাদের মুখামুখি হবে, অতঃপর তোমরা অদৃশ্য, দৃশ্যের জ্ঞানী আল্লাহর কাছে উপস্থিত হবে। তিনি তোমাদেরকে জানিয়ে দিবেন সেসব কর্ম, যা তোমরা করতে। (সূরা জুম’আঃ ৮)

আর মৃত্যু নির্ধারিত সময় ব্যতীত আসবেনা। আল্লাহ তায়া’লা বলেনঃ যদি আল্লাহ লোকদেরকে তাদের অন্যায় কাজের কারণে পাকড়াও করতেন, তবে ভুপৃষ্ঠে চলমান কোন কিছুকেই ছাড়তেন না। কিন্তু তিনি প্রতিশ্রুতি সময় পর্যন্ত তাদেরকে অবকাশ দেন। অতঃপর নির্ধারিত সময়ে যখন তাদের মৃত্যু এসে যাবে, তখন এক মুহুর্তও বিলম্বিত কিংবা তরাম্বিত করতে পারবে না। (সূরা নাহলঃ ৬১)

আত্মতৃপ্তি সৌভাগ্যের সোপান

$Roger_Du_Pasquier.jpg*

রোজীহ ডুবাকীহ

সুইস চিন্তাবিদ ও সাংবাদিক
বস্তুগত সভ্যতাসমূহ যেন বিলীন হয়ে যায়
একথা সর্বজন স্বীকৃত যে, ইসলাম মৌলিকভাবেই মানুষের অন্তরে শান্তি ছড়িয়ে দেয়। অন্যদিকে পার্থিব সভ্যতা ইহার বাহককে হতাশায় নিমজ্জিত করে। কেননা তারা কোন কিছুতেই বিশ্বাস করেনা। আরো একটি বিষয় সনাক্ত করা গেছে যে, ইউরোপীয়ানরা ইসলামের প্রকৃত স্বরূপ জানেনি, কেননা তারা ইসলামকে বস্তুগত মাপকাঠিতে বিচার করে থাকে।

সুখ-সৌভাগ্য হলো ব্যক্তি আত্মসন্তুষ্টিতে জীবন যাপন করা। অসন্তুষ্টি ও বিরক্তি মানুষের জীবন, আত্মা ও অনুভুতিকে বিঘ্নিত করে। সন্তুষ্টি ও পরিতুষ্টি হলো সুখ-শান্তি, নিশ্চিন্ততা, ঈর্ষা, আনন্দ ও বিনোদনের সিঁড়ি। সন্তুষ্টি হলো মানুষের প্রতি আল্লাহর ইচ্ছার সামনে তার অন্তরের স্থিরতা ও প্রশান্তি। এ স্থিরতা ও প্রশান্তি মানব জীবনে যা কিছু ঘটে তাকে কল্যাণকর, সুখী ও স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে তোলে। তাই সে আল্লাহ ছাড়া কারো নিকট কিছু প্রার্থনা করেনা। দুনিয়ার কিছু না পেলে অফসোস করেনা। এটি বান্দাহকে কর্মঠ ও পরিশ্রমী করে, সে তার প্রতিপালককে সর্বদা ডাকে, অতঃপর আল্লাহ তায়া’লা তার ভাগ্যে যা লিখেছেন তাতে সন্তুষ্ট থাকে। এতে করে সে সন্তোষজনক ও সুখী জীবন যাপন করে।

সন্তুষ্টির অনেক ধরণ আছে, যেমনঃ

ক- আল্লাহকে প্রতিপালক হিসেবে, ইসলামকে দ্বীন হিসেবে ও মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাহিস সালামকে নবী হিসেবে পেয়ে সন্তুষ্টি হওয়া। আর যে ব্যক্তি এতে সন্তুষ্টি হয়না, সে সর্বদা দিশেহারা, হয়রান ও উদ্বিগ্ন জীবন যাপন করবে। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাহিস সালাম বলেছেনঃ “যে ব্যক্তি আল্লাহকে প্রতিপালক হিসেবে, ইসলামকে দ্বীন হিসেবে ও মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাহিস সালামকে নবী হিসেবে পেয়ে সন্তুষ্টি হলো সেই ঈমানের স্বাদ পেল”। (বুখারী শরীফ)। অন্যদিকে যে ঈমানের স্বাদ পেলনা, সে সুখ শান্তির স্বাদও পেলনা। বরং সে সর্বদা উদ্বেগ, বিরক্তির জীবন যাপন করবে। আল্লাহর উপর সন্তুষ্ট থাকার অর্থ হলো, আল্লাহর অস্তিত্বে ঈমান আনা, তাঁর মহানত্ব ও বড়ত্বের অনুভুতি থাকা, তাঁর হিকমত, কুদরত, ইলম ও নামসমূহ জানা, তাঁর প্রতি ঈমান আনা, তাঁর উপর ও তাঁর ইবাদতে সন্তুষ্ট থাকা। তা না হলে সন্দেহ, হয়রানী, অসুস্থতা ও বিষণ্ণতায় ভুগতে হবে। -আল্লাহ তায়া’লা আমাদেরকে এ সব থেকে মুক্ত রাখুন-

খ- আল্লাহর বিধান ও তাঁর শরিয়তের উপর সন্তুষ্ট থাকা। আল্লাহ তায়া’লা বলেনঃ অতএব, তোমার পালনকর্তার কসম, সে লোক ঈমানদার হবে না, যতক্ষণ না তাদের মধ্যে সৃষ্ট বিবাদের ব্যাপারে তোমাকে ন্যায়বিচারক বলে মনে না করে। অতঃপর তোমার মীমাংসার ব্যাপারে নিজের মনে কোন রকম সংকীর্ণতা পাবে না এবং তা হৃষ্টচিত্তে কবুল করে নেবে। (সূরা নিসাঃ ৬৫)

মানব রচিত বিভিন্ন জুলুমপূর্ন ও অসম্পূর্ন বিধিবিধান, শরিয়ত ও আইনকানুনে চলার কারণে তারা অনেক দুর্ভাগ্য, কষ্ট, দুনিয়ার নানা বিষণ্ণতা ও বিরক্ততায় ভুগতে থাকে। কেননা ইহা ছিল মানব রচিত বিধান, মানুষের স্রষ্টা যিনি তাদের ভাল মন্দ সম্পর্কে অধিক জ্ঞাত তাঁর শরিয়ত ছিলনা। আল্লাহ তায়া’লা আল্লাহ তায়া’লা বলেনঃ যিনি সৃষ্টি করেছেন, তিনি কি করে জানবেন না? তিনি সূক্ষ্নজ্ঞানী, সম্যক জ্ঞাত। (সূরা মুলকঃ ১৪)

$Rex_Ingram.jpg*

রেক্স ইংগ্রাম

আন্তর্জাতিক চলচিত্র নির্মাতা
ইসলামের আত্মা
“আমি বিশ্বাস করি যে, ইসলাম এমনই এক ধর্ম যা ইহার অনুসারীদের অন্তরে সুখ-শান্তির অনুপ্রবেশ ঘটায়। ইহা মানুষের অন্তরে শান্তনার বাণী ঢেলে দেয়।আমি ইসলামের আধ্যাত্মিক সুধা আমার অন্তরে পৌঁছেছে, ফলে আমি আল্লাহর ফয়সালার প্রতি বিশ্বাস এবং পার্থিব মজা বা ব্যাথাকে গুরুত্ব না দেয়ার নিয়ামত অনুভব করেছি”।

গ- আল্লাহর ফয়সালা ও বণ্টনে সন্তুষ্ট থাকা। মু’মিন আল্লাহর ফয়সালা ও বণ্টনে সন্তুষ্ট থাকে, কেননা সে বিশ্বাস করে যে, আল্লাহর নির্দেশ ব্যতীত তাঁকে কোন বালা মসিবত স্পর্শ করতে পারবেনা। তিনি তার অন্তরকে সৎপথ প্রদর্শন করবেন। আল্লাহ তায়া’লা বলেনঃ আল্লাহর নির্দেশ ব্যতিরেকে কোন বিপদ আসে না এবং যে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস করে, তিনি তার অন্তরকে সৎপথ প্রদর্শন করেন। আল্লাহ সর্ববিষয়ে সম্যক পরিজ্ঞাত। (সূরা তাগাবুনঃ ১১)

সে আল্লাহর বিচার ও বণ্টনে সন্তুষ্ট থাকে, কেননা সে নিশ্চিতভাবে জানে যে, আল্লাহ ব্যতীত কেউ কোন কষ্ট দূর করতে পারেনা। আল্লাহ তায়া’লা বলেনঃ আর আল্লাহ যদি তোমার উপর কোন কষ্ট আরোপ করেন তাহলে কেউ নেই তা খন্ডাবার মত তাঁকে ছাড়া। পক্ষান্তরে যদি তিনি কিছু কল্যাণ দান করেন, তবে তার মেহেরবানীকে রহিত করার মতও কেউ নেই। তিনি যার প্রতি অনুগ্রহ দান করতে চান স্বীয় বান্দাদের মধ্যে তাকেই দান করেন; বস্তুত; তিনিই ক্ষমাশীল দয়ালু। (সূরা ইউনুসঃ ১০৭)

ঈমানের আশ্চর্যজনক ব্যাপার হলো, মু’মিন আল্লাহর নির্ধারিত বণ্টনে সন্তুষ্ট থেকে, আবার বিপদআপদ ও কষ্টে ধৈর্য ধারণ করে, নিয়ামত ও অনুগ্রহ পেলে শুকর করে লাভ অর্জন করে। এভাবে তার অভ্যন্তরে সন্তুষ্ট ও পরিপৃপ্তি অর্জিত হয়, যা মু’মিন ব্যতীত কারো হয়না। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাহিস সালাম বলেছেনঃ “মু’মিনের ব্যাপার খুবই আশ্চর্যজনক। তার সব কিছুতেই কল্যাণ রয়েছে, ইহা মু’মিন ব্যতীত অন্য কারো হয়না। যখন সুখের কিছু লাভ করে তখন সে আল্লাহর শুকরিয়া জ্ঞাপন করে, ইহা তার জন্য কল্যাণকর। আবার যখন বিপদআপদ আসে তাতে সে ধৈর্য ধারণ করে, এতেও রয়েছে তার কল্যাণ”। (মুসলিম শরীফ)। বরং রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাহিস সালাম আমাদেরকে শিক্ষা দিয়েছেন অন্য কেউ দুনিয়ার ভোগ বিলাস অধিক পেলে সে অবস্থায় কিভাবে সন্তুষ্ট হতে হবে। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাহিস সালাম বলেছেনঃ “যারা তোমাদের চেয়ে নিচুঁ (কম সম্পদের অধিকারী) তাদের দিকে তাকাবে, আর যারা তোমাদের চেয়ে উঁচু (বেশি সম্পদের অধিকারী) তাদের দিকে তাকাবেনা। কেননা ইহা তোমাদের উপরে আল্লাহর নিয়ামতকে ছোট না করার উত্তম পন্থা”। (বুখারী ও মুসলিম)।




Tags: