সুখ-শান্তির পথ থেকে দূরে থাকা দুর্ভাগ্য

সুখ-শান্তির পথ থেকে দূরে থাকা দুর্ভাগ্য

সুখ-শান্তির পথ থেকে দূরে থাকা দুর্ভাগ্য

দুনিয়া ও আখেরাতের সুখ শান্তির পথ

$H._G._Wells.jpg*

হার্বার্ট জর্জ ওয়েলস

ব্রিটিশ লেখক ও সাহিত্যিক
ইসলামের সকাল
“ইসলামের নতুন সুর্য পুনরায় উদিত হওয়া পর্যন্ত কত জাতিরাই ভয়ভীতি ও দুঃখ দুর্দশার বিরুদ্ধে লড়াই করবে।এখন মনে হচ্ছে গোটা ইতিহাস সেদিকে ধাবিত হতে যাচ্ছে। সেদিন পুরা দুনিয়াতে শান্তি ছড়িয়ে পড়বে, সেদিন মানুষের হৃদয় শান্তিতে ভরে যাবে”।

ইসলাম সর্বকালের ও স্থানের উপযোগী হিসেবে এসেছে। মানুষের স্বভাব-প্রকৃতির সাথে মিলে চলে, জীবনের নানা পরিবর্তনের দিকে খেয়াল রেখে, উন্নতি ও সভ্যতার দিকে অগ্রসারিত, বিভিন্ন জাতির অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক, সামরিক ও অন্যান্য সমস্যার সমাধানকারী। কিন্তু অনেক মানুষই এ আলোকিত পথ থেকে ভ্রষ্ট হয়েছে, আবার অনেকে ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে, মানুষকে ইহা থেকে দূরে রাখতে একে কলুষিত করতে নানা প্রচেষ্টা করছে। এ কারণে ব্যক্তি ও সমাজে নানা দুঃখ-দুর্দশা। যে ইসলামের নির্দেশিত পথের অনুসরণ করবে, ইহার শরিয়তের পাবন্দী করবে, দুনিয়া ও আখেরাতে আল্লাহ তায়া’লা তার সুখ-শান্তির নিশ্চয়তা ও গ্যারাণ্টি দিয়েছেন। আর যে ব্যক্তি ইহা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিবে, ও অহংকার করবে আল্লাহ তায়া’লা তার জন্য দুঃখ-দুর্দশা, লাঞ্ছনা, ও অপমান লিখে রেখেছেন।

একমাত্র ইসলামই আল্লাহ তায়া’লা মানব জাতির জন্য মনোনীত করেছেন, যাতে তাদের কাজ কর্ম সঠিকভাবে পরিচালিত হয়, দুনিয়া ও আখেরাতে সুখী ও সৌভাগ্যশীল হয়, উভয়জগতে সে হতভাগা হবেনা। কিন্তু মানব জাতি –স্বভাবগতভাবেই- তার প্রবৃত্তি ও লালসা বিরোধী নির্দেশ, শর্তাবলীর প্রতি আগ্রহী হয়না, যদিও ইহা তাদের কল্যাণেই আদেশ করা হয়ে থাকে। এজন্যই আল্লাহ তায়া’লা সত্য পথের পথিকদেরকে কল্যাণ ও হেদায়েতের দিকে দাওয়াত দেয়া ফরজ করে দিয়েছেন। এ হিদায়েতকে সমস্ত বিশ্ববাসীর কাছে পৌঁছে দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।

রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাহিস সালাম নিজে সুখী ও সৌভাগ্যবান হতে এবং সাথে তাঁর জাতি ও দুনিয়ার সমস্ত মানুষকে সুখী ও সৌভাগ্যবান করতে প্রেরিত হয়েছেন। আল্লাহ তায়া’লা বলেনঃ আপনাকে ক্লেশ দেবার জন্য আমি আপনার প্রতি কোরআন অবতীর্ণ করিনি। (সূরা তোয়াহাঃ ২)

আল্লাহ তায়া’লা আরো বলেনঃ আমি আপনাকে বিশ্ববাসীর জন্যে রহমত স্বরূপই প্রেরণ করেছি। (সূরা আম্বিয়াঃ ১০৭)

অতএব রাসুলের অনুসরণ, তাঁর পথে চলা, ও তাঁর পদাঙ্ক অনুসরণ করাই সুখের মূল ও পরিত্রানের পথ। ইহাই আল্লাহ তায়া’লার নির্দেশিত পথ, যে পথে তাঁর আদেশ নিষেধ মান্য করে জীবন যাপন করতে তিনি নির্দেশ দিয়েছেন; দুনিয়া ও আখেরাতের সুখ-সৌভাগ্য-ই যার ফল। এ সীমারেখা থেকে যারাই বেরিয়ে আসবে তাদের দুজাহানেই দুর্ভাগ্য। আল্লাহ তায়া’লা যথার্থই বলেছেনঃ এবং যে আমার স্মরণ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে, তার জীবিকা সংকীর্ণ হবে এবং আমি তাকে কেয়ামতের দিন অন্ধ অবস্থায় উত্থিত করব। সে বলবেঃ হে আমার পালনকর্তা আমাকে কেন অন্ধ অবস্থায় উত্থিত করলেন? আমি তো চক্ষুমান ছিলাম। আল্লাহ বলবেনঃ এমনিভাবে তোমার কাছে আমার আয়াতসমূহ এসেছিল, অতঃপর তুমি সেগুলো ভুলে গিয়েছিলে। তেমনিভাবে আজ তোমাকে ভুলে যাব। (সূরা তোয়াহাঃ ১২৬)

তুমি কিভাবে পবিত্র ও শান্তিময় জীবন যাপন করবে?

$Bernard_Shaw.jpg*

বার্নার্ড শ

ইংরেজি লেখক
মানবতার ত্রাণকর্তা
“মুহাম্মদকে মানব জাতির ত্রাণকর্তা ডাকাই হলো সুবিচার ও নিরপেক্ষতা। আমি মনে করি, তাঁর মত একজন মহামানব আধুনিক বিশ্বের নেতৃত্ব গ্রহণ করলে, সব সমস্যার সফল সমাধান হবে, বিশ্ব সুখ শান্তিতে ভরে যাবে”।

মু’মিনের ক্ষেত্রে এর বিশাল পার্থক্য, তাদের সম্পর্কে আল্লাহ তায়া’লা বলেনঃ আমি তাকে পবিত্র জীবন দান করব। (সূরা নাহলঃ ৯৭)

আর আল্লাহর জিকির থেকে বিমুখীদের ব্যাপারে আল্লাহ তায়া’লা বলেনঃ তার জীবিকা সংকীর্ণ হবে। (সূরা তোয়াহাঃ ১২৪)

অতএব, প্রকাশ্য ও গোপনে আল্লাহর আদেশ মানা ও নিষেধ থেকে বিরত থাকা এবং প্রশান্ত চিত্তে তাঁর ফয়সালা মেনে নেয়ার মধ্যেই উত্তম ও পবিত্র জীবন রয়েছে। কেননা সে আল্লাহর তত্ত্বাবধানে ও হেফাযতে জীবন যাপন করে। আল্লাহ তায়া’লা বলেনঃ যারা বিশ্বাস স্থাপন করে এবং তাদের অন্তর আল্লাহর যিকির দ্বারা শান্তি লাভ করে; জেনে রাখ, আল্লাহর যিকির দ্বারাই অন্তর সমূহ শান্তি পায়। (সূরা রা’দঃ ২৮)

অতএব অন্তরের প্রশান্তির প্রতিফলন মানুষের প্রত্যেকটি কাজেই প্রতিফলিত হয়, আর এর পুরো ব্যাতিক্রম তারা, যারা আল্লাহর বিধানের বিরুদ্ধাচরণ করে জীবিকা সংকীর্ণতায় বসবাস করে। আল্লাহ তায়া’লা বলেনঃ অতঃপর আল্লাহ যাকে পথ-প্রদর্শন করতে চান, তার বক্ষকে ইসলামের জন্যে উম্মুক্ত করে দেন এবং যাকে বিপথগামী করতে চান, তার বক্ষকে সংকীর্ণ অত্যধিক সংকীর্ণ করে দেন-যেন সে সবেগে আকাশে আরোহণ করছে। এমনি ভাবে যারা বিশ্বাস স্থাপন করে না। আল্লাহ তাদের উপর আযাব বর্ষন করেন। (সূরা আন’আমঃ ১২৫)

সুতরাং তার সংকীর্ণতা, দুর্দশা ও কষ্ট দরিদ্রতা ও অসুস্থতার কারণে নয়, বরং ইহা হলো সমস্ত কাজে তার অস্থিরতা। দুর্ভাগাদের দুনিয়া প্রাপ্তি বা দুনিয়া হারানো তাদেরকে দুর্ভাগ্য থেকে মুক্তি দিবেনা। দুনিয়ায় কিছু অপ্রাপ্তি দুঃখ দুর্দশার কারণ নয়, বরং দুঃখের কারণ হচ্ছে ভাবনা চিন্তার পদ্ধতির মধ্যে, তাই অতিরিক্ত সম্পদ বা সামান্য সম্পদ বা সুস্বাস্থ্য বা রোগব্যাধি অধিক দুঃখ-দুর্দশার কারণ হতে পারে। আল্লাহ তায়া’লা বলেনঃ সুতরাং তাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি যেন আপনাকে বিস্মিত না করে। আল্লাহর ইচ্ছা হল এগুলো দ্বারা দুনিয়ার জীবনে তাদের আযাবে নিপতিত রাখা এবং প্রাণবিয়োগ হওয়া কুফরী অবস্থায়। (সূরা তাওবাঃ ৫৫)

আল্লাহ তায়া’লা আরো বলেনঃ আর বিস্মিত হয়ো না তাদের ধন সম্পদ ও সন্তান-সন্তুতির দরুন। আল্লাহ তো এই চান যে, এ সবের কারণে তাদেরকে আযাবের ভেতরে রাখবেন দুনিয়ায় এবং তাদের প্রাণ নির্গত হওয়া পর্যন্ত যেন তারা কাফেরই থাকে। (সূরা তাওবাঃ ৮৫)

ধন-সম্পদ, দরিদ্রতা, রোগ-ব্যাধি ও কোন মসবতে পতিত হওয়া মানব জাতির দুঃখ-দুর্দশার কারণ নয়, বরং আল্লাহ তায়া’লা ও তাঁর পথ থেকে দূরে চলে যাওয়া এবং বান্দা ও আল্লাহর মাঝে সম্পর্ক ছিন্ন করা হলো দুঃখ-অশান্তির কারণ। কেননা হযরত জাকারিয়া (আঃ) যখন তার প্রভুকে দোয়ায় অসিলা করে বলেছেনঃ হে আমার পালনকর্তা! আপনাকে ডেকে আমি কখনও বিফলমনোরথ হইনি। (সূরা মারইয়ামঃ ৪)

আপনি অতীতে আমার ডাকে সাড়া দিয়ে আমাকে সম্মানিত করেছেন, অতএব আমার দোয়া কবুল করে আমাকে সুখী-সৌভাগ্যবান করুন। এটা শুধু যাকারিয়া (আঃ) এর ব্যাপারেই নির্দ্দিষ্ট নয়, বরং আল্লাহ তায়া’লা আমাদেরকে এভাবে জানিয়ে দিচ্ছেন যেঃ আর আমার বান্দারা যখন তোমার কাছে জিজ্ঞেস করে আমার ব্যাপারে বস্তুতঃ আমি রয়েছি সন্নিকটে। যারা প্রার্থনা করে, তাদের প্রার্থনা কবুল করে নেই, যখন আমার কাছে প্রার্থনা করে। কাজেই আমার হুকুম মান্য করা এবং আমার প্রতি নিঃসংশয়ে বিশ্বাস করা তাদের একান্ত কর্তব্য। যাতে তারা সৎপথে আসতে পারে। (সূরা বাকারাঃ ১৮৬)

যখন বান্দা ও আল্লাহর মাঝে সরাসরি সম্পর্ক হয়ে যায়, তখন তার সুখ-শান্তি অবশ্যই অর্জিত হয়, আর দুর্ভাগ্য ও দুঃখ তখনই হয় যখন এ সম্পর্কের রশি ছিন্ন হয়ে যায়। এ দ্বীনের ব্যাপারে মানুষের ভুল-ত্রুটি ও অসম্পূর্ণতার পরিমাণে সে নিজের ও জীবনের মাঝে অস্থিরতা ও অশান্তি ভোগ করে।

এজন্যই আল্লাহ তায়া’লা হিদায়েত ও রহমতকে একসাথে উল্লেখ করেছেন, আবার ভ্রষ্টতা ও দুঃখ-দুর্দশাকেও একত্রে উল্লেখ করেছেন। প্রথমটি সম্পর্কে আল্লাহ তায়া’লা বলেনঃ তারাই নিজেদের পালনকর্তার পক্ষ থেকে সুপথ প্রাপ্ত, আর তারাই যথার্থ সফলকাম। (সূরা বাকারাঃ ৫)

তিনি আরো বলেনঃ তারা সে সমস্ত লোক, যাদের প্রতি আল্লাহর অফুরন্ত অনুগ্রহ ও রহমত রয়েছে এবং এসব লোকই হেদায়েত প্রাপ্ত। (সূরা আল বাকারাঃ ১৫৭)

আল্লাহ তায়া’লা আরো বলেনঃ এরপর যদি আমার পক্ষ থেকে তোমাদের কাছে হেদায়েত আসে, তখন যে আমার বর্ণিত পথ অনুসরণ করবে, সে পথভ্রষ্ঠ হবে না এবং কষ্টে পতিত হবে না। (সূরা তোয়াহাঃ ১২৩)

হেদায়েত হলোঃ ভ্রষ্টতা থেকে বিরত থাকা, রহমত হলোঃ দুঃখ কষ্ট থেকে মুক্তি লাভ। ইহাই আল্লাহ তায়া’লা সূরায়ে তোয়াহার শুরুতে বলেছেনঃ তোয়া-হা, আপনাকে ক্লেশ দেবার জন্য আমি আপনার প্রতি কোরআন অবতীর্ণ করিনি। (সূরা তোয়াহাঃ ১-২)

কোরআন নাযিল ও দুঃখ ক্লেশ দূরকে একত্রিত করা হয়েছে। যেমন অন্য সূরায় হেদায়েতের অনুসারীদেরকে বলা হয়েছেঃ সে পথভ্রষ্ঠ হবে না এবং কষ্টে পতিত হবে না। (সূরা তোয়াহাঃ ১২৩)

হেদায়েত, কল্যাণ, নিয়ামত, রহমত সবকিছুই একসঙ্গে গাঁথা, একটি অন্যটির থেকে আলাদা হয়না। এমনিভাবে, ভ্রষ্টতা, দুঃখ, দুর্দশা ও পরস্পর একই সঙ্গে গাঁথা, একটি অন্যটির থেকে ভিন্ন হয়না। আল্লাহ তায়া’লা বলেনঃ নিশ্চয় অপরাধীরা পথভ্রষ্ট ও বিকারগ্রস্ত। (সূরা আল ক্বামারঃ ৪৭)

আয়াতে “সুউর” শব্দটি “সাঈর” এর বহুবচন। অর্থঃ সীমাহীন আযাব। অপরাধী ও পথভ্রষ্টদের আবাসের বিপরীতে আল্লাহ তায়া’লা একই সূরায় বিশ্বাসীদের আবাসের কথা উল্লেখ করে বলেনঃ খোদাভীরুরা থাকবে জান্নাতে ও নির্ঝরিণীতে। যোগ্য আসনে, সর্বাধিপতি সম্রাটের সান্নিধ্যে। (সূরা আল ক্বামারঃ ৫৪-৫৫)

সুতরাং আসো, ইহাই সৌভাগ্যের পথ, যদি তুমি এ পথে চলতে চাও, যদি এ পথের অনুসরণ করতে চাও। ইহা এমন রাস্তা যা কল্প কাহিনী বা নিছক আত্মিক ও ভাবনাগত বিষয়ের উপর প্রতিষ্ঠিত নয়। ইহা সৌভাগ্যের পথ এবং সাথে সাথে জ্ঞান-বিজ্ঞান ও সভ্যতারওপথ।




Tags: