তিনি এক আল্লাহর ইবাদতের দিকে ডেকেছেন, তিনি ছাড়া অন্যান্যদের ইবাদত করা থেকে বিরত থেকেছেন, যেমনটি অন্যান্য নবী রাসুলগণ করেছেন। যে ব্যক্তি হযরত মূছা, ঈসা (আঃ) ও মুহাম্মদ (সাঃ) এর আনিত সব সঠিক আক্বিদা, সুদৃঢ় শরিয়ত ও হিতকর ইলম নিয়ে তুলনা করে দেখবে সে জানতে পারবে যে, এ সব কিছু একই প্রদীপ থেকে উৎসারিত, ইহা নবুয়াতের আলোকবর্তীকা।
তাঁর দ্বারা অনেক মুজিযা ও নিদর্শন সংঘটিত হয়েছে, যা কোন নবী ছাড়া অন্য কারো থেকে প্রকাশ পায়না। কেননা আল্লাহর চিরন্তন বিধান হলো তিনি পূর্ববর্তী সব নবী রাসুলদের দ্বারা অলৌকিক ঘটনা ঘটিয়েছেন, যা তাদের জন্য মুজিযা, তাদের সত্যতার প্রমাণ ও জাতির নিকট প্রমাণ করার পন্থা। প্রত্যেক নবী যে জাতির নিকট প্রেরিত হয়েছেন সে জাতি যে বিষয়ে বেশি পারদর্শী সে বিষয়ে তাঁর মুজিযা ছিল। মূসা (আঃ) এর মুজিযা ছিল তাঁর জাতি যে বিষয়ে বেশী পারদর্শী সে বিষয়ে, সেটা হলো যাদু বিদ্যা। আল্লাহ তায়া’লা তাদের যাদুকে ধ্বংস করে দিয়েছেন। তারা সর্বপ্রকার যাদু বিদ্যায় অনেক দক্ষ ও পারদর্শী হওয়া সত্বেও মূসা (আঃ) এর যাদুর মোকাবিলা করতে অক্ষম হয়েছিল। ঈসা (আঃ) এর জাতি চিকিৎসা বিদ্যা ও আরোগ্য – বিজ্ঞানে পারদর্শী ছিল, ফলে আল্লাহ তায়া’লা তার দ্বারা কঠিন কঠিন রোগ থেকে আরোগ্যদান করেন। তাঁর দ্বারা তিনি মৃত্যুকে জীবিত করেন, ইহা ছিল তার দৃশ্যমান মুজিযা। আর এসব একটি নির্দ্দিষ্ট সময় ও স্থানের সাথে নির্ধারিত ছিল, বিশ্বব্যাপী স্থায়ী ছিলনা। মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাহিস সালামের ও সে সব দৃশ্যমান মুযিজা ছিল, যেমনঃ তাঁর আঙ্গুল থেকে পানি নির্গত হওয়া। সামান্য খাবার বেশি হওয়া, এমনকি তাঁর সাথে সব মুসলমানেরা তা খেয়েও অবশিষ্ট ছিল। সামান্য পানি বেড়ে যাওয়া, যা তাঁর সাথের সব সৈনিকেরা পান করেছেন ও অযু করেছেন। তাঁর মিম্বার থেকে কাঠের টুকরা আলাদা করায় সেটার ক্রন্দন, মক্কায় পাথরের সালাম দেয়া, গাছ তাঁর দিকে হেলে পড়া, তাঁর মুঠোয় পাথরের টুকরার তাছবীহ পাঠ, আল্লাহর ইচ্ছায় রোগীকে আরোগ্য করা ইত্যাদি।
মহাগ্রন্থ আল কোরআন যেসব মুযিজার কথা উল্লেখ করেছে তার মধ্যে ইসরা ও মি’রাজের ঘটনা অন্যতম। তাঁকে মসজিদে হারাম থেকে মসজিদে আকসায় রাতে ভ্রমণ করানো হয়েছে, অতঃপর সেখান থেকে সপ্ত আসমান ভ্রমণ করানো হয়েছিল। আল্লাহ তায়া’লা বলেনঃ পরম পবিত্র ও মহিমাময় সত্তা তিনি, যিনি স্বীয় বান্দাকে রাত্রি বেলায় ভ্রমণ করিয়েছিলেন মসজিদে হারাম থেকে মসজিদে আকসা পর্যান্ত-যার চার দিকে আমি পর্যাপ্ত বরকত দান করেছি যাতে আমি তাঁকে কুদরতের কিছু নিদর্শন দেখিয়ে দেই। নিশ্চয়ই তিনি পরম শ্রবণকারী ও দর্শনশীল। (বনী ইসরাইলঃ ১)
এমনিভাবে চন্দ্র দ্বিখণ্ডিত হওয়া, আল্লাহ তায়া’লা বলেনঃ কেয়ামত আসন্ন, চন্দ্র বিদীর্ণ হয়েছে। (সূরা কামারঃ ১)
মুশরিকেরা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাহিস সালামের সত্যতা প্রমাণে তাঁর নিকট স্পষ্ট মুযিজা চাইল। তারা চন্দ্রকে বিদীর্ণ করতে বললেন। যদি তিনি এটা করতে পারেন তবে তারা ঈমান আনবে বলে ওয়াদা করল। সেদিন ছিল চৌদ্দ তারিখ, পুর্নিমার রাত্রি, এ তারিখে চন্দ্র পূর্ণ আকার ধারণ করে ও উজ্জ্বল থাকে। তাই রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করলেন যাতে কাফেরদের আবেদন পূরণ করা হয়। আল্লাহ তায়া’লা তাঁর দোয়া কবুল করলেন, ফলে চন্দ্র দ্বিখণ্ডিত হলো। এক খন্ড সাফা পাহাড়ের উপর ও অন্যখন্ড তার সামনের কিকায়ান পাহাড়ের উপর পড়ল। এত বড় নিদর্শন সংঘটিত হওয়ার পরেও কুরাইশ মুশরিকেরা ঈমান আনেনি। তারা একে যাদু বলে গন্য করল। আর ইহাই যুগে যুগে আল্লাহর দ্বীন থেকে বিমুখদের চিরাচরিত অভ্যাস, যখনই সত্য স্পষ্ট হয়ে তাদের শক্তিকে ধ্বংস করে দেয় এবং সত্যের আলো তাদের গোমরাহীকে নিভিয়ে দেয় তখন তারা মূল বিষয়টাকে বিকৃত করার চেষ্টা করে বা সত্যকে উল্টিয়ে দিয়ে ষড়যন্ত্র ও বিরোধিতায় লিপ্ত হতে পিছপা হয়না। তারা মনে করে এটাই সত্যকে মিটিয়ে দেয়ার জন্য যথেষ্ট। আল্লাহ তায়া’লা বলেনঃ তারা যদি কোন নিদর্শন দেখে তবে মুখ ফিরিয়ে নেয় এবং বলে, এটা তো চিরাগত জাদু। তারা মিথ্যারোপ করছে এবং নিজেদের খেয়াল-খুশীর অনুসরণ করছে। প্রত্যেক কাজ যথাসময়ে স্থিরীকৃত হয়। (সূরা ক্বামারঃ ২-৩)
আল কোরআনঃ ইহা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাহিস সালামের সবচেয়ে বড় মুজিযা, যুগ যুগ ধরে ইহা স্থায়ী ছিল ও আছে। ইহা তাঁর অর্থগত যুক্তিনির্ভর মুযিজা, নবুয়াতের এক মহানিদর্শন। কেননা উহা চূড়ান্ত কিতাব। আল্লাহ তায়া’লা এ মহাগ্রন্থ এমন একজন নিরক্ষর লোকের উপর নাযিল করেছেন, যিনি লিখতে ও পড়তে জানতেন না। তিনি সব সাহিত্যিকদেরকে চ্যালেঞ্জ করেছেন কোরআনের অনুরূপ বা ইহার যে কোন সূরার অনুরূপ কিছু রচনা করতে। কোরআনের অলৌকিকতা ও চ্যালেঞ্জ অহংকারী ছাড়া কেউ অস্বীকার করতে পারেনা। ইহার ভাষাগত বিশুদ্ধতা, বাগ্মিতা, গাঁথনশৈলি ও বাচনভঙ্গি সব কিছুই বিস্ময়কর ও মু’জিযা। অতীত ও ভবিষ্যতের ঘটনাবলী সম্পর্কে সংবাদ দেয়া, এছাড়া এর সুবিজ্ঞচিত বিধানাবলী, সুউচ শিষ্টাচার, হেদায়েত, আলোর দিশা ও বরকত সব কিছুই এক একটা মহামু’জিযা।
আল কোরআনে অহীর মাধ্যমে মহাবিশ্ব সম্পর্কে যেসব বিস্ময়কর বৈজ্ঞানিক ব্যাখা দিয়েছে, তা আধুনিক বিজ্ঞান বর্তমানে প্রমাণ করেছে। সে সব বিষয় মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাহিস সালামের অহী প্রাপ্তির পূর্বে মানুষের জানা ছিলনা। ইহাই তার নবুয়াতের অকাট্য প্রমাণ। এমনিভাবে গর্ভস্থ সন্তান বেড়ে উঠা সম্পর্কে কোরআন যে ব্যাখ্যা দিয়েছে, আধুনিক বিজ্ঞান তা আবিষ্কার করেছে। এছাড়াও সমুদ্রে মিঠা ও লবন পানির মাঝে বিদ্যমান পার্থক্যরেখা ইত্যাদি। আল কোরআন আল্লাহর নিকট থেকে প্রেরিত হওয়ার অন্যতম বড় প্রমাণ হলো, চৌদ্দশত বছরের অধিক সময় ধরে ইহা পরিবর্তন, পরিমার্জন ও বিকৃতি থেকে মুক্ত হয়ে অবিকাল অবস্থায় আছে। এতে কোন ধরণের পরিবর্তন ও বিকৃতি হয়নি। ইহা বারবার তিলাওয়াত করার পরেও তিলাওয়াতকারী বিরক্ত হয়না। আল্লাহ তায়া’লা বলেনঃ আমি স্বয়ং এ উপদেশ গ্রন্থ অবতারণ করেছি এবং আমি নিজেই এর সংরক্ষক। (সূরা হিজরঃ ৯)
বরং তিনি কোরআনের মাধ্যমে সহিহ আক্বীদা, পরিপূর্ণ জীবন বিধানও সংরক্ষণ করেছেন। ইহার দ্বারা তিনি একটি উত্তম জাতি প্রতিষ্ঠিত করেছেন। এভাবে প্রমাণিত হয় যে, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাহিস সালামের মু’যিজা অন্যান্য নবীদের মুযিজা থেকে আলাদা বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন, অনেক বড়, বিশ্বব্যাপী ও স্থায়ী। কোরআনের চ্যালেঞ্জ এখনও বিদ্যমান এবং কিয়ামত পর্যন্ত ইহার অনুরূপ একটি গ্রন্থ রচনা করার চ্যালেঞ্জ বিদ্যমান থাকবে। আল্লাহ তায়া’লা বলেনঃ বলুনঃ যদি মানব ও জ্বিন এই কোরআনের অনুরূপ রচনা করে আনয়নের জন্যে জড়ো হয়, এবং তারা পরস্পরের সাহায্যকারী হয়; তবুও তারা কখনও এর অনুরূপ রচনা করে আনতে পারবে না। (বনী ইসরাইলঃ ৮৮)
তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মহাবিশ্ব ও নানা দেশ সম্পর্কে বিভিন্ন আগাম সংবাদ দিয়েছেন। সে সব ঘটনা তাঁর দেয়া সংবাদ অনুযায়ী সংঘটিত হয়েছে। যেমনঃ সিরিয়া, ইরাক ও কনস্টান্টিনোপল (ইস্তাম্বুল) বিজয়ের সুসংবাদ দিয়েছিলেন। এমনিভাবে তিনি পূর্ববর্তী উম্মত, নবী রাসুলদের সাথে তাদের ঘটনাবলী সম্পর্কে সংবাদ দিয়েছেন। আদম (আঃ) থেকে শুরু করে সমস্ত নবী রাসুল যেমনঃ নূহ, ইবরাহীম, মূসা, ঈসা (আঃ) প্রভৃতি নবী রাসুল সম্পর্কে তিনি অনেক সংবাদ দিয়েছেন। এমনিভাবে তিনি ভবিষ্যতের অনেক ঘটনা সম্পর্কে আগাম সংবাদ দিয়েছেন। তিনি যেভাবে সংবাদ দিয়েছেন সে সব ঘটনা সেভাবেই সংঘটিত হয়েছে। যেমনঃ যখন রোমানদের উপর পারস্য বিজয় লাভ করল, তখন আল্লাহ তায়া’লা তাঁকে সংবাদ দিলেন, কিছু বছর পরে রোমানরা আবার পারস্যের উপর বিজয় লাভ করবে। আল্লাহ তায়া’লা বলেনঃ আলিফ-লাম-মীম, রোমকরা পরাজিত হয়েছে, নিকটবর্তী এলাকায় এবং তারা তাদের পরাজয়ের পর অতিসত্বর বিজয়ী হবে, কয়েক বছরের মধ্যে। অগ্র-পশ্চাতের কাজ আল্লাহর হাতেই। সেদিন মুমিনগণ আনন্দিত হবে। আল্লাহর সাহায্যে। তিনি যাকে ইচ্ছা সাহায্য করেন এবং তিনি পরাক্রমশালী, পরম দয়ালু। আল্লাহর প্রতিশ্রুতি হয়ে গেছে। আল্লাহ তার প্রতিশ্রুতি খেলাফ করবেন না। কিন্তু অধিকাংশ লোক জানে না। তারা পার্থিব জীবনের বাহ্যিক দিক জানে এবং তারা পরকালের খবর রাখে না। (সূরা রূমঃ ১-৭)
আল্লাহ তায়া’লা যেভাবে বলেছেন সে সব ঘটনা সেভাবেই সংঘটিত হয়েছে।
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাহিস সালামের আবির্ভাবের পূর্বেই সমস্ত আম্বিয়া কিরামগন নিকট যুগে যুগে তাঁর আগমনের সুসংবাদ দিয়ে গেছেন। তাঁর আবির্ভাবের উৎস ও দেশের বর্ণনা , বিভিন্ন জাতি এবং রাজা বাদশাহরা যে তাঁর ও তাঁর উম্মতের বশ্যতা স্বীকার করবে ,এসবের বর্ননা তাঁরা দিয়েছেন।তাঁর দ্বীনের প্রচার ও প্রসারের কথা ও উল্লেখ করেছেন।
তিনি সর্বশেষ নবী। তিনি যদি আবির্ভাব না হতেন তবে সমস্ত আম্বিয়া কিরাম যারা তাঁর আবির্ভাবের সুসংবাদ দিয়েছেন তাদের নবুওয়াত বাতিল হয়ে যাওয়া আবশ্যক হয়ে পড়তো।
তাওরাত ও ইঞ্জিলের নিরপেক্ষ পন্ডিতেরা তাঁর নবুয়াতের সত্যতা ও দলিল প্রমাণ সম্পর্কে সাক্ষ্য দিয়েছেন। যেমনঃ বোহাইরা পাদ্রী, ওয়ারাকা বিন নাওফেল, সালমান ফারেসী, আব্দুল্লাহ ইবনে সালাম ও যায়েদ ইবনে সা’নাহ।
যেসব জাতির সাথে তাঁর যুদ্ধ হয়েছে তাদের উপর বিজয় লাভ হচ্ছে তাঁর নবুয়াতের অন্যতম নিদর্শন। কেননা এটা অসম্ভব যে,কেউ আল্লাহর নিকট থেকে প্রেরিত বলে মিথ্যা দাবী করার পর আল্লাহ তাঁকে বিজয়, ক্ষমতায়ন, শত্রুর পরাজয়, দাওয়াতের প্রসার, অনুসারী বৃদ্ধি ইত্যাদি দ্বারা সাহায্য করবেন। কেননা এসব শুধু মাত্র সত্য নবীদের বেলায়ই বাস্তবায়িত হয়।
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাহিস সালামের আচার আচারণ, সততা, প্রশংসিত জীবন চরিত, শরিয়ত, উত্তম আখলাক ইত্যাদি তাঁর নবুয়াতের প্রমাণ। আল্লাহ তায়া’লা তাঁকে শিষ্টাচার শিক্ষা দিয়েছেন। ফলে তিনি উত্তমরূপে শিষ্টাচার শিক্ষা লাভ করেছেন। আপনি অবশ্যই মহান চরিত্রের অধিকারী। (সূরা ক্বলমঃ ৪)
কেননা এসব গুনাবলী একজন সত্য নবী ছাড়া অন্য কারো মধ্যে একত্রিত হতে পারেনা।
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাহিস সালামের নবুয়াত ও মু’যিজা সম্পর্কে যে সব বর্ণনা এসেছে তা তাওয়াতুর বা বহু লোকের পরম্পরা বর্ণনা পদ্ধতিতে এসেছে, যাদের মিথ্যার উপর একমত হওয়া অসম্ভব। যে ব্যক্তি অন্যান্য নবী রাসুলদের অবস্থা ও তাদের ইতিহাস সম্পর্কে একটু চিন্তা গবেষণা করবে সে নিশ্চিতভাবেই বুঝতে পারবে যেসব পদ্ধতিতে তাদের নবুয়াত সাব্যস্ত করা হয়, সে সব পদ্ধতিতেই রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাহিস সালামের নবুয়াত সাব্যস্ত করা যায়, বরং রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাহিস সালামের নবুয়াত অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে সাব্যস্ত হয়। যখন কেউ চিন্তা করবে যে, কিভাবে মূসা ও ঈসা (আঃ) এর নবুয়াত বর্ণিত হয়েছে তখন জানবে যে বহু লোকের পরম্পরা বর্ণনার ভিত্তিতে তা প্রমাণিত হয়েছে। আর মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাহিস সালামের নবুয়াত যে বহু লোকের পরম্পরার ভিত্তিতে প্রমাণিত তা আরো বেশি মজবুত ও দৃঢ়। কেননা তাঁর মুজিযা অনেক, বরং তাঁর সবচেয়ে বড় মুজিযা হলো মহাগ্রন্থ আল কোরআন, যা অসংখ্য লোকের পরম্পরার ভিত্তিতে মুখে তিলাওয়াত ও লিখিতভাবে যুগ যুগ ধরে বর্ণিত হয়ে আসছে।
মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাহিস সালামের নিরক্ষরতা তাঁর নবুয়াতের আরেকটি প্রমাণ। আল্লাহ তায়া’লা তাঁর নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে প্রেরণ করেছেন, যিনি লেখা পড়া জানতেন না। তাঁর নিরক্ষরতাই কোরআনে কারীম আল্লাহ তায়া’লার তরফ থেকে অবতীর্ণ হওয়ার সবচেয়ে বড় প্রমাণ। বিশেষ করে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) স্বীয় জাতির মাঝে অনেক বছর বসবাস করেছেন, যদি তিনি লেখা পড়া জানতেন তবে কাফেরেরা বলত যে, এ সব কিছু তাঁর নিজের আবিষ্কার ও চিন্তা ভাবনা থেকে নেয়া। আল্লাহ তায়া’লা বলেনঃ এভাবেই আমি আপনার প্রতি কিতাব অবর্তীণ করেছি। অতঃপর যাদের কে আমি কিতাব দিয়েছিলাম, তারা একে মেনে চলে এবং এদেরও (মক্কাবাসীদেরও) কেউ কেউ এতে বিশ্বাস রাখে। কেবল কাফেররাই আমার আয়াতসমূহ অস্বীকার করে। আপনি তো এর পূর্বে কোন কিতাব পাঠ করেননি এবং স্বীয় দক্ষিণ হস্ত দ্বারা কোন কিতাব লিখেননি। এরূপ হলে মিথ্যাবাদীরা অবশ্যই সন্দেহ পোষণ করত। (সূরা আনকাবুতঃ ৪৭-৪৮)
কোরআন যে তাঁর পক্ষ থেকে নয় বরং আল্লাহ তায়া’লার নিকট থেকে অবতীর্ণ সে ব্যাপারে আল্লাহ তায়া’লা আরো তাগিদ দিয়ে বলেনঃ তিনিই নিরক্ষরদের মধ্য থেকে একজন রসূল প্রেরণ করেছেন, যিনি তাদের কাছে পাঠ করেন তার আয়াতসমূহ, তাদেরকে পবিত্র করেন এবং শিক্ষা দেন কিতাব ও হিকমত। ইতিপূর্বে তারা ছিল ঘোর পথভ্রষ্টতায় লিপ্ত। (সূরা জুম’আঃ ২)
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে উম্মী বা নিরক্ষর গুনে গুণান্বিত করে আল্লাহ তায়া’লা বলেছেন যে, তিনি অন্যান্য নিরক্ষর লোকদের মাঝে তাঁর আয়াত অর্থাৎ আল্লাহর অহী পড়ে শুনান, তাদেরকে পবিত্র করেন, তাদেরকে আল্লাহর কিতাব শিক্ষা দেন, যেমনিভাবে অন্যান্য নবী রাসুলগণ তাদের জাতিকে আল্লাহর কিতাব শিক্ষা দিয়েছেন। তাদেরকে তিনি প্রজ্ঞা শিক্ষা দিয়েছেন যা অন্যান্য রাসুলগণ তাদের জাতিকে শিখিয়েছেন। এ সব গুনাবলী রাসুলের মু’জিযা, তিনি নিরক্ষর হওয়া সত্বেও অন্যান্য নবী রাসুলগণ তাদের জাতির জন্য যে সব উপকারী জিনিস নিয়ে এসেছেন সে সব উপকারী জিনিস এই নিরক্ষর একজন নবীও নিয়ে এসেছেন, তাদের থেকে কোন অংশে কম আনেননি, ফলে তাঁর (সাল্লাল্লাহু আলাহিস সালামের) নিরক্ষরতা তাঁর জন্য মু’জিযা, অন্যান্য নবীরা যেমনঃ মূসা (আঃ) লেখাপড়া জেনেও যা কিছু এনেছেন, তিনি নিরক্ষর হওয়া সত্বেও তাঁর চেয়ে উত্তম কিছু নিয়ে এসেছেন।