বিশ্ববাসীর জন্য রহমত

বিশ্ববাসীর জন্য রহমত
3.5

বিশ্ববাসীর জন্য রহমত

নবুয়াতের শীলমোহর

হ্যানরী ডি ক্যাসটারী

ফরাসি সাবেক সেনা অফিসার
ধর্ম এক
সব নবীদের ধর্ম এক। আদম (আঃ) থেকে মুহাম্মদ (সঃ) পর্যন্ত তারা অভিন্ন মতের ধারক। তিনটি আসমানি কিতাব নাজিল হয়েছে। সেগুলো হল, জাবুর, তাওরাত ও কোরআন। তাওরাতের সাথে কোরানের সম্পর্ক হল, জাবুরের সাথে তাওরাতের সম্পর্কের মত। ঈসা (আঃ) এর সাথে মুহাম্মদে (সঃ) এর সম্পর্ক হল, মূসা (আঃ) এর সাথে ঈসা (আঃ) এর সম্পর্কের মত। তবে যা জেনে রাখা দরকার তা হল, কোরআন মানুষের কল্যানে আসমান থেকে অবতীর্ণ সর্ব শেষ কিতাব। আর এর বাহক হলেন শেষ নবী। তাই কোরানের পর আর কোন কিতাব নেই এবং মুহাম্মদ (সঃ) এর পর আর কোন নবী নেই।

মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সর্বকালে ও যুগে পৃথিবীর সব মানুষের নিকট প্রেরণ করা আল্লাহ তায়া’লার এক মহা হিকমত ও প্রজ্ঞা। আল্লাহ তায়া’লা বলেনঃ আমি আপনাকে সমগ্র মানবজাতির জন্যে সুসংবাদাতা ও সতর্ককারী রূপে পাঠিয়েছি;কিন্তু অধিকাংশ মানুষ তা জানে না। (সূরা সাবাঃ ২৮)

ওয়াশিংটন এরফেঞ্জ

মার্কিন প্রাচ্যবিশেষজ্ঞ
সর্বশেষ আসমানী কিতাব
এক সময় তাওরাত ছিল মানুষের দিশারী ও তাঁর পথ চলার মূল। তবে যখন যীশু আবির্ভুত হলেন তখন খ্রীষ্টানরা ইঞ্জিলের নিয়ম নীতি আনুসরণ করতে শুরু করে। এর পর কোরআন উভয়ের স্থানে স্থিত হল। তবে কোরআন ছিল সে দুটির তুলনায় অধিক ব্যপক ও বিস্তর। একই ভাবে ওই দুটি কিতাবে যে পরির্তন অনুপ্রবেশ করেছে কোরআন তা পরিশুদ্ধ করে দিয়েছে । কোরআন সব কিছু সন্নিবেশ করেছে। সব আইন কানুনের সমাবেশ করেছে। কারণ, তা হল শেষ আসমানি কিতাব।

তাঁর রিসালাতকে সব ধরণের পরিবর্তন ও রূপান্তর থেকে মুক্ত রেখেছেন, যাতে তাঁর রিসালাত মানুষের কাছে প্রাণবন্ত হয়ে অবশিষ্ট থাকে। ইহা পরিবর্তন ও পরিবর্ধনের সব ধরণের দোষত্রুটি থেকে পবিত্র, এজন্যই আল্লাহ তায়া’লা তাঁর রিসালাতকে সব রিসালাতের শেষ রিসালাত করেছেন। এ জন্য তিনি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সর্বশেষ নবী হিসেবে নির্বাচন করেছেন, তাঁর পরে আর কোন নবী আসবেন না। কেননা আল্লাহ তায়া’লা তাঁর রিসালাতের দ্বারা সব রিসালাতকে পরিপূর্ণ করে দিয়েছেন, তাঁর দ্বারা শরিয়তের বিধিবিধান পূর্ণ করেছেন, তাঁর দ্বারা রিসালাতের কাঠামো পূর্ণ করেছেন।

আর্নল্ড টয়েনবী

ব্রিটিশ ইতিহাসবিদ
মানবজাতির শিক্ষক
রসুলে আরাবীর সীরাত তাঁর অনুসারীদের বুদ্ধিকে প্রভাবিত করেছে। তাঁর ব্যক্তিত্ব তাদের নিকট সর্বোচ্চ স্তরে উপনীত হয়েছে। তাই তারা তাঁর রেসালাতের উপর এমন ঈমান এনেছে যার ফলে তারা তাঁর উপর অবতীর্ণ সকল ওহীকে তারা গ্রহণ করে নিয়েছে। এমনিভাবে হাদিছ অনুযায়ী তাঁর সব কাজও আইনের উৎসে পরিণত হয়েছে। এ আইন শুধু মুসলিম সমাজের জীবন বিধানের মাঝেই সীমিত নয়, বরং এতে আছে মুসলিম বিজেতাদের সাথে অমুসলিম প্রজাদের আচার আচরনের বিধান।

এজন্য মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে কিতাব নিয়ে এসেছেন তা পূর্ববর্তী সব কিতাবের রক্ষাকারী, কর্তৃত্বকারী ও রহিতকারী। এমনিভাবে তাঁর আনিত শরিয়ত পূর্ববর্তী সব শরিয়তের রহিতকারী। আল্লাহ তায়া’লা তাঁর রিসালাতের হিফাযতের দায়িত্ব নিজেই নিয়েছেন। ফলে তাঁর রিসালাত অসংখ্য মানুষের পরম্পরা বর্ণনার ভিত্তিতে আমাদের নিকট পৌঁছেছে। কেননা কোরআন লিখিত ও পঠিত উভয় সুরতেই অসংখ্য মানুষের পরম্পরা বর্ণনায় বর্ণিত হয়ে আসছে। এমনিভাবে এ ধর্মের শরিয়ত, ইবাদত, আখলাক, বিভিন্ন বিধান প্রভৃতি ব্যবহারিকভাবে অসংখ্য মানুষের পরম্পরায় বর্ণিত হয়ে আসছে।

ওয়াশিংটন এরফেঞ্জ

মার্কিন প্রাচ্যবিশেষজ্ঞ
আল্লাহর ইবাদত কর
আল্লাহ তায়ালা যে নবী রাসুলদেরকে পাঠিয়েছিলেন মানুষকে আল্লাহর এবাদতের দিকে ডাকার জন্য মুহাম্মদ (সঃ) ছিলেন তাদের মধ্যে সর্ব শেষ ও সর্ব মহান।

যে কেউ রাসুলের সিরাত ও সুন্নত নিয়ে চিন্তা করলে জানতে পারবে যে, তাঁর সাহাবারা মানব জাতির জন্য রাসুলের সব অবস্থা, বাণী ও কাজ সংরক্ষণ করেছেন। আল্লাহর জন্য তাঁর ইবাদত, জিকির, ইস্তিগফার, তাঁর জিহাদ, বদান্যতা, বীরত্ব, সাহাবাদের ও ভিন দেশীদের সাথে তাঁর আচার আচারণ ইত্যাদি বর্ণনা করেছেন। এমনিভাবে তারা তাঁর আনন্দ, দুঃখ, বেদনা, সফর ও স্থায়ী বসবাসের অবস্থা, তাঁর খাওয়া দাওয়া, পানাহার, পোশাক পরিচ্ছেদ, ঘুম ও জাগ্রত অবস্থায় তাঁর সব ধরণের কাজ ও অবস্থা বর্ণনা করেছেন।

টলস্তোয়

রাশিয়ান সাহিত্যিক
সর্বশেষ নবী
নবী মুহাম্মদ (সঃ) প্রতি অভিভূতদের একজন আমি; এক আল্লাহ যাকে নির্বাচিত করেছেন তাঁর হাতেই রেসালাতের সমাপ্তি ঘটানোর জন্য এবং তিনি শেষ নবী হওয়ার জন্য।

এসব কিছু যখন কেউ একটু চিন্তা ভাবনা করবে তখন সে বুঝতে পারবে যে, এ ধর্ম আল্লাহ তায়া’লা কর্তৃক সংরক্ষিত।

আর তখন সে জানতে পারবে যে, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম) সর্বশেষ নবী ও রাসুল। কেননা আল্লাহ তায়া’লা আমাদেরকে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন যে, তিনি সর্বশেষ নবী। আল্লাহ তায়া’লা বলেনঃ মুহাম্মদ তোমাদের কোন ব্যক্তির পিতা নন; বরং তিনি আল্লাহর রাসূল এবং শেষ নবী। আল্লাহ সব বিষয়ে জ্ঞাত। (সূরা আহযাবঃ ৪০)

সৃষ্টিকুলের জন্য রহমত স্বরূপ

লোরা ভিশিয়া ভাগলিরী

ইতালিয়ান প্রাচ্যবিশেষজ্ঞ
ইসলামের বিশ্বজনীনতা
কোরানের যে আয়াতটি ইসলামের বিশ্বজনীনতার দিকে ইশারা করে, এই বলে যে, এই দীনকে তার সে নবীর উপর নাজিল করেছেন যিনি “সমগ্র জগত বাসীর জন্য রহমত স্বরূপ”, সে আয়াতটি সমগ্র জগতের জন্য সরাসরি আহ্বান। এটা উজ্জল প্রমান যে, রাসুল নিশ্চিত ভাবে বুঝতে পেরেছিলেন, তার রেসালাত আরব জাতীর সীমানা পার হবে, এবং তার উচিৎ, ভিন্ন ভিন্ন জাতীর কাছে বিভিন্ন ভাষার মানুষের কাছে এই নতুন বাণী পৌঁছে দেয়া

আল্লাহ তায়া’লা তাঁর রাসুল মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বিশ্বের নারী-পুরুষ, ছোট- বড় সকলের জন্য রহমত স্বরূপ প্রেরণ করেছেন। বরং যারা তাঁর উপর ঈমান আনেনি তিনি তাদের জন্যও রাসুলকে রহমত স্বরূপ প্রেরণ করেছেন। রাসুলের সারা জীবনের নানা ঘটনা ও অবস্থা পর্যবেক্ষণ করলে এ রহমত স্পষ্ট হয়। এর উৎকৃষ্ট উদাহরণ হলোঃ তিনি যখন মক্কায় স্বজাতিকে –তাদের উপর রহমত করে-দাওয়াত দিলেন, তারা তাঁকে মিথ্যারোপ করেছিল, মক্কা থেকে বিতাড়িত করেছে, এমনকি তাঁকে হত্যার চেষ্টাও করেছে। কিন্তু আল্লাহ তায়া’লা তাঁকে রক্ষা করেন, তিনি তাদের ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করে দেন। আল্লাহ তায়া’লা বলেনঃ আর কাফেরেরা যখন প্রতারণা করত আপনাকে বন্দী অথবা হত্যা করার উদ্দেশ্যে কিংবা আপনাকে বের করে দেয়ার জন্য তখন তারা যেমন ছলনা করত তেমনি,আল্লাহও ছলনা করতেন। বস্তুতঃ আল্লাহর ছলনা সবচেয়ে উত্তম। (সূরা আনফালঃ ৩০)

এতকিছুর পরেও তাদের প্রতি রাসুলের রহমত দিনে দিনে বেড়েই চলল, তাদের হেদায়েতের ব্যাপারে তিনি খুবই আশাবাদী ছিলেন। আল্লাহ তায়া’লা এ সম্পর্কে বলেনঃ তোমাদের কাছে এসেছে তোমাদের মধ্য থেকেই একজন রসূল। তোমাদের দুঃখ-কষ্ট তার পক্ষে দুঃসহ। তিনি তোমাদের মঙ্গলকামী, মুমিনদের প্রতি স্নেহশীল,দয়াময়। (সূরা তাওবাঃ ১২৮)

অতঃপর তিনি যখন মক্কা বিজয়ের দিনে তাদের উপর বিজয় লাভ করলেন, তখন তিনি সকলকে ক্ষমা করে দিলেন। আল্লাহ তায়া’লা যখন তাঁর সাহায্যে ফেরেশতা পাঠিয়ে দু’পাহাড়ের মাঝে চেপে নিঃশেষ করে দেয়ার কথা বললেন, তখন তিনি এ আশায় ধৈর্য ধারণ করলেন যে, হয়ত আল্লাহ তায়া’লা তাদের বংশধরের থেকে এমন লোক সৃষ্টি করবেন যারা এক আল্লাহ তায়া’লার ইবাদত করবেন। আল্লাহ তায়া’লা বলেনঃ আমি আপনাকে বিশ্ববাসীর জন্যে রহমত স্বরূপই প্রেরণ করেছি। (সূরা আম্বিয়াঃ ১০৭)

তিনি সমস্ত মানব জাতির জন্য রহমত স্বরূপ, বিভিন্ন রঙ, ভাষা, দৃষ্টিভঙ্গি, চিন্তাভাবনা, আক্বিদা ও স্থানের ভেদাভেদের উর্ধ্বে তিনি সকলের জন্যই রহমত।

জন লিক

স্প্যানিশ প্রাচ্যবিশেষজ্ঞ
সকলের জন্য রহমত স্বরূপ
মুহাম্মদের ঐতিহাসিক জীবনকে আল্লাহ তায়ালা যেভাবে বর্ণনা করেছেন এর চেয়ে সুন্দর ভাবে আর বর্ণনা করা সম্ভব না। তিনি বলেছেন, “আপনাকে তো আমি শুধু জগতবাসির রহমত স্বরূপ পাঠিয়েছি।” এ মহান এতীম নিজেই প্রমান করেছেন, তিনি সব দুর্বলের এবং সব সাহায্যের প্রতি মুখাপেক্ষীর জন্য সর্বমহান রহমত। সব এতীম , মুসাফির, অসহায়, দরিদ্র, ও মেহনতি মানুষের জন্য প্রকৃত রহমত।

তাঁর রহমত শুধু মানবজাতির জন্য সীমাবদ্ধ নয়, বরং পশুপাখি ও জড়পদার্থের জন্যও তিনি ছিলেন রহমত স্বরূপ। এক আনসারী সাহাবী তার উটকে শাস্তি দিচ্ছিল, উটটি ক্ষুধার তাড়নায় কষ্ট পাচ্ছিল, তখন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার অবস্থা দেখে দয়াশীল হলেন, উটের মালিককে তার প্রতি সদয় হতে বললেন, তার সাধ্যের বাহিরে তাকে বহন করাতে নিষেধ করলেন। একদা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দেখলেন, এক লোক কবুতরের বাচ্চা নিয়ে এসেছে, এতে তিনি কবুতরের উপর দয়াশীল হলেন, তাঁর হৃদয় নরম হল, তিনি বাচ্চাগুলোকে তাদের মায়ের কাছে ফিরিয়ে দিতে বললেন। তিনি বলেছেনঃ “যখন তোমরা পশু পাখি জবাই করবে, তখন তাদের প্রতি সদয় হয়ে জবাই কর”। (মুসলিম শরীফ) এমনকি তার রহমত জড়পদার্থকেও শামিল করেছে। যখন তার মিম্বারের কাঠ খন্ডটি তাঁর থেকে আলাদা করার কারণে কান্না শুরু করল, তখন তিনি সেটির কাছে গেলেন, সেটাকে জড়িয়ে ধরলেন, ফলে সেটা শান্ত হল।

তাঁর রহমত শুধু বিভিন্ন অবস্থা ও ঘটনার সাথেই সীমাবদ্ধ ছিলনা। বরং ইহা ছিল আদেশ, শরিয়ত, পদ্ধতি ও আখলাক, যা তিনি মানুষের জন্য বিধিবদ্ধ করেছেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মানুষের প্রতি রহমত, দয়া ও নম্রতার প্রতি উৎসাহ দিয়ে বলেছেনঃ “হে আল্লাহ, যে ব্যক্তি আমার উম্মতের দায়িত্বশীল হয় এবং তাদের সাথে কঠোরতা করে তুমিও তার প্রতি নির্দয় ও কঠোর হও। আর যে ব্যক্তি আমার উম্মতের শাসক হয় এবং তাদের সাথে সদয় ব্যবহার করে, তুমিও তার সাথে সদয় ব্যবহার কর”। (মুসলিম শরীফ)। অতঃএব রহমত হল রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মহান চরিত্র। ইসলাম ধর্মের মৌলিক ভিত্তি হলো রহমত ও শান্তি।

রাসূলের আগমন মানবজাতির সৌভাগ্য

কুইলিয়াম

ইংরেজ চিন্তাবিদ
মানবজাতিকে অন্ধকার থেকে আলোর পথে আনয়নকারী
নবী মুহাম্মদ (সঃ)অসম্ভব দ্রুত ভাবে মানুষকে সুখের সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছে দিয়েছেন। মুহাম্মদের (সঃ) এর আগে মানুষের অবস্থা ও তাদের গোমরাহীর দিকে কেউ তীক্ষ্ণ ভাবে দৃষ্টি দিলে এবং তাঁর পরের অবস্থা ও তাঁর যুগে তাদের বিপুল উন্নতির দিকে তাকালে এ দুইয়ের মাঝে আকাশ পাতাল তফাত দেখতে পাবে।

মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নবুয়াত প্রাপ্ত হয়ে আগমন করলেন, ফলে আল্লাহ তায়া’লা মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নবুয়াতের বরকতে মানব জাতিকে হিদায়েত দান করলেন। যেহেতু তিনি এসেছেন স্পষ্ট প্রমাণ ও হিদায়েত নিয়ে, এমন হিদায়েত যার স্পষ্টতা বর্ণনাতীত ও জ্ঞানীর জ্ঞানের উর্ধ্বে। তিনি মানব জাতির জন্য উপকারী জ্ঞান, সৎকর্ম, মহান চরিত্র, সরল সহজ রীতি নীতি নিয়ে এসেছেন। সমস্ত মানব জাতির সকল জ্ঞান বিজ্ঞান, প্রজ্ঞা, কর্ম একত্রিত করলেও তিনি যা নিয়ে প্রেরিত হয়েছেন তা অনেক গুন বেশি হবে। অতএব সমস্ত প্রংশসা মহান আল্লাহ তায়া’লার, তিনি যেভাবে প্রশংসা পেতে ভালবাসেন ও যেভাবে প্রশংসা করলে তিনি সন্তুষ্ট হবেন।

আক্বীদা ও বিশ্বাসের ক্ষেত্রে বলা যায়ঃ তখন মানব জাতি আল্লাহর সাথে শিরক করত, তিনি ছাড়া অন্যান্য ইলাহদের ইবাদত করত, এমনকি আসমানী কিতাবের অধিকারী অনেক আহলে কিতাবরাও শিরক করতে লাগল। তখন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একনিষ্ঠ তাওহীদ, এক আল্লাহর ইবাদত নিয়ে আগমন করলেন, যার কোন শরিক নেই। তিনি মানব জাতিকে মানবের গোলামী থেকে মুক্ত করে মানুষের প্রতিপালকের ইবাদতের দিকে নিয়ে আসেন। তিনি তাদের অন্তরকে শিরকের অপবিত্রতা থেকে পবিত্র করেন, আল্লাহ ছাড়া অন্যের ইবাদত করার কলুষতা থেকে মুক্ত করেন। তাঁর পূর্ববর্তী অন্যান্য নবী রাসুলগণ যা নিয়ে এসেছিলেন তিনিও তা নিয়ে প্রেরিত হলেন। আল্লাহ তায়া’লা বলেনঃ আপনার পূর্বে আমি যে রাসূলই প্রেরণ করেছি, তাকে এ আদেশই প্রেরণ করেছি যে,আমি ব্যতীত অন্য কোন উপাস্য নেই। সুতরাং আমারই এবাদত কর। (সূরা আম্বিয়াঃ ২৫)

আল্লাহ তায়া’লা আরো বলেনঃ আর তোমাদের উপাস্য একইমাত্র উপাস্য। তিনি ছাড়া মহা করুণাময় দয়ালু কেউ নেই। (সূরা বাক্বারাঃ ১৬৩)

ওয়াজনর

ডাচ গবেষক
সব মানুষের ধর্ম
১- আল্লাহর কাছে একমাত্র দীন হল ইসলাম। (আল ইমরান, ১৯) ২- আপনাকে আমি সব মানুষের জন্যই প্রেরণ করেছি, সুসংবাদ দাতা সতর্ককারী রূপে। (সাবা, ২৮) এ দুটি আয়াত আমার মনে ব্যপক প্রভাব ফেলেছে। কারণ, এগুলোতে আছে ইসলামের বিশ্বজনীনতার প্রমাণ। আর শরয়ী জীবন ব্যবস্থার বিশদ বিবরণ ও হযরত ঈসা (আঃ) এর পূর্ণ বিবরণ তো আছেই। সব নবী রাসুলের ধর্মকে সম্মান করার যে মুক্ত শিক্ষা এতে আছে, এর চেয়ে শক্ত ও সত্য শিক্ষা আর কি আছে! নিঃসন্দেহে ইসলাম হল, ন্যয় সত্য ও যুক্তির ধর্ম।

সামাজিক দিক থেকেঃ রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এমন এক সময় প্রেরিত হন যখন মানব জাতি জুলুম, অত্যাচারে নিষ্পেষিত ছিল। তারা নানা শ্রেণীতে বিভক্ত ছিল, ফলে তারা একে অন্যের উপর জুলুম ও নির্যাতন করত। তখন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরব অনারব, সাদা কালো সব ধরণের ভেদাভেদ মুক্ত করে সমগ্র মানব জাতির মাঝে সমতা আনলেন। তাকওয়া ও সৎকর্ম ব্যতীত কারো উপর কারো কোন মর্যাদা নেই। আল্লাহ তায়া’লা বলেনঃ নিশ্চয় আল্লাহর কাছে সে-ই সর্বাধিক সম্ভ্রান্ত যে সর্বাধিক পরহেযগার। (সূরা হুজরাতঃ ১৩)

তিনি ন্যায় বিচার, সদাচার ও সামাজিক দায়িত্বভার গ্রহণ ইত্যাদির আদেশ দিলেন। জুলুম, অন্যায়, সীমালংঘন ইত্যাদি নিষেধ করলেন। আল্লাহ তায়া’লা বলেনঃ আল্লাহ ন্যায়পরায়ণতা, সদাচরণ এবং আত্নীয়-স্বজনকে দান করার আদেশ দেন এবং তিনি অশ্লীলতা, অসঙ্গত কাজ এবং অবাধ্যতা করতে বারণ করেন। তিনি তোমাদের উপদেশ দেন যাতে তোমরা স্মরণ রাখ। (সূরা নাহলঃ ৯০)

বরং তিনি মানুষের সব অধিকার সংরক্ষণ করেছেন, এমনকি আভ্যন্তরীণ সম্মানবোধও, তাই তিনি এক সম্প্রদায় অন্য সম্প্রদায়কে উপহাস করতে নিষেধ করেছেন। আল্লাহ তায়া’লা বলেনঃ মুমিনগণ, কেউ যেন অপর কাউকে উপহাস না করে। কেননা, সে উপহাসকারী অপেক্ষা উত্তম হতে পারে এবং কোন নারী অপর নারীকেও যেন উপহাস না করে। কেননা, সে উপহাসকারিণী অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ হতে পারে। তোমরা একে অপরের প্রতি দোষারোপ করো না এবং একে অপরকে মন্দ নামে ডেকো না। কেউ বিশ্বাস স্থাপন করলে তাদের মন্দ নামে ডাকা গোনাহ। যারা এহেন কাজ থেকে তওবা না করে তারাই যালেম। (সূরা হুজরাতঃ ১১)

হার্বার্ট জর্জ ওয়েলস

বিদায় হজ্জের শিক্ষা
মুহাম্মদ (সঃ) তাঁর ওফাতের এক বছর আগে বিদায়ী হজ্জ পালন করেছে। তখন তাঁর জাতীর সামনে মহা উপদেশ পেশ করেন। এর প্রথম অংশেই মিটিয়ে দেয়া হয়েছে মুসলিমদের মাঝে পারস্পরিক লুটতরাজ রক্তের প্রতিশোধ আর শেষ প্যারাতে কৃষ্ণাংগ মুমিনকে খলিফা হয়ার উপযুক্ত বলে সাব্যস্ত করা হয়েছে। এ উপদেশ জগতে ইনসাফপূর্ণ সুন্দর আচরণের মহান রীতির প্রচলন করেছে।

চারিত্রিক দিক থেকে বললেঃ আল্লাহ তায়া’লা তাঁর নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে এমন এক সময় প্রেরণ করেছেন যখন মানব জাতি চারিত্রিক অধঃপতনে নিমজ্জিত ছিল। আদব, আখলাক, মানবতা ও শিষ্টাচার বলতে কিছুই ছিলনা। এমতাবস্থায় নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মানুষকে উত্তম চরিত্র ও উন্নত শিষ্টাচারের দিকে ফিরিয়ে আনতে আগমন করেন। যাতে সম্মানজনক আচার আচরণ ও লেনদেনে তাদের জীবন সুখী হয়। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ “আমি উত্তম চরিত্রকে পূর্ণ করতে আগমন করেছি”। (বায়হাকী) বরং আল্লাহ তায়া’লা তাঁর চরিত্রকে মহান চরিত্র বলে ঘোষণা করেছেন। আল্লাহ তায়া’লা বলেনঃ আপনি অবশ্যই মহান চরিত্রের অধিকারী। (সূরা ক্বলমঃ ৪)

তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) চরিত্র ও শিষ্টাচারে উত্তম উপমা ছিলেন। খোদাভীতি, পরহেজগারী, উত্তম লেনদেন, ভাল ব্যবহার ও সুন্দর কথাবার্তায় মহান উপমা ছিলেন। বরং সব সুন্দর জিনিসের ক্ষেত্রে তিনি উত্তম নমুনা ছিলেন। আল্লাহ তায়া’লা বলেনঃ যারা আল্লাহ ও শেষ দিবসের আশা রাখে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে,তাদের জন্যে রসূলুল্লাহর মধ্যে উত্তম নমুনা রয়েছে। (সূরা আহযাবঃ ২১)

আব্দুল্লাহ কুইলিয়াম

ইংরেজ চিন্তাবিদ
আল্লাহর নবী মুহাম্মদের চরিত্র
মহৎ স্বভাব, ভদ্র চরিত্র, পরম লাজুকতা, প্রখর অনুভূতিশীলতা এসব যতটুকু মহানতর হতে পারে ততটুকু ছিল মুহাম্মদ (সঃ) এর। মুহাম্মদ (সঃ) এর আরও ছিল বিস্ময়কর বোধ শক্তি, সীমাহীন মেধা, ও তীক্ষ্ণ মহৎ মমতা বোধ। তিনি ছিলেন মহান চরিত্র ও সন্তোষ জনক স্বভাবের অধিকারী।

আর নারীর মর্যাদার ক্ষেত্রে বললে, ইসলাম পূর্বে নারীরা ছিল সবচেয়ে উপেক্ষিত ও তিক্ততর জিনিস। আল্লাহ তায়া’লা নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে এমন এক সময় প্রেরণ করেছেন, যখন নারীরা ছিল লাঞ্ছিত, অপমানিত, তাদের কোন অধিকার ছিলনা। তারা কি মানুষ না অন্য কিছু এ ব্যাপারে তখন মানুষ মতানৈক্য করত। তাদের কি বেঁচে থাকার অধিকার আছে নাকি তাদেরকে হত্যা করা হবে এবং শিশু কালেই তাদেরকে জীবিত দাফন করা হবে? এ ব্যাপারে তারা মতপার্থক্য করত। তাদের অবস্থা বর্ণনায় আল্লাহ তায়া’লা বলেনঃ যখন তাদের কাউকে কন্যা সন্তানের সুসংবাদ দেয়া হয়, তখন তারা মুখ কাল হয়ে যায় এবং অসহ্য মনস্তাপে ক্লিষ্ট হতে থাকে। তাকে শোনানো সুসংবাদের দুঃখে সে লোকদের কাছ থেকে মুখ লুকিয়ে থাকে। সে ভাবে, অপমান সহ্য করে তাকে থাকতে দেবে, না তাকে মাটির নীচে পুতে ফেলবে। শুনে রাখ, তাদের ফয়সালা খুবই নিকৃষ্ট। (সূরা নাহলঃ ৫৮-৫৯)

বার্নার্ড শ

ইংরেজ লেখক
জগতের পথ
ইসলামের রাসুলের জীবনী আমি বার বার ভাল করে অধ্যয়ন করেছি। তাতে আমি নৈতিকতা যেমন হওয়া দরকার তেমনই দেখতে পেলাম। আমি কত আকাঙ্ক্ষা করেছি, ইসলামই হোক জগতের পথ!

তারা ছিল শুধুমাত্র খেলনা ও আনন্দ উপভোগের পাত্র, বেচাকেনাযোগ্য পুতুল স্বরূপ এবং আপমানিত সৃষ্টি।

তখন আল্লাহ তায়া’লা তাঁর নবীকে নারী জাতির সম্মান ও মর্যাদা দিয়ে প্রেরণ করেন। আল্লাহ তায়া’লা বলেনঃ আর এক নিদর্শন এই যে, তিনি তোমাদের জন্যে তোমাদের মধ্য থেকে তোমাদের সংগিনীদের সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছে শান্তিতে থাক এবং তিনি তোমাদের মধ্যে পারস্পরিক সম্প্রীতি ও দয়া সৃষ্টি করেছেন। নিশ্চয় এতে চিন্তাশীল লোকদের জন্যে নিদর্শনাবলী রয়েছে। (সূরা রূমঃ ২১)

বরং তিনি মা হিসেবে তাদের সাথে সদ্ব্যবহার করতে নির্দেশ দেন। আল্লাহ তায়া’লা বলেনঃ তোমার পালনকর্তা আদেশ করেছেন যে, তাঁকে ছাড়া অন্য কারও এবাদত করো না এবং পিতা-মাতার সাথে সদ্ব-ব্যবহার কর। (সূরা বনী ইসরাইলঃ ২৩)

উইলিয়াম ডুরান্ট

মার্কিন লেখক
নারীর মর্যাদা
ইসলাম আরবে নারীর মর্যাদা উন্নীত করেছে। জীবন্ত কন্যা সমাহিত করার প্রথা রহিত করেছে। বিচার ও আর্থিক স্বাধীনতার ক্ষেত্রে নারী পুরুষের মাঝে সমতা বিধান করেছে। যে কোন বৈধ পেশা গ্রহন, নিজের অর্থ সম্পদ নিজেই সংরক্ষণ, উত্তারাধিকারী সম্পত্তি অর্জন, নিজের ইচ্ছা মত সম্পদ ব্যয় এসবের অধিকার দিয়েছে তাকে। জাহেলী যুগের বিভিন্ন কুপ্রথা যেমনঃ পিতার মৃত্যুর পর সন্তানরা অন্যান্য সম্পত্তির সাথে তার স্ত্রীর মালিক হওয়া, নারীকে পুরুষের অর্ধেক সম্পত্তি দেয়া এবং তাদেরকে তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে বিবাহ দেয়া ইত্যাদিকে ইসলাম রহিত করেছে।

তিনি তাদের সাথে সদ্ব্যবহার করাকে পুরুষের সাথে সদ্ব্যবহারের চেয়ে অগ্রাধিকার দেন। “এক লোক রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে এসে জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমার সদ্ব্যবহার পেতে কে অধিক হকদার? তিনি বললেনঃ তোমার মা। লোকটি আবার জিজ্ঞেস করলেন, তারপরে কে? তিনি বললেনঃ তোমার মা, লোকটি আবার জিজ্ঞেস করলেন, এরপরে কে? তিনি আবার বললেনঃ তোমার মা। লোকটি আবার জিজ্ঞেস করলেন, এরপরে কে? তিনি বললেনঃ তোমার বাবা”। (বুখারী শরিফ)।

%%

জুলুম অত্যাচার!!
ইউরোপে দার্শনিকদের এ বিষয়ে আলোচনা সভা হতোঃ নারীর কি পুরুষের প্রাণের মত প্রাণ আছে? তার মানবিয় প্রাণ নাকি পাশবিক প্রাণ? তারা আলোচনায় এ সিদ্ধান্তে পৌঁছে যে, তাদের প্রাণ আছে তবে তা পুরুষের প্রাণের থেকে অনেক স্তর নিচু।

কন্যা হিসেবে তাদেরকে সম্মান দিতে নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)বলেছেনঃ “যার তিনটি কন্যা সন্তান রয়েছে, তাদেরকে লালন পালন করেছে, তাদের প্রতি সদয় ব্যবহার করেছে, তাদের ব্যয়ভার বহন করেছে, তাদের উপর জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যায়। একজন বললঃ হে আল্লাহর রাসুল, যদি দুইজন থাকে? তিনি বললেনঃ যদি দুইজনও থাকে”। (মুসনাদে আহমদ)।

স্ত্রী হিসেবে তাদেরকে সম্মান করতে নির্দেশ দিয়েছেন, তিনি তাদের সম্মান করাকে উত্তম হওয়ার সাথে সম্পর্কিত করেছেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “তোমাদের মধ্যে সেই উত্তম যে তার স্ত্রীর নিকট উত্তম, আর আমি তোমাদের মাঝে আমার স্ত্রীদের নিকট সবচেয়ে উত্তম ব্যক্তি”। (ইবনে মাজাহ)




Tags: