নবুয়াত ও রিসালাতের হাক্বিকত

নবুয়াত ও রিসালাতের হাক্বিকত

নবুয়াত ও রিসালাতের হাক্বিকত

সব রাসূলগণই নিজ গোত্র, ভাষাভাষী থেকে প্রেরিত

$NassrySalhab.jpg*

নাসরী সালহাব

লেবানিজ সাহিত্যিক
দুয়ের মাঝে অনেক পার্থক্য
আরবী নবীর আগে যে সব নবী রাসুল ছিলেন তাদেরকে ইসলাম যত সম্মান করে আর কোন ধর্ম তা করে না। তাকে যারা বিশ্বাস করে তাদের উপর তিনি ফরয করে দিয়েছেন সে সব নবী রাসুলদেরকে সম্মান করা ও তাদের প্রতি বিশ্বাস করাকে। ইসলামের মত আর কোন ধর্ম আগের ঐশী ধর্মকে এত সম্মান করে না।

আল্লাহ তায়া’লার বিশেষ নেয়ামতের মধ্যে অন্যতম নেয়ামত হলো তিনি নবী রাসুলগণকে মানুষের মধ্য থেকেই পাঠিয়েছেন। আল্লাহ তায়া’লা বলেনঃ আপনার পূর্বেও আমি প্রত্যাদেশসহ মানবকেই তাদের প্রতি প্রেরণ করেছিলাম। (নাহলঃ ৪৩)

তারা স্বজাতির ভাষায় কথা বলেছেন, যাতে তাদের ভাষা স্বীয় সম্প্রদায়ের বোধগাম্য হয়, তাদের কথার অর্থ বুঝতে পারেন। আল্লাহ তায়া’লা বলেনঃ আমি সব পয়গম্বরকেই তাদের স্বজাতির ভাষাভাষী করেই প্রেরণ করেছি, যাতে তাদেরকে পরিষ্কার বোঝাতে পারে। অতঃপর আল্লাহ যাকে ইচ্ছা, পথঃভ্রষ্ট করেন এবং যাকে ইচ্ছা সৎপথ প্রদর্শন করেন। তিনি পরাক্রান্ত, প্রজ্ঞাময়। (ইবারাহীমঃ ৪)

নবী রাসূলদের পবিত্রতা ও পূর্ণতা

আম্বিয়া ও রাসুলগণ পূর্ণ জ্ঞান ও সুস্থ স্বভাব, সত্যবাদিতা, আমানতদারীতা ও মানবিক সব ধরণের ভ্রুটি থেকে মুক্ত ইত্যাদি গুনে গুণান্বিত ছিলেন। সে সব শারীরিক দোষত্রুটি থেকে মুক্ত ছিলেন যা মানুষের চোখে পড়ে ও সুরুচির পরিপন্থী। আল্লাহ তায়া’লা নিজেই তাদেরকে পবিত্র ও শ্রেষ্ট চরিত্রবান করেছেন। চারিত্রিক দিক থেকে তারা সবচেয়ে পরিপূর্ণ, অন্তরের দিকে সবচেয়ে পবিত্র ও সবচেয়ে সম্মানিত। আল্লাহ তায়া’লা তাদের মধ্যে উত্তম চরিত্রের সব গুন দান করেছেন। উত্তম গুনের যা কিছু আছে সবই দিয়েছেন, তিনি তাদের মাঝে দান করেছেন ধৈর্য্, জ্ঞান, উদারতা, সম্মান, দানশীলতা, বীরত্ব ও ন্যায়পরায়ণতা। যাতে এসব আখলাকের কারণে তারা নিজ জাতির কাছে আলাদা বৈশিষ্ট্যে পরিচিত হন। রাসুলগণ হলেন আল্লাহ তায়া’লার সর্বোত্তম সৃষ্টি, তিনি তাদেরকে নির্বাচিত করেছেন তার রিসালাত ও আমানত মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়ার জন্য। আল্লাহ তায়া’লা বলেনঃ আল্লাহ এ বিষয়ে সুপারিজ্ঞাত যে, কোথায় স্বীয় পয়গাম প্রেরণ করতে হবে। (আন’আমঃ ১২৪)

আল্লাহ তায়া’লা বলেনঃ নিঃসন্দেহে আল্লাহ আদম (আঃ) নূহ (আঃ)¬ ও ইব্রাহীম (আঃ) এর বংশধর এবং এমরানের খান্দানকে নির্বাচিত করেছেন। (আলে ইমরানঃ ৩৩)

আল্লাহ তায়া’লা ঈসা (আঃ) সম্পর্কে বলেনঃ যখন ফেরেশতাগণ বললো, হে মারইয়াম আল্লাহ তোমাকে তাঁর এক বানীর সুসংবাদ দিচ্ছেন, যার নাম হলো মসীহ-মারইয়াম-তনয় ঈসা, দুনিয়া ও আখেরাতে তিনি মহাসম্মানের অধিকারী এবং আল্লাহর ঘনিষ্ঠদের অন্তর্ভূক্ত। যখন তিনি মায়ের কোলে থাকবেন এবং পূর্ণ বয়স্ক হবেন তখন তিনি মানুষের সাথে কথা বলবেন। আর তিনি সৎকর্মশীলদের অন্তর্ভুক্ত হবেন। (আলে ইমরানঃ ৪৫-৪৬)

মুহাম্মদ (সাঃ) নবুয়্যাত প্রাপ্তির আগে নিজ জাতির নিকট “আল আমিন” উপাধিতে পরিচিত ছিলেন, আল্লাহ তায়া’লা তার গুন বর্ণনা করে বলেনঃ আপনি অবশ্যই মহান চরিত্রের অধিকারী। (কালমঃ ৪)

নবী রাসূলগণ মানবজাতির থেকেই

এসব নবী রাসুলগণ যদিও সর্বোত্তম গুনের অধিকারী ছিলেন কিন্তু তারা সকলেই মানুষ ছিলেন, মানুষের সব ধরণের স্বভাব ও বৈশিষ্ট্য তাদের মাঝে বিদ্যমান ছিল। তারা ক্ষুধার্ত হতেন, রোগাক্রান্ত হতেন, খেতেন ও ঘুমাতেন, বিবাহ করতেন ও মৃত্যুবরণ করেছেন। আল্লাহ তায়া’লা বলেনঃ আপনার পূর্বে আমি অনেক রসূল প্রেরণ করেছি এবং তাঁদেরকে পত্নী ও সন্তান-সন্ততি দিয়েছি। (রা’দঃ ৩৮)

আল্লাহ তায়া’লা আরো বলেনঃ নিশ্চয় তোমারও মৃত্যু হবে এবং তাদেরও মৃত্যু হবে। (যুমারঃ ৩০)

আল্লাহ তায়া’লা তাঁর রাসুল মুহাম্মদ (সাঃ) সম্পর্কে বলেনঃ আপনি অন্তরে এমন বিষয় গোপন করছিলেন, যা আল্লাহ পাক প্রকাশ করে দেবেন। (আহযাবঃ ৩৭)

এজন্যই তারা নির্যাতিত হয়েছেন, শহীদ হয়েছেন এমনকি নিজ দেশ থেকেও বিতাড়িত হয়েছেন। আল্লাহ তায়া’লা বলেনঃ আর কাফেরেরা যখন প্রতারণা করত আপনাকে বন্দী অথবা হত্যা করার উদ্দেশ্যে কিংবা আপনাকে বের করে দেয়ার জন্য তখন তারা যেমন ছলনা করত তেমনি, আল্লাহও ছলনা করতেন। বস্তুতঃ আল্লাহর ছলনা সবচেয়ে উত্তম। (আনফালঃ ৩০)

কিন্তু দুনিয়া ও আখেরাতের শেষ পরিণাম, সাহায্য ও বিজয় তাদেরই হয়েছে।




Tags: