ইহাই একমাত্র পথ : হে সুখ-সৌভাগ্যের অনুসন্ধানী!!

ইহাই একমাত্র পথ : হে সুখ-সৌভাগ্যের অনুসন্ধানী!!

ইহাই একমাত্র পথ : হে সুখ-সৌভাগ্যের অনুসন্ধানী!!

মানুষের দুর্বলতা ও অভাব

$Jeffrey_Lang.jpg*

জেফরি ল্যাং

মার্কিন গণিতবিদ
আমি নিজের সম্পর্কে যা জানি কোরআন আমার সম্পর্কে তার অধিক জানে
“আল কোরআন আমাকে খুবই পুলকিত করেছে। আমার অন্তরকে জয় করে নিয়েছে, আমাকে আল্লাহর নিকট আত্মসমর্পন করেছে। কোরআন পাঠককে সর্বোচ্চ মুহুর্তে নিয়ে যায়, তখন তার সামনে একা একা তার স্রষ্টার সামনে দন্ডায়মান হওয়াকে উদ্ভাসিত করে। কেউ কোরানকে সত্যিকারে গ্রহণ করতে চাইলে ইহাকে সাধারণভাবে পড়লে হবে না। ইহা গভীরভাবে পড়লে পাঠককে এমন জায়গায় নিয়ে যাবে মনে হবে তার উপর কোরানের অধিকার রয়েছে! ইহা তোমার সাথে তর্ক বিতর্ক করবে, তোমার সমালোচনা করবে, তোমাকে লজ্জায় ফেলে দিবে আবার কখনও তোমাকে চ্যালেঞ্জ করবে। আমি অন্য দলের অন্তর্ভুক্ত ছিলাম, আমার নিকট স্পষ্ট মনে হলো যে, এই কোরানের অবতীর্ণকারী আমার সম্পর্কে আমার চেয়ে অধিক জানেন। আমার চিন্তা ভাবনার উপর কোরআন সর্বদা জয় লাভ করত। কোরআন আমার জিজ্ঞাসাবলীকে সম্বোধন করত...... প্রতি রাতে আমি আমার প্রশ্ন ও আপত্তি ঠিক করতাম, পরের দিন আমার প্রশ্নের জবাব পেয়ে যেতাম... আমি কোরানের পাতায় পাতায় নিজেকে সম্মুখীন করেছি”।

তোমার এ ধরায় অস্তিত্বের পূর্বে তুমি অস্তিত্বহীন ছিলে, আল্লাহ তায়া’লা বলেছেনঃ মানুষ কি স্মরণ করে না যে, আমি তাকে ইতি পূর্বে সৃষ্টি করেছি এবং সে তখন কিছুই ছিল না। (সূরা মারইয়ামঃ ৬৭)

অতপর তিনি মাটি থেকে তোমাকে সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর শুক্রাণু থেকে। অতঃপর তোমাকে শ্রবণ ও দৃষ্টিশক্তিসম্পন্ন করেছেন। আল্লাহ তায়া’লা বলেনঃ মানুষের উপর এমন কিছু সময় অতিবাহিত হয়েছে যখন সে উল্লেখযোগ্য কিছু ছিল না। আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি মিশ্র শুক্রবিন্দু থেকে,এভাবে যে, তাকে পরীক্ষা করব অতঃপর তাকে করে দিয়েছি শ্রবণ ও দৃষ্টিশক্তিসম্পন্ন। (সূরা দাহরঃ ১-২)

অতঃপর, দুর্বল থেকে আস্তে আস্তে শক্তিশালী হলো, কিন্তু তোমার শেষ গন্তব্য হলো দুর্বল হওয়াই। আল্লাহ তায়া’লা বলেনঃ আল্লাহ তিনি দূর্বল অবস্থায় তোমাদের সৃষ্টি করেন অতঃপর দূর্বলতার পর শক্তিদান করেন, অতঃপর শক্তির পর দেন দুর্বলতা ও বার্ধক্য। তিনি যা ইচ্ছা সৃষ্টি করেন এবং তিনি সর্বজ্ঞ,সর্বশক্তিমান। (সূরা রূমঃ ৫৪)

অবশেষে তোমার অবসান নিশ্চিত মৃত্যু।

তুমি জীবনের ধাপগুলোতে দূর্বল থেকে আরো দূর্বল হবে, নিজের থেকে কোন ক্ষতি দূর করতে পারবেন না। আবার নিজের জন্য কোন উপকারও বয়ে আনতে পারবেনা, তবে হ্যাঁ আল্লাহ তায়া’লার অনুগ্রহে ও শক্তিতে পারবে। তুমি স্বভাবগতভাবেই ফকির ও অভাবী। দুনিয়াতে জীবন যাপনের জন্য কত কিছুই তুমি চাও, যা তোমার হাতের নাগালের বাইরে। কখনও কিছু লাভ করতে সক্ষম হও, আবার কখনও তোমার থেকে ছুটে যায়। কত উপকারী বস্তু তুমি অর্জন করতে চাও, তা কখনও অর্জন করছ, আবার কখনও ব্যর্থ হচ্ছো। কত ক্ষতিকারক জিনিস তোমার ক্ষতি করছে, তোমার আশা ভঙ্গ করছে, তোমার প্রচেষ্টা নস্যাৎ করে দিচ্ছে, তোমার জন্য বিপদ ও দুর্যোগ বয়ে আনছে, তুমি এগুলো নিজের থেকে দূর করতে চেষ্টা করছো, কখনও সক্ষম হচ্ছো, আবার কখনও অক্ষম হয়ে পড়ছো।

তুমি কি নিজের অভাব এবং আল্লাহর নিকট তোমার মুখাপেক্ষীতাঅনুভব করনি? আল্লাহ তায়া’লা বলেনঃ হে মানুষ, তোমরা আল্লাহর গলগ্রহ। আর আল্লাহ; তিনি অভাবমুক্ত,প্রশংসিত। (সূরা ফাতিরঃ ১৫)

তোমাকে দুর্বলতার ভাইরাসে আক্রান্ত করে, যা তুমি খালি চোখে দেখতে পাও না। তখন তা তোমাকে মরণব্যাধিতে ধরাশায়ী করে, তুমি তা প্রতিহত করতে পারো না। আবার তুমি চিকিৎসা করতে তোমার মতই এক দূর্বলের নিকট যাও, ফলে কখনও তার দেয়া ঔষধে কাজ করে, আবার কখনও ডাক্তার অক্ষম হয়। এতে ডাক্তার ও রোগী দুজনেই হয়রান হয়ে পড়ে... হে আদম সন্তান! তুমি কতই না দূর্বল!! যদি মাছি তোমার থেকে কিছু নিয়ে যায় তা পুনরুদ্ধার করতে পারো না। আল্লাহ তায়া’লা বলেনঃ হে লোক সকল! একটি উপমা বর্ণনা করা হলো, অতএব তোমরা তা মনোযোগ দিয়ে শোন; তোমরা আল্লাহর পরিবর্তে যাদের পূজা কর, তারা কখনও একটি মাছি সৃষ্টি করতে পারবে না, যদিও তারা সকলে একত্রিত হয়। আর মাছি যদি তাদের কাছ থেকে কোন কিছু ছিনিয়ে নেয়, তবে তারা তার কাছ থেকে তা উদ্ধার করতে পারবে না, প্রার্থনাকারী ও যার কাছে প্রার্থনা করা হয়, উভয়েই শক্তিহীন। (সূরা হাজ্বঃ ৭৩)

মানুষের দুর্বলতা আল্লাহর রহমত

যখন মাছির থেকেই কিছু রক্ষা করতে পারো না, তাহলে তুমি নিজে কি পার?! তোমার ভাগ্য আল্লাহর হাতে, তোমার জীবনও তারই হাতে। তোমার অন্তর দয়াময় আল্লাহ তায়া’লার কুদরতী হাতের দু’আঙ্গুলে, তিনি যখন যেভাবে ইচ্ছা সেভাবেই পরিবর্তন করেন। তোমার জীবন-মৃত্যু, সুখ-দুঃখ আল্লাহর হাতে, তোমার হাটাচলা, স্থীরতা, কথাবার্তা আল্লাহর অনুমতি ও ইচ্ছায় হয়ে থাকে, তার অনুমতি ছাড়া বিন্দুমাত্রও নড়াচড়া করতে পারনা। তাঁর ইচ্ছা ছাড়া কোন কাজই করতে পারনা। যদি তোমার নিজের ব্যাপার নিজের কাছেই ন্যস্ত করা হতো, তবে অক্ষমতা, দূর্বলতা, সীমালঙ্ঘন, কলুষতা এবং পাপ ছাড়া কিছুই হতনা। আর যদি তুমি ছাড়া অন্য কারো কাছে ন্যস্ত করা হতো, তবে এমন একজনের কাছে ন্যস্ত হতো যে নিজের কোন ক্ষতি, উপকার, জীবন, মৃত্যু ও পুনরুত্থান কিছুই করতে পারেনা। অতএব তুমি আল্লাহর থেকে এক মুহুর্তও অমুখাপেক্ষী হতে পারনা। বরং তুমি সর্বদা প্রকাশ্যে ও অপ্রকাশ্যে তাঁরই মুখাপেক্ষী। তোমার সর্বাংগে তাঁর নিয়ামত। সব সময় তাঁর নিকট তোমার প্রয়োজন থাকা সত্বেও তুমি অন্যায়, কুফুরী করে বেড়াচ্ছ। তুমি তাকে ভুলে গেছ, অথচ তোমার প্রত্যাবর্তন তাঁরই নিকট, তোমার অবস্থান তাঁরই হাতের মুঠোয়।

হে মানব! তোমার দূর্বলতা, অক্ষমতার কারণে আল্লাহ তায়া’লা তোমার বোঝা হালকা করতে চান। আল্লাহ তায়া’লা বলেনঃ আল্লাহ তোমাদের বোঝা হালকা করতে চান। মানুষ দুর্বল সৃজিত হয়েছে। (সূরা নিসাঃ ২৮)

তিনি রাসুলগণকে প্রেরণ করেছেন, কিতাব অবতীর্ণ করেছেন, শরিয়ত প্রবর্তন করেছেন, তাদের সম্মুখে সরল সঠিক পথ দেখিয়ে দিয়েছেন, এ জন্য অসংখ্য দলিল প্রমাণ ও নিদর্শন পেশ করেছেন, যাতে এ সব কিছু তাঁর একত্ববাদ, প্রতিপালকত্ব ও খোদায়ীত্বের দলিল প্রমাণ হয়। এতদ্বসত্বেও কিছু মানুষ সত্য ছেড়ে বাতিলের দিকে ধাবিত হচ্ছে, আল্লাহকে ছেড়ে শয়তানকে অভিভাবক হিসেবে গ্রহণ করেছে, মিথ্যা নিয়ে তর্কে লিপ্ত হয়েছে। আল্লাহ তায়া’লা বলেনঃ নিশ্চয় আমি এ কোরআনে মানুষকে নানাভাবে বিভিন্ন উপমার দ্বারা আমার বাণী বুঝিয়েছি। মানুষ সব বস্তু থেকে অধিক তর্কপ্রিয়। (সূরা কাহফঃ ৫৪)

তোমার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আল্লাহর সে সব নিয়ামতের কথা তুমি কি ভুলে গেছ?! নাকি তুমি ভুলে গেছ যে, তুমি একফোঁটা নাপাক পানি থেকে সৃষ্টি হয়েছ? তোমার গন্তব্য হলো কবরে, সেখান থেকে স্থায়ী বাসস্থান হবে জান্নাতে বা জাহান্নামে! আল্লাহ তায়া’লা বলেনঃ মানুষ কি দেখে না যে, আমি তাকে সৃষ্টি করেছি বীর্য থেকে? অতঃপর তখনই সে হয়ে গেল প্রকাশ্য বাকবিতন্ডাকারী। সে আমার সম্পর্কে এক অদ্ভূত কথা বর্ণনা করে, অথচ সে নিজের সৃষ্টি ভুলে যায়। সে বলে কে জীবিত করবে অস্থিসমূহকে যখন সেগুলো পচে গলে যাবে? বলুন, যিনি প্রথমবার সেগুলোকে সৃষ্টি করেছেন, তিনিই জীবিত করবেন। তিনি সর্বপ্রকার সৃষ্টি সম্পর্কে সম্যক অবগত। (সূরা ইয়াসিনঃ ৭৯)

আল্লাহ তায়া’লা বলেনঃ হে মানুষ, কিসে তোমাকে তোমার মহামহিম পালনকর্তা সম্পর্কে বিভ্রান্ত করল? যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর তোমাকে সুবিন্যস্ত করেছেন এবং সুষম করেছেন। (সূরা ইনফিতারঃ ৬-৭)

হে মানব! কেন তুমি আল্লাহর তাওহীদের স্বাদ ও তাঁকে সম্মান করার স্বাদ থেকে নিজেকে বিরত রাখছ...মোনাজাতরত হয়ে আল্লাহর সম্মুখে দাঁড়িয়ে থাকার স্বাদ; যাতে তিনি তোমার দরিদ্রতা থেকে মুক্ত করেন, রোগ থেকে আরোগ্য করেন, বিপদ থেকে রক্ষা করেন, গুনাহ মাফ করেন, ক্ষতি দূর করেন, নির্যাতিত হলে সাহায্য করেন, দিশেহারা বা পথভ্রষ্ট হলে সঠিক পথের সন্ধান দেন, যা জান না তা শিখিয়ে দেন, ভয় ভীতিতে নিরাপত্তা দেন, দূর্বলাবস্থায় দয়া করেন, শত্রু থেকে মুক্তি দেন এবং তোমার রিজিকের ব্যবস্থা করেন।

সর্বশ্রেষ্ঠ নিয়ামত

হে মানব! মানুষের উপর আল্লাহর সবচেয়ে বড় নিয়ামত হলো -দ্বীনের নিয়ামতের পরে- বিবেকেরনিয়ামত, যাতে লাভ-ক্ষতির মাঝে পার্থক্য নিরূপণ করতে পারো, আল্লাহর আদেশ-নিষেধ বুঝতে পারো, তোমার সৃষ্টির সবচেয়ে বড় উদ্দেশ্যটি বুঝতে পারো; তা হলো এক আল্লাহর ইবাদত করা, যার কোন শরিক নেই। আল্লাহ তায়া’লা বলেনঃ তোমাদের কাছে যে সমস্ত নেয়ামত আছে, তা আল্লাহরই পক্ষ থেকে। অতঃপর তোমরা যখন দুঃখে-কষ্টে পতিত হও তখন তাঁরই নিকট কান্নাকাটি কর। এরপর যখন আল্লাহ তোমাদের কষ্ট দুরীভূত করে দেন, তখনই তোমাদের একদল স্বীয় পালনকর্তার সাথে অংশীদার সাব্যস্ত করতে থাকে। (সূরা নাহলঃ ৫৩-৫৪)

হে মানব! জ্ঞানীলোক উচ্চ মর্যাদাকারী বিষয়সমূহ ভালবাসে, আর অর্থহীন জিনিস অপছন্দ করে, সকল সৎ ও সম্মানিত আম্বিয়া ও সালেহীনদেরকে অনুসরণ করতে ভালবাসে, তাদের সাথে মিলিত হতে তাদের মন সর্বদা আকুল থাকে; যদিও তাদেরকে সামনে না পায়, এ সব কিছুর পথ হলো আল্লাহ তায়া’লা যেভাবে বর্ণনা করেছেনঃ বলুন, যদি তোমরা আল্লাহকে ভালবাস, তাহলে আমাকে অনুসরণ কর, যাতে আল্লাহ ও তোমাদিগকে ভালবাসেন এবং তোমাদিগকে তোমাদের পাপ মার্জনা করে দেন। আর আল্লাহ হলেন ক্ষমাকারী দয়ালু। (সূরা আলে ইমরানঃ ৩১)

মানুষ যখন এ সব ভাল কাজ সম্পন্ন করবে আল্লাহ তায়া’লা তাদেরকে নবী, রাসুল, শহীদ ও সৎলোকদের সঙ্গী করবেন। আল্লাহ তায়া’লা বলেনঃ আর যে কেউ আল্লাহর হুকুম এবং তাঁর রসূলের হুকুম মান্য করবে, তাহলে যাঁদের প্রতি আল্লাহ নেয়ামত দান করেছেন, সে তাঁদের সঙ্গী হবে। তাঁরা হলেন নবী, ছিদ্দীক, শহীদ ও সৎকর্মশীল ব্যক্তিবর্গ। আর তাদের সান্নিধ্যই হল উত্তম। (সূরা নিসাঃ ৬৯)

ভাবো...... চিন্তা কর

হে মানব! তোমাকে উপদেশ দিচ্ছি যে, একাকী বসে তোমার কাছে যে সত্য এসেছে তা নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করো, দলিল প্রমাণ দেখ, সুস্পষ্ট প্রমাণের বিষয়ে গবেষণা করো, এরপর, যদি দেখ ইহা সত্য তবে তাড়াতাড়ি ইহার অনুসরণ করো, তখন তুমি কারো বন্ধুত্ব বা কোন অভ্যাসের পিছে পড়ে থেকোনা। জেনে রাখ তোমার নিজের জীবনের মূল্য তোমার আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব, উত্তরসূরীদের চেয়ে অনেক বেশী। আল্লাহ তায়া’লা কাফিরদেরকে এ সম্পর্কে উপদেশ দিয়েছেন, তাদের এ ব্যাপারে আফসোস করেছেন। আল্লাহ তায়া’লা বলেনঃ বলুন, আমি তোমাদেরকে একটি বিষয়ে উপদেশ দিচ্ছিঃ তোমরা আল্লাহর নামে এক একজন করে ও দু, দু জন করে দাঁড়াও, অতঃপর চিন্তা-ভাবনা কর-তোমাদের সঙ্গীর মধ্যে কোন উম্মাদনা নেই। তিনি তো আসন্ন কাঠোর শাস্তি সম্পর্কে তোমাদেরকে সতর্ক করেন মাত্র। (সূরা সাবাঃ ৪৬)

হে মানব! তুমি যদি ঈমান আন তবে কিছুই ক্ষতি হবেনা। আল্লাহ তায়া’লা বলেনঃ আর কিই বা ক্ষতি হত তাদের যদি তারা ঈমান আনত আল্লাহর উপর কেয়ামত দিবসের উপর এবং যদি ব্যয় করত আল্লাহ প্রদত্ত রিযিক থেকে! অথচ আল্লাহ, তাদের ব্যাপারে যথার্থভাবেই অবগত। (সূরা নিসাঃ ৩৯)

অর্থাৎ তারা যদি আল্লাহ যা নাযিল করেছেন তার উপর ঈমান আনত, তবে তাদের কি ক্ষতি হত?! তাদের এমন কি ক্ষতি হত তারা যদি আখেরাতের দিবসে ভাল কাজের প্রতিদানের আশায় আল্লাহর উপর ঈমান আনত?! তারা যদি আল্লাহর দেয়া রিজিক থেকে তাঁরই সন্তুষ্টির জন্য ব্যয় করত তাহলে তাদের কি ক্ষতি হত?! তিনি তাদের ভাল ও মন্দ নিয়াত সম্পর্কে জানেন। তিনি জানেন কে তাঁর তাওফিক পাওয়ার যোগ্য, ফলে তিনি তাকে তাওফিক দান করেন, তাকে সুপথ দেখান, যে কাজে তিনি সন্তুষ্ট সে সমস্ত ভাল কাজের তাওফিক দান করেন। তিনি আরো জানেন কে অপমান ও তাঁর দরজা হতে বিতাড়িত হওয়ার যোগ্য, যে দরজা হতে কোন ব্যক্তি বিতাড়িত হলে সে দুনিয়া ও আখেরাতে ক্ষতিগ্রস্থ ও নিরাশ হয়?!

তোমার ইসলাম গ্রহণ তোমার কাজের বা আল্লাহর হালাল জিনিস গ্রহণের মাঝে তোমার জন্য কোন বাঁধা নয়। বরং তুমি তাঁর সন্তুষ্টির লক্ষ্যে যে কাজই করো সে জন্য সাওয়াব পাবে, এমনকি যদি তাতে দুনিয়ার স্বার্থ লাভ, সম্পদ, প্রতিপত্তি বা সম্মান লাভ করো তাতেও সাওয়াব পাবে। বরং হালাল গ্রহণের মাধ্যমে হারাম থেকে বেঁচে থাকলেও সাওয়াব পাবে।

হে মানব! রাসুলগণ সত্য নিয়ে এসেছেন। তারা আল্লাহর বানী পৌঁছিয়েছেন, মানুষের আল্লাহর শরিয়াত জানা উচিত, যাতে এ দুনিয়ার জীবন দলিল প্রমাণের সাথে যাপন করতে পারে ও পরকালে সফলকামীদের অন্তর্ভুক্ত হয়। আল্লাহ তায়া’লা বলেনঃ হে মানবজাতি! তোমাদের পালনকর্তার যথার্থ বাণী নিয়ে তোমাদের নিকট রসূল এসেছেন, তোমরা তা মেনে নাও যাতে তোমাদের কল্যাণ হতে পারে। আর যদি তোমরা তা না মান, জেনে রাখ আসমানসমূহে ও যমীনে যা কিছু রয়েছে সে সবকিছুই আল্লাহর। আর আল্লাহ হচ্ছেন সর্বজ্ঞ, প্রাজ্ঞ। (সূরা নিসাঃ ১৭০)

আল্লাহ তায়া’লা বলেনঃ বলে দাও, হে মানবকুল, সত্য তোমাদের কাছে পৌঁছে গেছে তোমাদের পরওয়ারদেগারের তরফ থেকে। এমন যে কেউ পথে আসে সেপথ প্রাপ্ত হয় স্বীয় মঙ্গলের জন্য। আর যে বিভ্রান্ত ঘুরতে থাকে, সে স্বীয় অমঙ্গলের জন্য বিভ্রান্ত অবস্থায় ঘুরতে থাকবে। অনন্তর আমি তোমাদের উপর অধিকারী নই। (সূরা ইউনুসঃ ১০৮)

আল্লাহ তায়ালা বান্দাহর অমুখাপেক্ষী

$Naseem_Sousa.jpg*

নাসিম সোসা

ইরাকি ইহুদি অধ্যাপক
পাশ্চাত্য সভ্যতার গভীরতা
“কোন ব্যক্তি যদি গভীরভাবে পাশ্চাত্য সভ্যতার মাঝে প্রবেশ করে, এর শাখা-প্রশাখা গুলো যদি সে বুঝে, তাত্ত্বিকভাবে ও ব্যবহারিকভাবে সূক্ষ্মরূপে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে, তবে সে অবশ্যই তার মনের সুপ্ত শক্তির কারণে স্বীকার করতে বাধ্য যে, ইহা ইসলামী আক্বীদার ঝরনা থেকে তীব্রভাবে পিপাসা মিটিয়েছে”।

হে মানব! তুমি ইসলাম গ্রহণ করলে একমাত্র তুমিই লাভবান হবে। আর কুফুরী করলে তুমিই ক্ষতিগ্রস্থ হবে। আল্লাহ তায়া’লা বান্দাহ থেকে অমুখাপেক্ষী। অবাধ্য লোকের গুনাহ তাঁর কোন ক্ষতি করেনা বা অনুগত লোকের ভালকাজ তাঁর কোন উপকারে আসেনা। অতএব, তাঁর জ্ঞাতসারেই কেউ গুনাহগার হয়, আর তাঁর রহমতেই কেউ অনুগত হয়। আল্লাহ তায়া’লা বলেনঃ তোমাদের কাছে তোমাদের পালনকর্তার পক্ষ থেকে নিদর্শনাবলী এসে গেছে। অতএব, যে প্রত্যক্ষ করবে, সে নিজেরই উপকার করবে এবং যে অন্ধ হবে, সে নিজেরই ক্ষতি করবে। আমি তোমাদের পর্যবেক্ষক নই। (সূরা আন’আমঃ ১০৪)

নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মহান আল্লাহ তায়া’লা থেকে বর্ণনা করেছেন, আল্লাহ তায়া’লা বলেনঃ “হে আমার বান্দাহগণ! আমি জুলুম করাকে নিজের উপর হারাম করেছি, এবং তোমাদের জন্যেও এ কাজটি হারাম করেছি। অতএব, তোমরা একে অন্যের উপর জুলুম করোনা। হে আমার বান্দাহগণ! আমি যাকে হিদায়েত প্রদান করি সে ছাড়া তোমরা সকলেই পথভ্রষ্ট। কাজেই তোমরা আমার কাছে হিদায়েত চাও, আমি হিদায়েত দিবো। হে বান্দাগণ! আমি যাকে খাদ্য দান করি সে ছাড়া অন্যরা অভুক্ত থাকে। অতএব, তোমরা আমার কাছে খাদ্য চাও, আমি তোমাদেরকে খেতে দিবো। হে বান্দাহগণ! আমি যাকে পরিধান করাই সে ছাড়া অন্য সকলেই উলঙ্গ। অতএব, তোমরা আমার কাছে পোশাকের জন্য প্রার্থনা কর, আমি তোমাদেরকে পোশাক পরিচ্ছদ দান করবো। হে বান্দাহগণ! তোমরা দিনরাত গুনাহ কর, আর আমি সকল প্রকার গুনাহ ক্ষমা করি। অতএব, তোমরা আমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর, আমি তোমাদেরকে ক্ষমা করবো। হে আমার বান্দাহগণ! তোমরা আমার কোন অপকারও করতে পার না আর উপকারও করতে পার না। হে আমার বান্দাহগণ! তোমাদের আগের ও পরের, এবং জ্বীন ও মানব সকলেই যদি তোমাদের মাঝের সবচেয়ে বড় মুত্তাকীর হয়ে যায়- এতে আমার কোন রাজত্ব বাড়বে না। আর যদি তোমাদের আগের ও পরের লোকেরা এবং জ্বীন ও মানব সকলেই তোমাদের মাঝের সবচেয়ে বড় পাপাচারীর ন্যায় পাপাচারী হয়ে যায় তাতেও আমার সম্রাজ্যে কোন অনিষ্ট করতে পারবে না। হে আমার বান্দাহগণ! তোমাদের আগের ও পরের মানুষ ও জ্বীন সকলে যদি এক ময়দানে সম্মিলিত হয়ে আমার কাছে চাইতে থাকে এবং আমি তোমাদের প্রত্যেকের চাহিদা ও প্রার্থনা অনুযায়ী দিতে থাকি তাতে আমার কাছে যে ভান্ডার রয়েছে তা হতে যে পরিমান সম্পদ কমবে তার পরিমান হবে মহাসমুদ্রে একটি সুঁই ডুবিয়ে বের করে আনার অনুরূপ। হে আমার বান্দাহগণ! এ তো তোমাদেরই আমল । আমি তোমাদের জন্য তা হিসেব করে রেখেছি। অতঃপর, আমি তোমাদেরকে পুরোপুরিভাবে তোমাদের আমলের প্রতিদান দান করবো। অতএব, যে ভাল ফল পাবে সে যেন আল্লাহর প্রশংসা ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে। আর যে খারাপ প্রতিদান লাভ করে সে যেন এ জন্য নিজেকেই দায়ী ও অভিযুক্ত করে”। (মুসলিম শরিফ)

$Bernard_Shaw.jpg*

বার্নার্ড’শ

ইংরেজ লেখক
শান্তি ও সুখের ভিত্তিসমূহ
“বর্তমান ইউরোপ মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাহিস সালামের প্রজ্ঞা অনুধাবন করতে শুরু করেছে। তার দ্বীনের প্রতি আকৃষ্ট হতে লেগেছে। ইহা মধ্যযুগে ইউরোপের আরজীবদের দেয়া অভিযোগ থেকে ইসলামী আক্বীদাকে মুক্ত করতে শুরু করেছে। মুহাম্মদের দ্বীন যা নিরাপত্তা ও শান্তির উপর প্রতিষ্ঠিত ইহাই এক সময় ইউরোপের রাষ্ট্র ব্যবস্থা হবে। নানা দ্বিধা, সমস্যা ও সংকটের সমাধানে ইহার উপরই নির্ভর করবে”।

হে মানব! ইহাই একমাত্র পথ, দুনিয়া ও আখেরাতে সুখ শান্তির জন্য অন্য কোন পথ নাই। অন্যান্য পথ হলো দুঃখ, দুর্দশা, কষ্ট ও ক্ষতিকারক পথ। আল্লাহ তায়া’লা বলেনঃ তোমাদেরকে এ নির্দেশ দিয়েছেন, যেন তোমরা উপদেশ গ্রহণ কর। নিশ্চিত এটি আমার সরল পথ। অতএব, এ পথে চল এবং অন্যান্য পথে চলো না। তা হলে সেসব পথ তোমাদেরকে তাঁর পথ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিবে। তোমাদেরকে এ নির্দেশ দিয়েছেন, যাতে তোমরা সংযত হও। (সূরা আন’আমঃ ১৫৩)

সুতরাং যে শান্তির পথে চলবে সে সেখানে পৌঁছে যাবে, আর যে অন্য পথে চলবে সে শান্তির পথ থেকে বিছিন্ন হয়ে যাবে, আল্লাহর পথ থেকে দূরে সরে যাবে। সে কখনও সুখ শান্তি লাভ করতে পারবেনা।




Tags: