সদাচরণ এবং সৎকর্মের দিকে আহ্বানকারী হবে। আল্লাহ তায়া’লা বলেনঃ আপনি বলুনঃ এস, আমি তোমাদেরকে ঐসব বিষয় পাঠ করে শুনাই, যেগুলো তোমাদের প্রতিপালক তোমাদের জন্যে হারাম করেছেন। তাএই যে, আল্লাহর সাথে কোন কিছুকে অংশীদার করো না, পিতা-মাতার সাথে সদয় ব্যবহার করো স্বীয় সন্তানদেরকে দারিদ্রের কারণে হত্যা করো না, আমি তোমাদেরকে ও তাদেরকে আহার দেই, নির্লজ্জতার কাছেও যেয়ো না, প্রকাশ্য হোক কিংবা অপ্রকাশ্য, যাকে হত্যা করা আল্লাহ হারাম করেছেন, তাকে হত্যা করো না; কিন্তু ন্যায়ভাবে। তোমাদেরকে এ নির্দেশ দিয়েছেন, যেন তোমরা বুঝ। এতীমদের ধনসম্পদের কাছেও যেয়ো না; কিন্তু উত্তম পন্থায় যে পর্যন্ত সে বয়ঃপ্রাপ্ত না হয়। ওজন ও মাপ পূর্ণ কর ন্যায় সহকারে। আমি কাউকে তার সাধ্যের অতীত কষ্ট দেই না। যখন তোমরা কথা বল, তখন সুবিচার কর, যদিও সে আত্নীয়ও হয়। আল্লাহর অঙ্গীকার পূর্ণ কর। তোমাদেরকে এ নির্দেশ দিয়েছেন, যেন তোমরা উপদেশ গ্রহণ কর। নিশ্চিত এটি আমার সরল পথ। অতএব, এ পথে চল এবং অন্যান্য পথে চলো না। তা হলে সেসব পথ তোমাদেরকে তাঁর পথ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিবে। তোমাদেরকে এ নির্দেশ দিয়েছেন,যাতে তোমরা সংযত হও। (আন’আমঃ ১৫১-১৫৩)
আল্লাহ তায়া’লা আরো বলেনঃ আল্লাহ ন্যায়পরায়ণতা,সদাচরণ এবং আত্নীয়-স্বজনকে দান করার আদেশ দেন এবং তিনি অশ্লীলতা,অসঙ্গত কাজ এবং অবাধ্যতা করতে বারণ করেন। তিনি তোমাদের উপদেশ দেন যাতে তোমরা স্মরণ রাখ। (নাহলঃ ৯০)
অতএব যে সব ধর্ম মিথ্যাচার, হত্যা, জুলুম, চুরি, ডাকাতি, ধর্ষণ, অবাধ্যতা ইত্যাদির দিকে ডাকে তা কখনই ধর্ম হতে পারেনা।
মানুষের সাথে তার স্রষ্টার সম্পর্ক ও সৃষ্টির মাঝে পারস্পরিক সম্পর্ক গঠন করবে। আল্লাহ তায়া’লা বলেনঃ তোমরা আল্লাহকে ছেড়ে নিছক কতগুলো নামের এবাদত কর, সেগুলো তোমরা এবং তোমাদের বাপ-দাদারা সাব্যস্ত করে নিয়েছে। আল্লাহ এদের কোন প্রমাণ অবতীর্ণ করেননি। আল্লাহ ছাড়া কারও বিধান দেবার ক্ষমতা নেই। তিনি আদেশ দিয়েছেন যে,তিনি ব্যতীত অন্য কারও এবাদত করো না। এটাই সরল পথ। কিন্তু অধিকাংশ লোক তা জানে না। (ইউসুফঃ ৪০)
তাই সত্য ধর্ম স্রষ্টার প্রতি মানুষের দায়িত্ব ও কর্তব্য, এমনিভাবে সৃষ্টজগতের সাথে মানুষের সম্পর্ক গঠন নিয়ন্ত্রণ করবে। আল্লাহ তায়া’লা বলেনঃ আর উপাসনা কর আল্লাহর, শরীক করো না তাঁর সাথে অপর কাউকে। পিতা-মাতার সাথে সৎ ও সদয় ব্যবহার কর এবং নিকটাত্নীয়,এতীম-মিসকীন,প্রতিবেশী,অসহায় মুসাফির এবং নিজের দাস-দাসীর প্রতিও। (নিসাঃ ৩৬)
মানুষকে সম্মান ও মর্যাদা দিবে। জাতি, বর্ণ ও গোত্রভেদে কোন পার্থক্য করবেনা। সম্মান ও পার্থক্যের মাপকাঠি হবে মানুষের অর্জন ও তার কর্ম তথা জ্ঞান ও খোদাভীতি। আল্লাহ তায়া’লা বলেনঃ নিশ্চয় আমি আদম সন্তানকে মর্যাদা দান করেছি, আমি তাদেরকে স্থলে ও জলে চলাচলের বাহন দান করেছি। (বনী ইসরাইলঃ ৭০)
আল্লাহ তায়া’লা আরো বলেনঃ হে মানব,আমি তোমাদেরকে এক পুরুষ ও এক নারী থেকে সৃষ্টি করেছি এবং তোমাদেরকে বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে বিভক্ত করেছি, যাতে তোমরা পরস্পরে পরিচিতি হও। নিশ্চয় আল্লাহর কাছে সে-ই সর্বাধিক সম্ভ্রান্ত যে সর্বাধিক পরহেযগার। নিশ্চয় আল্লাহ সর্বজ্ঞ,সবকিছুর খবর রাখেন। (হুজুরাতঃ ১৩)
ধর্মটি সরল সঠিক পথ দেখাবে, যেপথে কোন বক্রতা নেই। এতে থাকবে মানুষের মুক্তি, ইহা হবে তাদের জন্য আলোকবর্তিকা ও পথপ্রদর্শক। জীন জাতি যখন কোরআন শ্রবণ করে পরস্পরে আলোচনা করতেছিল তাদের সম্পর্কে আল্লাহ তায়া’লা বলেনঃ তারা বলল,হে আমাদের সম্প্রদায়,আমরা এমন এক কিতাব শুনেছি, যা মূসার পর অবর্তীণ হয়েছে। এ কিতাব পূর্ববর্তী সব কিতাবের প্রত্যায়ন করে, সত্যধর্ম ও সরলপথের দিকে পরিচালিত করে। (আহকাফঃ ৩০)
আল্লাহ তায়া’লা আরো বলেনঃ আমি কোরআনে এমন বিষয় নাযিল করি যা রোগের সুচিকিৎসা এবং মুমিনের জন্য রহমত। গোনাহগারদের তো এতে শুধু ক্ষতিই বৃদ্ধি পায়। (বনী ইসরাইলঃ ৮২)
এ আলোকবর্তীকা ও পথ প্রদর্শক মানুষকে অন্ধকার ও পথভ্রষ্টতা থেকে আনুগত্যের আলো এবং দুনিয়া ও আখেরাতের শান্তির পথে নিয়ে যায়। আল্লাহ তায়া’লা বলেনঃ হে আহলে-কিতাবগণ! তোমাদের কাছে আমার রাসূল আগমন করেছেন! কিতাবের যেসব বিষয় তোমরা গোপন করতে, তিনি তার মধ্য থেকে অনেক বিষয় প্রকাশ করেন এবং অনেক বিষয় মার্জনা করেন। তোমাদের কাছে একটি উজ্জল জ্যোতি এসেছে এবং একটি সমুজ্জল গ্রন্থ। (মায়েদাঃ ১৫)
আল্লাহ তায়া’লা আরো বলেনঃ দ্বীনের ব্যাপারে কোন জবরদস্তি বা বাধ্য-বাধকতা নেই। নিঃসন্দেহে হেদায়াত গোমরাহী থেকে পৃথক হয়ে গেছে। এখন যারা গোমরাহকারী ‘তাগুত’দেরকে মানবে না এবং আল্লাহতে বিশ্বাস স্থাপন করবে, সে ধারণ করে নিয়েছে সুদৃঢ় হাতল যা ভাংবার নয়। আর আল্লাহ সবই শুনেন এবং জানেন। যারা ঈমান এনেছে, আল্লাহ তাদের অভিভাবক। তাদেরকে তিনি বের করে আনেন অন্ধকার থেকে আলোর দিকে। আর যারা কুফরী করে তাদের অভিভাবক হচ্ছে তাগুত। তারা তাদেরকে আলো থেকে বের করে অন্ধকারের দিকে নিয়ে যায়। এরাই হলো দোযখের অধিবাসী,চিরকাল তারা সেখানেই থাকবে। (বাকারাঃ ২৫৬-২৫৭)