আল্লাহ তায়া’লা মহাবিশ্বের সব কিছুকে যে মানুষের আয়ত্তাধীন করে দিয়েছেন, সব মাখলুকাতের উপর যাকে মর্যাদা দান করেছেন, তাদেরকে এক মহান উদ্দেশ্য ও হিকমতের জন্য সৃষ্টি করেছেন। তিনি অনর্থক কাজ হতে পুতঃপবিত্র। আল্লাহ তায়া’লা বলেনঃ নিশ্চয় আসমান ও যমীন সৃষ্টিতে এবং রাত্রি ও দিনের আবর্তনে নিদর্শন রয়েছে বোধ সম্পন্ন লোকদের জন্যে। যাঁরা দাঁড়িয়ে, বসে, ও শায়িত অবস্থায় আল্লাহকে স্মরণ করে এবং চিন্তা গবেষণা করে আসমান ও জমিন সৃষ্টির বিষযে, (তারা বলে) পরওয়ারদেগার! এসব তুমি অনর্থক সৃষ্টি করনি। সকল পবিত্রতা তোমারই, আমাদিগকে তুমি দোযখের শাস্তি থেকে বাঁচাও। (আলে ইমরানঃ ১৯০-১৯১)
আল্লাহ তায়া’লা দুষ্ট কাফিরদের ধারণা সম্পর্কে বলেনঃ আমি আসমান-যমীন ও এতদুভয়ের মধ্যবর্তী কোন কিছু অযথা সৃষ্টি করিনি। এটা কাফেরদের ধারণা। অতএব, কাফেরদের জন্যে রয়েছে দূর্ভোগ অর্থাৎ জাহান্নাম। (ছোয়াদঃ ২৭)
আল্লাহ তায়া’লা মানুষকে অন্যান্য জীব জানোয়ারের মত খাওয়া, পান করা ও বংশ বৃদ্ধির জন্য সৃষ্টি করেননি। তিনি মানুষকে সব প্রাণীর উপর মর্যাদা দিয়েছেন, কিন্তু অধিকাংশ মানুষ তার রবের সাথে কুফুরী করে। সে ভুলে যায় তার সৃষ্টির লক্ষ্য-উদ্দেশ্য। অস্বীকার করে তার সৃষ্টির প্রকৃত উদ্দেশ্য। যেন তার সব চিন্তাভাবনা দুনিয়ার ভোগবিলাস লাভের জন্য। এ সব লোকের জীবন হলো জন্তু জানোয়ারের জীবনের মতো, বরং সেগুলোর থেকেও অনেক অধম। আল্লাহ তায়া’লা বলেনঃ আর যারা কাফের, তারা ভোগ-বিলাসে মত্ত থাকে এবং চতুস্পদ জন্তুর মত আহার করে। তাদের বাসস্থান জাহান্নাম। (মুহাম্মদঃ ১২)
আল্লাহ তায়া’লা বলেনঃ আপনি ছেড়ে দিন তাদেরকে, খেয়ে নিক এবং ভোগ করে নিক এবং আশায় ব্যাপৃত থাকুক। অতি সত্বর তারা জেনে নেবে। (হিজরঃ ৩)
আল্লাহ তায়া’লা বলেনঃ আর আমি সৃষ্টি করেছি দোযখের জন্য বহু জ্বিন ও মানুষ। তাদের অন্তর রয়েছে, তার দ্বারা বিবেচনা করে না, তাদের চোখ রয়েছে, তার দ্বারা দেখে না, আর তাদের কান রয়েছে, তার দ্বারা শোনে না। তারা চতুষ্পদ জন্তুর মত; বরং তাদের চেয়েও নিকৃষ্টতর। তারাই হল গাফেল, শৈথিল্যপরায়ণ। (আ’রাফঃ ১৭৯)
সকল মানুষই জানে তার প্রত্যেকটা অঙ্গ প্রত্যঙ্গ এক একটা হিকমতের জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে। চক্ষু দেখার জন্য, কান শুনার জন্য...এভাবে সব অঙ্গ প্রত্যঙ্গ। এটা কি যুক্তিসঙ্গত হতে পারে যে, তার সকল অঙ্গ প্রত্যঙ্গ হিকমতের জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে আর তাকে নিরর্থক সৃষ্টি করা হয়েছে?! অথবা সে তার স্রষ্টার ডাকে সাড়া দিতে রাজী নয় যখন তিনি তাকে তার সৃষ্টির উদ্দেশ্য সম্পর্কে অবহিত করেছেন?!
তাহলে আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে কেন সৃষ্টি করয়েছেন? কেন আমাদেরকে সম্মানিত করেছেন? কেন পৃথিবীর সব কিছু আমাদের আয়াত্ত্বাধীন করে দেয়া হয়েছে? আল্লাহ তায়া’লা এ ব্যাপারে বলেনঃ আমার এবাদত করার জন্যই আমি মানব ও জিন জাতি সৃষ্টি করেছি। (জারিয়াতঃ ৫৬)
আল্লাহ তায়া’লা বলেনঃ পূণ্যময় তিনি, যাঁর হাতে রাজত্ব। তিনি সবকিছুর উপর সর্বশক্তিমান। যিনি সৃষ্টি করেছেন মরণ ও জীবন, যাতে তোমাদেরকে পরীক্ষা করেন-কে তোমাদের মধ্যে কর্মে শ্রেষ্ঠ? তিনি পরাক্রমশালী, ক্ষমাময়। (মুলকঃ ১-২)
জ্ঞানীদের নিকট একথা স্পষ্ট যে, যিনি যে জিনিস তৈরি করেন তিনি উক্ত জিনিসের হিকমত সম্পর্কে সবচেয়ে বেশী জ্ঞাত থাকেন। আল্লাহ পাক সুমহান। তিনি মানবকে সৃষ্টি করেছেন, তিনিই ভাল জানেন তাদের সৃষ্টির রহস্য সম্পর্কে। শুধু নামাজ রোজা ছাড়াও ইবাদতের ব্যাপক অর্থ রয়েছে। বরং তাতে সমস্ত পৃথিবীর আবাদও শামিল। আল্লাহ তায়া’লা বলেনঃ তিনিই যমীন হতে তোমাদেরকে পয়দা করেছেন, তন্মধ্যে তোমাদেরকে বসতি দান করেছেন। অতএব; তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর অতঃপর তাঁরই দিকে ফিরে চল। (হুদঃ ৬১)
মানুষের পুরো জীবনটাও ইবাদতের মধ্যে শামিল। আল্লাহ তায়া’লা বলেনঃ আপনি বলুনঃ আমার নামায, আমার কোরবাণী এবং আমার জীবন ও মরন বিশ্ব-প্রতিপালক আল্লাহরই জন্যে। তাঁর কোন অংশীদার নেই। আমি তাই আদিষ্ট হয়েছি এবং আমি প্রথম আনুগত্যশীল। (আনআ’মঃ ১৬২-১৬৩)
পুরো জাহান যখন তোমার জন্য আয়াত্ত্বাধীন করে দেয়া হলো, যখন তোমার সামনে সব ধরনের দলিল প্রমাণ পেশ করা হলো যে, এক আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ নেই, যখন তুমি জানতে পারলে যে আসমান জমিন সৃষ্টির চেয়ে মৃত্যুর পরে তোমাকে পুনঃরায় সৃষ্টি করা আরো সহজ, যখন তুমি জানতে পারলে আল্লাহ তায়া’লা তোমাকে উত্তম আকৃতিতে সৃষ্টি করেছেন, সর্বোচ্চ সম্মান দিয়েছেন, তোমার জন্য মহাবিশ্বকে আয়াত্তাধীন করে দিয়েছেন, তারপরেও তুমি তোমার মহামহিম পালনকর্তা সম্পর্কে বিভ্রান্ত কেন? আল্লাহ তায়া’লা বলেনঃ হে মানুষ, কিসে তোমাকে তোমার মহামহিম পালনকর্তা সম্পর্কে বিভ্রান্ত করল? যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর তোমাকে সুবিন্যস্ত করেছেন এবং সুষম করেছেন। যিনি তোমাকে তাঁর ইচ্ছামত আকৃতিতে গঠন করেছেন। (ইনফিতারঃ ৬-৮(
তোমাকে সর্বশেষে তোমার পালনকর্তার সাথে মিলিত হতে হবে। আল্লাহ তায়া’লা বলেনঃ হে মানুষ, তোমাকে তোমরা পালনকর্তা পর্যন্ত পৌছতে কষ্ট স্বীকার করতে হবে, অতঃপর তার সাক্ষাৎ ঘটবে। যাকে তার আমলনামা ডান হাতে দেয়া হবে। তার হিসাব-নিকাশ সহজে হয়ে যাবে। এবং সে তার পরিবার-পরিজনের কাছে হৃষ্টচিত্তে ফিরে যাবে। এবং যাকে তার আমলনামা পিঠের পশ্চাদ্দিক থেকে দেয়া, হবে, সে মৃত্যুকে আহবান করবে, এবং জাহান্নামে প্রবেশ করবে। (ইনশিকাকঃ ৬-১২)
আল্লাহ তোমাকে যে উদ্দেশ্যে সৃষ্টি করেছেন সে উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করে দুনিয়া ও আখেরাতে শান্তির পথে চলো। এতে তোমার জীবন সুখী হবে, শান্তি পাবে এবং মৃত্যুর পরে পালনকর্তার সাথে সাক্ষাতের মুহুর্তে সুখী হবে। এমনিভাবে সারা জাহান তার রবের ইবাদত করে। সব সৃষ্টজীব আল্লাহর তাছবীহ ও প্রশংসা করে। আল্লাহ তায়া’লা বলেনঃ রাজ্যাধিপতি, পবিত্র, পরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাময় আল্লাহর পবিত্রতা ঘোষণা করে, যা কিছু আছে নভোমন্ডলে ও যা কিছু আছে ভূমন্ডলে। (জুমআঃ ১)
তাঁর মহিমায় সবাই সিজদা করে। আল্লাহ তায়া’লা বলেনঃ তুমি কি দেখনি যে, আল্লাহকে সেজদা করে যা কিছু আছে নভোমন্ডলে, যা কিছু আছে ভুমন্ডলে, সূর্য, চন্দ্র, তারকারাজি পর্বতরাজি বৃক্ষলতা, জীবজন্তু এবং অনেক মানুষ। আবার অনেকের উপর অবধারিত হয়েছে শাস্তি। (হাজ্বঃ ১৮)
বরং এ জাহানের সবাই তাদের অবস্থানুযায়ী তাদের রবের সালাতও তাছবীহ পড়ে। আল্লাহ তায়া’লা বলেনঃ তুমি কি দেখ না যে, নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলে যারা আছে, তারা এবং উড়ন্ত পক্ষীকুল তাদের পাখা বিস্তার করতঃ আল্লাহর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে? প্রত্যেকেই তার যোগ্য এবাদত এবং পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণার পদ্ধতি জানে। (নুরঃ ৪১)
তাহলে তোমার কি উচিত হবে এ মহিমাম্বিত দৃশ্য থেকে আলাদা থাকা? এতে তুমি অপমানিত হবে। আল্লাহ তায়া’লা বলেনঃ তুমি কি দেখনি যে, আল্লাহকে সেজদা করে যা কিছু আছে নভোমন্ডলে, যা কিছু আছে ভুমন্ডলে, সূর্য, চন্দ্র, তারকারাজি পর্বতরাজি বৃক্ষলতা, জীবজন্তু এবং অনেক মানুষ। আবার অনেকের উপর অবধারিত হয়েছে শাস্তি। আল্লাহ যাকে ইচ্ছা লাঞ্ছিত করেন, তাকে কেউ সম্মান দিতে পারে না। আল্লাহ যা ইচ্ছা তাই করেন। (হাজ্বঃ ১৮)