মূল উৎস হিসেবে ধর্মকে দু’ভাগে ভাগ করা যায়ঃ প্রথমটিঃ দুনিয়ার মানব রচিত ধর্ম যা আসমানী ধর্ম নয়। যার নিয়মকানুন নির্ধারণ করেছে মানুষ, মানুষের হাতেই তা উন্নতি লাভ করেছে। ইহা আল্লাহর তরফ থেকে অবতীর্ণ নয়। যেমনঃ বৌদ্ধ ধর্ম, হিন্দু ধর্ম, মাজুসি ও পৌত্তলিক ধর্ম। এ সব ধর্ম সত্য ধর্মের থেকে অনেক দূরে, তাদের খেয়াল-খুশী অনুযায়ী এ সব ধর্মের আবিষ্কার হয়েছে। আল্লাহ তায়া’লা বলেনঃ আপনি কি তার প্রতি লক্ষ্য করেছেন, যে তার খেয়াল-খুশীকে স্বীয় উপাস্য স্থির করেছে? আল্লাহ জেনে শুনে তাকে পথভ্রষ্ট করেছেন, তার কান ও অন্তরে মহর এঁটে দিয়েছেন এবং তার চোখের উপর রেখেছেন পর্দা। অতএব, আল্লাহর পর কে তাকে পথ প্রদর্শন করবে? তোমরা কি চিন্তাভাবনা কর না? (জাসিয়াঃ ২৩)
এ সব ধর্ম আল্লাহ প্রদত্ত ধর্ম নয়। বরং মানুষের খেয়াল খুশীর ধর্ম। এজন্যই এসব ধর্ম অনেক কুসংস্কার, ভণ্ডামি, শ্রেণী বিন্যাস ও অসঙ্গতিতে ভরপুর। আল্লাহ তায়া’লা বলেনঃ পক্ষান্তরে এটা যদি আল্লাহ ব্যতীত অপর কারও পক্ষ থেকে হত, তবে এতো অবশ্যই বহু বৈপরিত্য দেখতে পেত। (নিসাঃ ৮২)
দ্বিতীয়টিঃ আল্লাহর তরফ থেকে প্রেরিত আসমানী ধর্ম। যেমনঃ ইহুদী, খৃস্টান, ও ইসলাম ধর্ম। এ সব ধর্মাবলম্বীদের জন্য আল্লাহ তায়া’লা শরিয়ত প্রেরণ করেছেন এবং উক্ত শরিয়তকে তাদের জন্য মনোনীত করেছেন। আল্লাহ তায়া’লা বলেনঃ তিনি তোমাদের জন্যে দ্বীনের ক্ষেত্রে সে পথই নিধারিত করেছেন, যার আদেশ দিয়েছিলেন নূহকে, যা আমি প্রত্যাদেশ করেছি আপনার প্রতি এবং যার আদেশ দিয়েছিলাম ইব্রাহীম, মূসা ও ঈসাকে এই মর্মে যে, তোমরা দ্বীনকে প্রতিষ্ঠিত কর এবং তাতে অনৈক্য সৃষ্টি করো না। আপনি মূশরেকদেরকে যে বিষয়ের প্রতি আমন্ত্রণ জানান, তা তাদের কাছে দুঃসাধ্য বলে মনে হয়। আল্লাহ যাকে ইচ্ছা মনোনীত করেন এবং যে তাঁর অভিমুখী হয়, তাকে পথ প্রদর্শন করেন। (শুরাঃ ১৩)
সন্দেহাতীতভাবে বলা যায় যে, পৃথিবীতে মানব রচিত ধর্মগুলো নানা চিন্তা ভাবনা ও মানুষের অনেক অভিজ্ঞতা নিয়ে গঠিত, যা মানুষের ইচ্ছামত যা তাদের উপযোগী তা প্রবর্তন করে থাকে। কিছুদিন অতিবাহিত হলে যখন দেখে এ সব কিছু মানুষের জন্য উপযোগী নয় তখন তারা ইহার উন্নয়ন করতে চেষ্টা করে। এভাবেই তারা সর্বদা দিশেহারা ও অস্থিরতায় থাকে । এসব শরিয়তের বৈশিষ্ট্য হলোঃ
শিরকঃ প্রত্যেক দিনই তারা নতুন নতুন ইলাহ তৈরি করে। তাদের ইলাহগণ নিজেদের হাতের তৈরি। তারা লক্ষ্য ও চিন্তা করেনা যে আল্লাহর সাথে কোন ইলাহ থাকা অসম্ভব, কেননা এতে উভয়ের মাঝে দ্বন্ধ অনিবার্য। আল্লাহ তায়া’লা বলেনঃ আল্লাহ কোন সন্তান গ্রহণ করেননি এবং তাঁর সাথে কোন মাবুদ নেই। থাকলে প্রত্যেক মাবুদ নিজ নিজ সৃষ্টি নিয়ে চলে যেত এবং একজন অন্যজনের উপর প্রবল হয়ে যেত। তারা যা বলে, তা থেকে আল্লাহ পবিত্র। তিনি দৃশ্য ও অদৃশ্যের জ্ঞানী। তারা শরীক করে, তিনি তা থেকে উর্ধ্বে। (মু’মিনুনঃ ৯১-৯২)
শ্রেণী বিন্যাসঃ যে সব ধর্ম আসমানী নয় তা মানুষের মাঝে অনেক শ্রেণী ও স্তর করে থাকে। কেননা ইহার প্রবর্তকেরা নিজেদের জন্য এমন কিছু বৈশিষ্ট্য বানায় যা অন্যদের মাঝে নেই। যাতে তাদের উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করতে পারে ও অন্যরা তাদের উপসনা করে। আল্লাহ তায়া’লা বলেনঃ হে মানব, আমি তোমাদেরকে এক পুরুষ ও এক নারী থেকে সৃষ্টি করেছি এবং তোমাদেরকে বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে বিভক্ত করেছি, যাতে তোমরা পরস্পরে পরিচিতি হও। নিশ্চয় আল্লাহর কাছে সে-ই সর্বাধিক সম্ভ্রান্ত যে সর্বাধিক পরহেযগার। নিশ্চয় আল্লাহ সর্বজ্ঞ,সবকিছুর খবর রাখেন। (হুজুরাতঃ ১৩)
আল্লাহ তায়া’লা কারো দিকে উপহাস ও অবজ্ঞার দৃষ্টিতে তাকাতে নিষেধ করেছেন। আল্লাহ তায়া’লা বলেনঃ কেউ যেন অপর কাউকে উপহাস না করে। কেননা, সে উপহাসকারী অপেক্ষা উত্তম হতে পারে। (হুজুরাতঃ ১১)
এজন্যই আল্লাহর কাছে সাদা কালো, জাতি উপজাতি, গোত্র ইত্যাদির কোন মূল্য নেই, অন্যদিকে মানব রচিত ধর্মগুলোতে ভয়ানক শ্রেণী বিন্যাস দেখা যায়।
স্বভাবজাতের বিপরীত হওয়াঃ মানব রচিত ধর্মগুলো স্বাভাবিক স্বভাবের বিপরীত হবে। মানুষকে সেসব কাজ করতে বাধ্য করবে যা তাদের করা সমূচীন নয়। স্বাভাবিক স্বভাব ও সুস্থ বিবেকের বৈপরিত্যে অনেক কাজ করতে বলা হবে। এর অনুসারীরা সরল সঠিক পথ থেকে অনেক দূরে, তারা সঠিক পথকে অনেক পরিবর্তন করে ফেলেছে। আল্লাহ তায়া’লা বলেনঃ তুমি একনিষ্ঠ ভাবে নিজেকে ধর্মের উপর প্রতিষ্ঠিত রাখ। এটাই আল্লাহর প্রকৃতি, যার উপর তিনি মানব সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহর সৃষ্টির কোন পরিবর্তন নেই। এটাই সরল ধর্ম। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ জানে না। (রূমঃ ৩০)
কুসংস্কারঃ ইহা কাল্পনিক ও ভ্রান্ত চিন্তা ভাবনা ও বিশ্বাস যার কোন বিবেক প্রসূত বা যৌক্তিক বা বৈজ্ঞানিক কোন কারণ নেই। মানব রচিত ধর্মগুলো কুসংস্কার ও কল্পকাহিনীতে ভরপুর, যার কোন দলিল নেই। একটি কুসংস্কারের উপর ভিত্তি করে আরেকটি কুসংস্কার তৈরি করে। আল্লাহ তায়া’লা যথার্থই বলেছেনঃ বলুন,তোমরা যদি সত্যবাদী হও তবে তোমাদের প্রমাণ উপস্থিত কর। (নমলঃ ৬৪)
বৈপরীত্যঃ এসব ধর্মগুলো বৈপরীত্যে ভরপুর। প্রত্যেক দল ও গোষ্ঠী পরস্পর বিরোধী কাজ কর্ম করে নিজেদের ধর্মের উন্নয়ন করে। আল্লাহ তায়া’লা যথার্থই বলেছেনঃ পক্ষান্তরে এটা যদি আল্লাহ ব্যতীত অপর কারও পক্ষ থেকে হত, তবে এতো অবশ্যই বহু বৈপরিত্য দেখতে পেত। (নিসাঃ ৮২)
অন্যদিকে আসমানী ধর্মগুলো আল্লাহ তায়া’লার নেয়ামত যা তিনি মানব জাতিকে দান করেছেন। যাতে তারা হেদায়েত প্রাপ্ত হন ও সঠিক পথের দিশা পান। কুসংস্কার, শিরক, স্বভাব ও বিবেকের বৈপরীত্য ইত্যাদিতে ঘূর্ণায়মানদের বিরুদ্ধে যাতে দলিল হয়ে দাঁড়ায়। তিনি নবী রাসুল প্রেরণ করে তাদের কাছে এ ধর্মপৌঁছে দিয়েছেন। আল্লাহ তায়া’লা বলেনঃ সুসংবাদদাতা ও ভীতি-প্রদর্শনকারী রসূলগণকে প্রেরণ করেছি, যাতে রসূলগণের পরে আল্লাহর প্রতি অপবাদ আরোপ করার মত কোন অবকাশ মানুষের জন্য না থাকে। আল্লাহ প্রবল পরাক্রমশীল,প্রাজ্ঞ। (নিসাঃ ১৬৫)
গবেষকরা পার্থিব সকল ধর্মের উপাস্যদের পরিসংখ্যান করতে গিয়ে হিমশিম খেয়েছেন। প্রাচীন মিশরের উপাস্য হল ৮০০ থেকেও বেশী। হিন্দুদের উপাস্য ১০০০০ থেকেও বেশী। আর উপাস্যের এমন অংশীদারিত্ব ছিল গ্রীসে বৌদ্ধ ধর্মে ও আন্যান্য পার্থিব ধর্মাবলম্বীদের নিকট।