রাজিব বন্ধুদেরকে তার সাম্প্রতিক কালের ধারনকৃত কিছু ছবি দেখিয়ে বলতে লাগলোঃ
আমার এক বন্ধুর আমন্ত্রণে তুরস্ক ভ্রমণের সময় এ ছবিগুলো ধারন করেছি। এ প্রাচীন দেশটির প্রাচীন নিদর্শন ও সভ্যতার দৃশ্যাবলী আমাকে বিস্মিত করেছে। আমার বন্ধু ইসলামী সভ্যতার কতিপয় নিদর্শন ও বৈশিষ্ট্যাবলী সম্পর্কে আমাকে কিছু তথ্য দিয়ে হতবাক করেছে , যা আমাকে আমার দেশ ভারতে যা দেখেছি সেখানে ফিরে নিয়ে গেছে।
মাইকেলঃ কিন্তু আমার কাছে ইসলামী সভ্যতার ভিন্ন ধরনের তথ্য রয়েছে, যা ইসলামী সভ্যতার অন্যরূপ প্রকাশ করে।
রাশেদঃ আমার মনে হয় আগে আমাদেরকে সভ্যতার অর্থ কি তা নির্ধারণ করতে হবে, এরপর আমরা চাইলে ইসলামী সভ্যতাকে মূল্যায়ন করব।
মাইকেলঃ আমার মনে হয় আমরা এর অর্থের ব্যাপারে সবাই একমত!
রাশেদঃ ঠিক আছে, প্রথমে এর অর্থ নির্ধারন করি, যদি সত্যিই সবাই এর অর্থের ব্যাপারে একমত হয় তাহলে সে অর্থেই সবাই আলোচনা চালিয়ে যাব।
মাইকেলঃসভ্যতা হলো, মানুষের বস্তুগত ও চিন্তা-গবেষণাগত ক্রিয়াকলাপের ফলাফল (যা নির্দীষ্ট একটা সময়ের মাঝে কোন একটি সমাজ তার আবিষ্কার ও অগ্রগতির মাধ্যমে প্রকাশ করে।
রাজিবঃ মাইকেলের কথার সাথে একটু যোগ করতে চাচ্ছি, তাহলো, সভ্যতা হলো, সভ্যতা এমন সামাজিক নিয়মনীতি, যা মানুষকে অধিক সাংস্কৃতিক ফলাফল লাভে সাহায্য করে। সভ্যতা চারটি উপাদান নিয়ে গঠিতঃ অর্থনৈতিক উৎস, রাজনৈতিক নিয়ম নীতি, নৈতিক আচারানুষ্ঠান এবং বিজ্ঞান ও শিল্প-কলার অনুসরণ।
আর সভ্যতা প্রধানতঃ বৈজ্ঞানিক গবেষণা ও শিল্প কলা কে কেন্দ্র করে গড়ে উঠে। বৈজ্ঞানিক গবেষণা যেমন প্রযুক্তিগত আবিষ্কার ও সমাজ বিজ্ঞান ।আর শিল্পকলা যেমন, স্থাপত্যশিল্প, ভাস্কর্য ও এমন কিছু শিল্প যা অগ্রগতিতে অবদান রাখে । অতএব,শিল্পকলা ও বিজ্ঞান যেকোন সভ্যতার জন্যপরস্পর সম্পূরক দুটি চালিকা শক্তি।
রাশেদঃ প্রথমে আমার বন্ধু মাইকেলের কথার উপর কিছু মন্তব্য করতে চাই। সে যা উল্লেখ করেছে সে অর্থে যখন আমরা গ্রহণ করব, তখন একটি জিনিস লক্ষ্য করতে হবে যে, প্রথমেই সভ্যতা হলো মানুষের ক্রিয়াকলাপ। এ লক্ষণীয় বিষয় থেকে একটি ফলাফল দাঁড়ায় যে, কোন দিক বাদ না দিয়ে মানবের গঠনের সবদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে, তা না হলে সভ্যতাটি অসম্পূর্ণ হবে, বা তাকে আমরা আদৌ সভ্যতা বলতে পারবনা, এটা একটি।
দ্বিতীয়তঃ সভ্যতার বৈশিষ্ট্য ও লক্ষ্যণীয় বিষয়গুলো মানব সমাজে একটি অন্যটির থেকে ভিন্ন হতে পারে। যেসব মৌলিক মূল্যবোধের উপর ভিত্তি করে একটি সমাজ গঠিত হবে সভ্যতা তারই প্রতিচ্ছবি। সুতরাং সভ্যতার সংস্কার ও বিনষ্টের মাপকাঠিতে সেসব মৌলিক মূল্যবোধ্গুলো সঠিক না ভুল, সেগুলো মানুষের মানবিকতার সাথে মিল রাখে কিনা এবং পরিবেশের সাথে সামাঞ্জস্যপূর্ণ ও ভারসাম্য কিনা? সেগুলো লক্ষ্য রাখতে হবে। আর এতেই আমাদের সামনে অন্যান্য সভ্যতার সাথে বিরাট পার্থক্যের কারণ এবং বর্তমানে পাশ্চাত্য সভ্যতার ছায়ায় মানবতার চরম বিপর্যয়ের কারণ প্রকাশ পাবে।
মাইকেলঃ আমার মনে হয় ইসলামী সভ্যতার যেসব অন্ধকার দিক আছে সে গুলো আমরা উপস্থাপন করব বলে তা থেকে জনাব রাশেদ ভেগে যেতে চাচ্ছে।
রাজিবঃ আমার মনে হয়, তোমার কথা দ্বারা বোঝা যায় যে, রাশেদের উচিত ইসলামী সভ্যতার বৈশিষ্ট্যাবলী এবং অন্যান্য সভ্যতার মাঝে এর পার্থক্য উল্লেখ করা।
রাশেদঃ ভাল কথা। মানুষ, মহাবিশ্ব ও জীবন এগুলোর ব্যাপারে ইসলামী ধ্যান ধারণা নিয়ে ইসলামী সভ্যতা গঠিত।আমি ইসলামী সভ্যতার কতিপয় বৈশিষ্ট্যাবলী উল্লেখ করব, তবে আমাকে এসব বৈশিষ্ট্যাবলীর বিপরীতে সমসাময়িক পাশ্চাত্য সভ্যতার অনুরূপ বৈশিষ্ট্যাবলী আলোচনা করতে দাও।
ইসলামী সভ্যতার উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্যাবলী হলো নিম্নরূপঃ
যে ইসলামী ধ্যান-ধারণায় ধ্যান ধারণার উপর ভিত্তি করে এ ইসলামী সভ্যতা গড়ে উঠেছে তাতে মানব হলো সৃষ্ট জীবও প্রতিপালিত। এ পৃথিবীতে খলিফা বা প্রতিনিধি, আল্লাহর পথ ও পদ্ধতির রক্ষক, স্বাধীন ও নিজের সব কিছু নিজেই নির্বাচনকারী। অতএব, এ পদ্ধতির উপর ভিত্তি করে সে ভাল কাজ করতে আদিষ্ট। এমনিভাবে সে ইহকাল ও পরকালে তার স্বেচ্ছায় কৃত কর্মকান্ডের দায়-দায়িত্ব বহনকারী।
অন্যদিকে সমসাময়িক পাশ্চাত্য সভ্যতার দৃষ্টিকোণে মানুষ হলো মহাবিশ্বের মালিক, স্বাধীন, মুক্ত। নিজের ও মহাবিশ্বের পরিচালনায় সে নিজে যা সীমিত করে তা ছাড়া কোন সীমাবদ্ধতা ও নিষেধাজ্ঞা নেই। তার সকল কাজের কেন্দ্রবিন্দু হচ্ছে যৌনক্ষুধা নিবারণ ও আত্মতৃপ্তিই । এ ক্ষেত্রে সে অন্যান্য প্রাণীর মত।পাশ্চাত্য সভ্যতার দৃষ্টিকোণে মানুষকে উদ্দেশ্যহীনভাবে সৃষ্টি করা হয়েছে, সে নিজে যেসব সীমারেখা দিয়েছে সেগুলো ছাড়া তার আর কোন হিসেব নেই। এমনিভাবে পাশ্চাত্য সভ্যতার দৃষ্টিকোণে মানুষের সব লক্ষ্য-উদ্দেশ্য হলো নগণ্য ও পার্থিব।
ইসলামী ধ্যান-ধারণায় মহাবিশ্বও মানুষের ন্যায় সৃষ্ট ও প্রতিপালিত। তবে মানুষের সেবায় তা নিয়োজিত। তাই মানুষ আল্লাহর দেয়া বিধানানুযায়ী তার সাথে তাল মিলিয়ে চলে, তা মানুষের সাথে সম্পূরক হয়ে কাজ করে এবং এতে তার সাথে মানুষ শান্তি অনুভব করে।
আর পাশ্চাত্য সভ্যতার দৃষ্টিকোণে মানুষ ও মহাবিশ্বের মাঝে দ্বন্দ্ব ও বিরোধ লেগেই আছে, এদের মাঝে মিল নেই, ফলে এদুয়ের মাঝে সর্বদা প্রচন্ড দ্বন্দ্ব ও যুদ্ধ লেগেই থাকে।
ইসলামী ধ্যান-ধারণায় জীবন হলো মানব ও জগতের স্রষ্টার মালিকানা। এটা পরকালীন স্থায়ী জীবনের জন্য স্টেশন স্বরূপ। মৃত্যুর পর সব মানুষের দুনিয়ার জীবন শেষ হয়ে যাবে, মরণের পর আমাদের জন্য আরেকটি জীবন অপেক্ষা করছে। মানবএবং জগত ও জীবনের স্রষ্টার সন্তুষ্টি লাভের জন্য মানুষ এ পৃথিবীর জীবন আবাদ করতে আদিষ্ট। এ জীবন হলো আখেরাতের জন্য শস্যক্ষেত স্বরূপ। দুনিয়ার জীবনের কর্মকান্ডের হিসেব ও প্রতিদান আখেরাতে পাবে।
অন্যদিকে পাশ্চাত্য সভ্যতার দৃষ্টিকোণে জীবন শুধু দুনিয়াতেই সীমাবদ্ধ। সে সভ্যতা আখেরাত, হিসেব, প্রতিদান ইত্যাদিতে বিশ্বাস করেনা। ফলে মানুষের সব সুযোগ সুবিধা এ জীবনেই শুধু ভোগ করবে।
এসব আলোচনা থেকে আমরা এ ফলাফলে পৌঁছতে পারি যে, পাশ্চাত্য সভ্যতা কখনও ইসলামী সভ্যতার সাথে মিলেনা। এদুটো সভ্যতা পরস্পর বিপরীতমুখী।
মাইকেলঃ রাশেদ! তোমার কথার উপর দু’টি দ্রষ্টব্য উল্লেখ করতে আমাকে সুযোগ দাও।
প্রথমতঃ তুমি পাশ্চাত্য সভ্যতার একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক উল্লেখ করোনি, তা হলোঃ ইহুদি ও খৃস্টান ধর্ম। যেমন তুমি জীবনের ব্যাপারে পাশ্চাত্য সভ্যতার দৃষ্টিকোণ বলেছ যে, আখেরাত, হিসাব ও প্রতিদানে বিশ্বাস করেনা, এটা ঠিক নয়। উক্ত ধর্ম দু’টি আখেরাত বিশ্বাস করে, যদিও এ বিশ্বাসের বিস্তারিত ধরণ অন্য ধর্ম থেকে ভিন্ন।
দ্বিতীয়তঃ তুমি কথা বলেছ যেসব মূল ভিত্তির উপর ইসলামী সভ্যতা গড়ে উঠেছে সেগুলোর সাথে পাশ্চাত্য সভ্যতার পার্থক্যের উপর, অথচ তোমার আলোচনা ইসলামী সভ্যতার বৈশিষ্টাবলীর ধারে কাছেও যায়নি, যা রাজিব তোমার কাছে জানতে চেয়েছে।
রাশেদঃ প্রথম পর্যবেক্ষণের ব্যাপারে আমি তোমার সাথে দ্বিমত পোষণ করব। সভ্যতা গড়েউঠার মূল ভিত্তি সমূহ আর সে সভ্যতা প্রকাশকারী সমাজের উপাদানসমূহের মাঝে পার্থক্য আছে। একথা নির্দ্বিধায় বলা যায় যে, পাশ্চাত্য সভ্যতায় ইহুদি ও খৃস্টান ধর্মের অনেক প্রভাব রয়েছে, তবে এ কথা বলা যাবে না যে, পাশ্চাত্য সভ্যতা এ দুটি ধর্মের উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে, বরং এর উল্টোটা বলা যায়। এ সভ্যতা সাধারনভাবে ধর্মের বিপরীতে, বিশেষ করে গীর্জার আধিপত্যের বিপরীতে গড়ে উঠেছে। অর্থাৎ তা শুধু যুক্তি ও পার্থিবসর্বস্ব। আর এটাই ধর্মনিরপেক্ষবাদের মধ্যে স্বচ্ছ হয়েছে, যারা জীবন থেকে ধর্মকে আলাদা করার কথা বলে। আমার মনে হয় তোমরা আমার কথার সাথে একমত।
আর দ্বিতীয় পর্যবেক্ষণের সাথে আমি একমত। কিন্তু আমি একটা কথা সংযোগ করব যে, এ সব মূল ভিত্তি ইসলামী সভ্যতার বৈশিষ্ট্যাবলীর সারাংশ। আর সে বৈশিষ্টগুলো হলোঃ
ইসলামী সভ্যতায় ভারী শিল্পসমূহ মানুষের তৈরি। এর উদ্দেশ্য হলোঃ এর উপাদানের প্রতি লক্ষ্য রাখা, মানবিক পরিতৃপ্তি অর্জন, মহাবিশ্বের সাথে ঐকতান বাস্তবায়ন ও সৃষ্টির লক্ষ্য-উদ্দেশ্যে পৌঁছা।
একদিকে ধর্ম ও দুনিয়া অন্যদিকে ধর্ম ও জ্ঞান-বিজ্ঞানের সাথে সামঞ্জস্য ও সম্পর্ক সৃষ্টি করা। এই মূল ভিত্তির উপর নির্ভর করে আচার-ব্যবহার ও সাংস্কৃতিক কার্যকলাপ সৃষ্টি করা।
মানুষের জ্ঞানের মূল উতসগুলোর মাঝে সমতা ও সামঞ্জস্য স্থাপন করা। সমস্ত উপাদান দু’রকমঃ বস্তুগত ও অদৃশ্যমান। বস্তুগত জিনিস মানুষের নাগালের মধ্যে, সে ক্রমান্বয়ে বিভিন্ন অনুভূতির মাধ্যমে সেখানে পৌঁছতে পারে, যেগুলোর একটি অন্যটির উপর নির্ভরশীল। স্বভাবজাত অনুভূতির পশ্চাতে রয়েছে ইন্দ্রিয়জাত অনুভূতি। আবার ইন্দ্রিয়জাত অনুভূতির পশ্চাতে রয়েছে বিবেকের অনুভূতি। অতঃপর বিবেকের অনুভূতি মানুষকে অদৃশ্যের বিষয়গুলো বোঝার জন্য কিছু প্রাথমিক সহায়ক সূচনায় পৌঁছায়, যাতে সে ওহীর মাধ্যমে আসা অদৃশ্য বিষয়গুলো বুঝতে পারে, এবং সেগুলো মেনে নেয় ও নিজেকে আত্মসমর্পণ করে।
অন্যান্য সভ্যতা ও সংস্কৃতির উপর প্রভাব সৃষ্টি করা এবং সেগুলোর দ্বারা প্রভাবিত হওয়ার ক্ষেত্রে উন্মুক্ত। অর্থাৎ অন্যান্য জাতি ও সভ্যতা হতে প্রাপ্ত ফলাফল যেগুলো ইসলামী সভ্যতার মূল ভিত্তির সাথে মিল সেগুলোকে গ্রহন করে ও অন্যান্য জাতি ও সভ্যতার সেসব ফলাফল থেকে উপকৃত হওয়ার পথ খুলে রেখেছে ও তাদের নিকট ইসলামী সভ্যতা প্রকাশ করেছে।
রাজিবঃ রাশেদ আমি দুঃখিত, মাইকেল বলেছে তার নিকট ইসলামী সভ্যতার অন্য দিকের তথ্য আছে, তাকে সুযোগ দাও যাতে তার কথা শুনতে পারি ও ইসলামী সভ্যতা সম্পর্কে তার ধারণা পরিপূর্ণভাবে বুঝতে পারি।
মাইকেলঃ এ সব খারাপ দিকের অন্যতম দিক হল, যেসব দেশ এসব সভ্যতা গড়ে তুলেছে সেগুলো তরবারির শক্তিতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এ দেশগুলো জোর ও সহিংসতার সাথে সম্পৃক্ত হয়েছে।
রাশেদঃ হে বন্ধু, তলোয়ার সভ্যতা তৈরি করতে পারেনা। কেননা সভ্যতার অন্যতম শর্ত হলোঃ স্থিতিশীলতা। আর এটা যুদ্ধাবস্থার সাথে বিরোধপূর্ণ। এমনিভাবে, সামরিক বিজয় মানেই চিন্তা-গবেষণা, সংস্কৃতি এবং সভ্যতার বিজয় নয়। তুমি তাতার, মোঘল ও এরকম অন্যান্যদের ইতিহাস নিয়ে একটু ভেবে দেখ, যাদের প্রচুর সামরিক শক্তি ছিল, কিন্তু এ শক্তি দ্বারা তারা সভ্যতা গড়তে পারেনি।
তবে তোমার উদ্দেশ্য যদি হয় যে, ইসলাম জিহাদের মাধ্যমে প্রসারিত হয়েছে, তবে আমি তোমাকে বলব, বিশ্বের অনেক ভূখন্ডে মুসলিম সেনাবাহিনী পৌঁছেনি অথচ ইসলাম প্রসারিত হয়েছে এবং ইসলামী সভ্যতা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এটা অনেক বড় একটা বিষয় যা বিস্তারিত আলোচনার দরকার। আমি শুধু কিছু পাশ্চাত্য চিন্তাবিদ ও গবেষকের সাক্ষ্য এখানে উল্লেখ করব। আমেকিকার লেখক (The New World of Islam) বইয়ের গ্রন্থকার লোথ্রোপ স্টাডেড (Lothrop Stoddard) বলেন, “আরবজাতি কখনও রক্তপাত, লুটপাট ও ধ্বংস পছন্দ করতনা। বরং তারা এর বিপরীত ছিল। তারা প্রতিভাবান, মহৎ চরিত্র ও অনেক গুণাবলীর অধিকারী ছিল। জ্ঞান-বিজ্ঞানের প্রতি আকুল ছিল, পূর্ববর্তী সভ্যতা হতে প্রাপ্ত শিষ্টাচারের নেয়ামতের প্রতি খুবই সদব্যবহারকারী ছিল। যেহেতু বিজয়ী ও বিজিতদের মাঝে পারস্পরিক বিবাহ-শাদি ও চিন্তার আদান-প্রদানের বিস্তৃতি ঘটে তাই তাদের মাঝে দ্রুত সংমিশ্রন ঘটে, আর এ সংমশ্রন হতে একটি নতুন সভ্যতা জন্ম লাভ করে, যা “আরব সভ্যতা” নামে অভিহিত”।
ফরাসি অগ্রজসেনা হেনরি ডি কাসট্রি (Cte.H.de Castries ১৮৫০-১৯২৭) বলেনঃ আমরা মনে করি, বর্তমান যুগে ইসলাম ধর্মকে পর্যবেক্ষন করে দেখা যাচ্ছে যে, যারা ধারণা করছে, ইসলাম তরবারীর জোরে প্রসারিত হয়েছে তাদের এ ধারনার কোন নিদর্শন পাওয়া যায়না। যদি মুহাম্মদের ধর্ম সহিংসতা ও জোরপূর্বক প্রসারিত হত তবে মুসলমানদের বিজয়াভিযান শেষ হওয়ার সাথে সাথে সে প্রসার থেমে যেতো, কিন্তু আমরা দেখি এখনো আল কোরআন সমগ্র পৃথিবী জুড়ে তার ডানা ছড়িয়ে আছে।”
ফরাসি ঐতিহাসিক গোস্তাভ লি বন (Gustave Le Bon ১৮৪১-১৯৩১) যে কথা বলেছেন, মানব সভ্যতার ইতিহাসে ইসলামী সভ্যতার প্রভাবের ব্যাপারে এর চেয়ে সত্য কোন কথা আমি পাইনি, তিনি বলেছেনঃ
“স্পষ্ট প্রভাববিস্তারকারী আরবজাতির মত কোন জাতি ইতিহাসে পাইনি। আরবদের সাথে যে জাতিরই কোন ধরণের সম্পর্ক ছিল তারা কিছু সময়ের জন্য হলেও তাদের সভ্যতায় গহন করেছে”।
পরিশেষে তোমাদেরকে বলব, বর্তমান সভ্যতায় কিভাবে মানবিক বৈশিষ্ট্যাবলী ধ্বংসের মাধ্যমে মানুষকে ধ্বংস করে মানবজীবনকে হুমকির সম্মুখীন করা হয়েছে তা নিয়ে তোমাদের ভাবা উচিত। এর ফলে, মানবতার প্রয়োজনেই ইসলামী সমাজ গঠন স্বভাবতই অত্যাবশ্যকীয় হয়ে পড়েছে।