সুখ শান্তির পথ হলো তাই যে পথে নৈতিকতা নিশ্চিতভাবে উড়তে থাকে। সে পথে ভ্রমণকারীর মধ্যে অবশ্যই ভালবাসা, উদারতা, সম্মানবোধ, ক্ষমাশীলতা, লজ্জাশীলতা, শান্ততা, নম্রতা, অন্যকে অগ্রাধিকার, ন্যায় বিচার, সততা, বন্ধুত্ব, সকলের সাথে পরামর্শ করা ইত্যাদি উত্তম চরিত্রের গুনাবলী থাকতে হবে। ইহা আত্মার উন্নতির পথ, উত্তম চরিত্র ও পরিপূর্ণ শিষ্টাচারের প্রতি অন্তরের আকর্ষণ। আখলাক কোন শৌখিনতা নয়, যা থেকে অমুখাপেক্ষী থাকতে পারে। বরং ইহার স্থান সে সব মূলনীতির অগ্রভাগে, যেগুলোর উপর জীবন যাপনের ধারা নির্ভর করে। ব্যক্তির আখলাক যদি সুন্দর হয় তবে তার জীবন ও সমাজের সুখ-শান্তিতে এর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। আর যদি ব্যক্তির চরিত্র খারাপ হয় তবে সে নিজেও দুঃখী হবে এবং সমাজের সকলকে দুঃখী ও দুর্ভাগা করবে।
এজন্যই ইসলাম তার অনুসারীদের অন্তরে উত্তম চরিত্র ও সৎগুনাবলী স্থাপন করতে খুব গুরুত্ব দিয়েছে। তাদেরকে এসব গুনাবলী আঁকড়িয়ে ধরে রাখতে উৎসাহিত করেছে। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইহাকে তাঁর নবুয়াতের প্রধান লক্ষ্য নির্ধারণ করেছেন। তিনি বলেছেনঃ “আমি উত্তম চরিত্রকে পূর্ণ করতে প্রেরিত হয়েছি”। (বায়হাকী শরীফ)। মানুষ যে সর্ববৃহৎ সভ্যতা (ইসলাম) সম্পর্কে অবগত হয়েছে সে সভ্যতাকে যুগে যুগে শক্তিশালী ও মজবুত করতে ইসলামের মিশনই যেন ছিল উত্তম চরিত্র গঠন। ইসলামের নবী এ রিসালাতের আলো পৌঁছাতে ও মানুষকে এ সভ্যতার উপর ঐক্যবদ্ধ করতে অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন। মানুষকে সুন্দর আখলাক, উত্তম আদর্শের মাধ্যমে পবিত্রকরণ ও তাদের চোখের সম্মুখে পূর্ণতার আলো উদ্ভাসিত করতে তিনি সবচেয়ে বেশি জোর দিয়েছেন।
তাহলে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাহিস সালামের আগমনের মূল উদ্দেশ্য ছিল চরিত্র গঠন, ইহাকে উন্নত করা, আত্মাকে পুতঃপবিত্র ও কলুষমুক্ত করা। তাঁর আগমনের পূর্বে মানবজাতি এ সব আখলাকের ব্যাপারে পথভ্রষ্ট ছিল, তারা এ ব্যাপারে অজ্ঞ ছিল, এমনকি কোন গুরুত্বও দিতনা। আল্লাহ তায়া’লা বলেনঃ তিনিই নিরক্ষরদের মধ্য থেকে একজন রসূল প্রেরণ করেছেন, যিনি তাদের কাছে পাঠ করেন তার আয়াতসমূহ, তাদেরকে পবিত্র করেন এবং শিক্ষা দেন কিতাব ও হিকমত। ইতিপূর্বে তারা ছিল ঘোর পথভ্রষ্টতায় লিপ্ত। (সূরা জুম’আঃ ২)
আল্লাহ তায়া’লা আরো বলেছেনঃ যেমন, আমি পাঠিয়েছি তোমাদেরই মধ্য থেকে তোমাদের জন্যে একজন রসূল, যিনি তোমাদের নিকট আমার বাণীসমুহ পাঠ করবেন এবং তোমাদের পবিত্র করবেন; আর তোমাদের শিক্ষা দেবেন কিতাব ও তাঁর তত্ত্বজ্ঞান এবং শিক্ষা দেবেন এমন বিষয় যা কখনো তোমরা জানতে না। (সূরা বারাকাঃ ১৫১)
ঈমান এমন এক শক্তি যা মুমিনকে সম্মানিত আসনে নিয়ে যায়, আর নিম্নতা ও ভুলভ্রান্তি থেকে রক্ষা করে। অতএব, দুর্বল চরিত্র দুর্বল ঈমানের পরিচয়। এমনিভাবে, উত্তম চরিত্র শক্তিশালী ঈমানের পরিচয়। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ ব্যাপারটি এভাবে ব্যাখ্যা করেছেন যে, শক্তিশালী ঈমান অবশ্যই উত্তম চরিত্রের জন্ম দেয়, অন্যদিকে চরিত্রের অধঃপতন দুর্বল ঈমান বা ঈমানহীনতার পরিচয়। এজন্যই অমুসলিম কারো ভয়, ভৎসনা বা অপরাধের জবাবদিহীতা না করে খুব সহজেই খারাপ কাজে লিপ্ত হয়। রাসুল বলেছেনঃ “লজ্জাশীলতা ও ঈমান পরস্পর একত্রে থাকে। যখন কোন একটি চলে যায়, তখন অন্যটিও চলে যায়”। (বায়হাকী শরিফ)। বরং রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রতিবেশীর সাথে খারাপ আচরণকে ঈমানহীনতার পরিচয় বলেছেন। তিনি বলেছেনঃ “ আল্লাহর কসম তোমরা ঈমানদার হতে পারবেনা, আল্লাহর কসম তোমরা ঈমানদার হতে পারবেনা, আল্লাহর কসম তোমরা ঈমানদার হতে পারবেনা। সাহাবারা জিজ্ঞেস করলেন, কেন হে আল্লাহর রাসুল? তিনি বললেনঃ যার “বাওয়ায়েক” থেকে প্রতিবেশী নিরাপদ নয়। সাহাবারা জিজ্ঞেস করলেনঃ হে আল্লাহর রাসুল “বাওয়ায়েক” কি? তিনি বললেনঃ তার অনিষ্ট। (বুখারী শরিফ)।
এ হাদীস থেকে বুঝা যায় যে, আল্লাহ তায়া’লা বান্দাহকে যখনই ভাল কাজের দিকে ডাকেন বা খারাপ কাজ থেকে বিরত থাকতে বলেন, তখন ইহা তাদের অন্তরে ঈমানের স্তর ও চাহিদা অনুযায়ী হয়ে থাকে। আল্লাহ তায়া’লা পবিত্র কোরআনে একথা সবচেয়ে বেশি বলেছেনঃ হে ঈমানদারগণ অতঃপর, তিনি তাদেরকে তাঁর আদেশ দিয়েছেন, যেমন আল্লাহ তায়া’লার বাণীঃ হে ঈমানদারগণ, আল্লাহকে ভয় কর এবং সত্যবাদীদের সাথে থাক। (সূরা তাওবাঃ ১১৯)
এমনিভাবে রাসুল তাঁর সাহাবীদেরকে উত্তম চরিত্রের শিক্ষা দিয়েছেন, ইহাকে তিনি ঈমানের সাথে সম্পৃক্ত করেছেন। যেমন তিনি বলেছেনঃ “যে ব্যক্তি আল্লাহ ও পরকালের উপর ঈমান এনেছে, সে যেন অতিথির সম্মান করে। আর যে ব্যক্তি আল্লাহ ও পরকালের উপর ঈমান এনেছে, সে যেন প্রতিবেশীর অধিকার সংরক্ষণ করে। আর যে ব্যক্তি আল্লাহ ও পরকালের উপর ঈমান এনেছে, সে যেন উত্তম কথা বলে বা চুপ থাকে”। (মুসনাদে আহমদ)। এমনিভাবে ইসলাম মানুষের ঈমানের সত্যতা ও পরিপূর্ণতার ব্যাপারে তাদের অন্তরে উত্তম চরিত্রের গুনাবলী অর্জনের উপর নির্ভর করেছে।
ইসলামে ইবাদত শুধু দুর্বোধ্য কথা ও অর্থহীন কিছু নড়াচড়া নয়; বরং ইহা কর্ম সম্পাদন ও কতিপয় সুন্দর কথা যা অন্তরকে পবিত্র করে ও জীবনকে সুন্দর করে। ইসলামের ফরজসমূহের উদ্দেশ্য হলো মুসলিমকে প্রশংসিত উত্তম চরিত্রের জীবন যাপনে অভ্যস্থ করা। তার সমস্যা ও অবস্থা যাই হোক না কেন সব সময়ই সে এ সব আখলাক ধরে রাখবে। কোরআন ও হাদীসে এ বাস্তবতার কথা স্পষ্টভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। যেমনঃ আল্লাহ তায়া’লা যখন ফরজ নামাজের আদেশ দিয়েছেন, তখন তিনি বলেছেন যে, ইহা অসচ্চরিত্র তথা অশ্লীল ও গর্হিত কার্য থেকে বিরত রাখে। আল্লাহ তায়া’লা বলেনঃ আপনি আপনার প্রতি প্রত্যাদিষ্ট কিতাব পাঠ করুন এবং নামায কায়েম করুন। নিশ্চয় নামায অশ্লীল ও গর্হিত কার্য থেকে বিরত রাখে। আল্লাহর স্মরণ সর্বশ্রেষ্ঠ। আল্লাহ জানেন তোমরা যা কর। (সূরা আনকাবুতঃ ৪৫)
ইসলামে যাকাত বলতে কোন ট্যাক্স নয়, যা ধনীদের থেকে উত্তোলন করে গরীবদের মাঝে বিতরণ করবে; বরং ইহা রহমত ও হৃদ্যতার এমন এক অনুভুতি যা সব স্তরের মানুষের মাঝে সম্পর্ক ও ভালবাসা সৃষ্টি করে। এছাড়াও অপরাধ ও অন্যায় থেকে মানুষের অন্তরকে পবিত্র করে এবং সমাজে বিত্তবান ও দরিদ্র মানুষের মাঝে সমতা বিধানের মাধ্যম। ইহাই যাকাত ফরজের সর্বপ্রথম হিকমত। আল্লাহ তায়া’লা বলেনঃ তাদের মালামাল থেকে যাকাত গ্রহণ কর যাতে তুমি সেগুলোকে পবিত্র করতে এবং সেগুলোকে বরকতময় করতে পার এর মাধ্যমে। আর তুমি তাদের জন্য দোয়া কর, নিঃসন্দেহে তোমার দোয়া তাদের জন্য সান্ত্বনা স্বরূপ। বস্তুতঃ আল্লাহ সবকিছুই শোনেন,জানেন। (সূরা তাওবাঃ ১০৩)
এজন্যই ইসলাম সদাকাকে শুধু সম্পদের সাথেই সীমাবদ্ধ রাখেনি, বরং ইহা সে সব সুউঁচু আখলাকের অন্তর্ভুক্ত যেগুলো সমাজ ও সমাজের বসিন্দাকে সুখী করতে অংশীদার। রাসুল সাদাকা শব্দটির অর্থ ব্যাপক অর্থে বুঝিয়েছেন, যা মুসলমানের ব্যয় করা উচিত। তিনি বলেছেনঃ “ তোমার বালতি থেকে তোমার ভাইয়ের বালতি ভরে দেয়া সদাকা (বিশেষ করে যখন কূপ থেকে পানি তোলার জন্য রশি থাকবে না), সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজের নিষেধও সদাকা”। অন্য রেওয়ায়েতে আছেঃ “তোমার ভাইয়ের সামনে মুচকি হাসি সদাকা, মানুষ চলাচলের পথ থেকে পাথর, কাঁটা ও হাঁড় সরিয়ে ফেলা সদাকা, পথ ভোলা মানুষকে পথ দেখানোও সদাকা”। (বায়হাকী শরীফ)।
এমনিভাবে ইসলামে রোজাও শুধু পানাহার থেকে বিরত থাকার জন্য নয়, বরং ইহা গরীব ও বঞ্চিত মানুষের দুঃখ কষ্টের অনুভুতি বুঝার একটি মাধ্যম। এছাড়াও রোজা মানুষের অন্তরকে সুপথ দেখায়, তার কামভাব ও খামখেয়ালীকে নিয়ন্ত্রণ করে। আল্লাহ তায়া’লা বলেনঃ হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর রোজা ফরয করা হয়েছে, যেরূপ ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের উপর,যেন তোমরা পরহেযগারী অর্জন করতে পার। (সূরা বাকারাঃ ১৮৩)
রাসুল বলেছেনঃ “যে ব্যক্তি মিথ্যা কথা ও কাজ ছাড়বে না তার খাবার ও পানীয় ত্যাগে আল্লাহর কোন প্রয়োজন নেই”। (মুসনাদে আহমদ) তিনি আরো বলেছেনঃ “খাবার ও পানীয় ত্যাগের নাম রোজা নয়, বরং রোজা হলো অনর্থক ও অশ্লীল কথা কাজ ছেড়ে দেয়া। কেউ যদি তোমাকে গালি দেয়, বা অন্যায় আচরণ করে তবে বলঃ আমি রোজাদার, আমি রোজাদার”। (ইবনে খুজাইমা)।
আর হজ্বের ব্যাপারে যদি কেউ মনে করে ইহা চারিত্রিক শিক্ষা ও অর্থ বাদ দিয়ে শুধু ভ্রমণ, যেহেতু অন্যান্য ধর্মও কতিপয় গায়েবী ইবাদত শামিল করেছে, তবে তা ভুল ধারণা। কেননা আল্লাহ তায়া’লা এ ইবাদত সম্পর্কে বলেছেনঃ হজ্জ্বে কয়েকটি মাস আছে সুবিদিত। এসব মাসে যে লোক হজ্জ্বের পরিপূর্ণ নিয়ত করবে, তার পক্ষে স্ত্রীও সাথে নিরাভরণ হওয়া জায়েজ নয়। না অশোভন কোন কাজ করা, না ঝাগড়া-বিবাদ করা হজ্জ্বের সেই সময় জায়েজ নয়। আর তোমরা যাকিছু সৎকাজ কর, আল্লাহ তো জানেন। আর তোমরা পাথেয় সাথে নিয়ে নাও। নিঃসন্দেহে সর্বোত্তম পাথেয় হচ্ছে আল্লাহর ভয়। আর আমাকে ভয় করতে থাক, হে বুদ্ধিমানগন! তোমাদের উপর তোমাদের পালনকর্তার অনুগ্রহ অন্বেষণ করায় কোন পাপ নেই। (সূরা বাকারাঃ ১৯৭)
উপরোল্লেখিত আলোচনা দ্বারা দ্বীন ও আখলাকের মাঝে সুদৃঢ় সম্পর্ক বুঝা যায়। ইসলামের মূল রুকূনসমূহ যেমনঃ নামাজ, রোজা, যাকাত, হ্জ্ব ও অন্যান্য ইবাদতসমূহের উদ্দেশ্য হলো কাংখিত পরিপূর্ণ মানবতায় পৌঁছানো ও পবিত্র জীবনে উন্নীত করা, যা উত্তম আখলাক ও উন্নত মৌলিক নীতির মাধ্যমে সুখ-শান্তি ও নিরাপত্তার নেয়ামত লাভ করবে। যদিও কাজে কর্মে ও দৃশ্যত নানা ধরণের ইবাদত; কিন্তু সব কিছুর মূল লক্ষ্য-উদ্দেশ্য হলো যা রাসুল নিম্নোক্ত হাদীসে অংকিত করেছেনঃ “নিশ্চয় আমি উত্তম আখলাককে পরিপূর্ণ করতে প্রেরিত হয়েছি”। (বায়হাকী শরিফ) অতঃএব, সুখ-শান্তির পথ তাই যা নৈতিকতার উপর প্রতিষ্ঠিত, নৈতিকতার মাঝেই ঘুর্ণায়মান, সেখানে নৈতিকতা কখনও ইবাদত থেকে আলাদা হবে না।
সুখ-শান্তির পথের মূলভিত্তিসমূহ যেমনঃ শরয়ী বিধিবিধান, শিষ্টাচারিতা ও আক্বায়েদী মূলনীতি সবকিছুই নৈতিকতার মূলভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত। আল্লাহর সাথে উত্তম আখলাক ও শিষ্টাচার থেকে শুরু করে মানুষ তার নিজের সাথে, বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশী, শত্রু-মিত্র সকলের সাথেই উত্তম আচার ব্যবহার করা, এমনকি জীবজন্তু ও অন্যান্য সকল অস্তিত্বশীল জিনিসের সাথেও। বরং পরিবেশ, গাছপালা ও উদ্ভিদের সাথেও ভাল আচরণ করা। এসব উত্তম আখলাক সব কিছুর সাথে কথা ও কাজে উত্তম আচরণ করা, বরং অন্তরের চিন্তা ভাবনার মাধ্যমে উত্তম আচরণ করাকেও শামিল করে। আল্লাহ তায়া’লা কথাবার্তায় উত্তম চরিত্রের মূলনীতি বর্ননা করে বলেছেনঃ মানুষকে সৎ কথাবার্তা বলবে। (সূরা বাকারাঃ ৮৩)
আল্লাহ তায়া’লা কাজে কর্মে উত্তম আখলাকের মূলনীতির কথা এভাবে বলেছেনঃ মন্দের জওয়াবে তাই বলুন,যা উত্তম। তারা যা বলে, আমি সে বিষয়ে সবিশেষ অবগত। (সূরা মু’মিনূনঃ ৯৬)
যে ব্যক্তি আল্লাহর কিতাব নিয়ে একটু চিন্তাভাবনা করবে, সে দেখতে পাবে যে, আল কোরআনে আখলাকের আদেশসমূহ ভরপুর। নিম্নোক্ত আয়াতগুলো একটু চিন্তা করে দেখুন। আল্লাহ তায়া’লা বলেনঃ সৎকাজের প্রতিদান উত্তম পুরস্কার ব্যতীত কি হতে পারে? (সূরা আর রহমানঃ ৬০)
আল্লাহ তায়া’লা আরো বলেনঃ আর পারস্পরিক সহানুভূতির কথা বিস্মৃত হয়ো না। (সূরা বাকারাঃ ২৩৭)
আল্লাহ তায়া’লা আরো বলেনঃ সুতরাং এখন ছবর করাই শ্রেয়। তোমরা যা বর্ণনা করছ, সে বিষয়ে একমাত্র আল্লাহই আমার সাহায্য স্থল। (সূরা ইউসুফঃ ১৮)
আল্লাহ তায়া’লা আরো বলেনঃ কেয়ামত অবশ্যই আসবে। অতএব পরম ঔদাসীন্যের সাথে ওদের ক্রিয়াকর্ম উপক্ষো করুন। (সূরা হিজরঃ ৮৫)
আল্লাহ তায়া’লা আরো বলেনঃ আর ক্ষমা করার অভ্যাস গড়ে তোল, সৎকাজের নির্দেশ দাও এবং মূর্খ জাহেলদের থেকে দূরে সরে থাক। (সূরা আ’রাফঃ ১৯৯)
আল্লাহ তায়া’লা আরো বলেনঃ তারা যখন অবাঞ্চিত বাজে কথাবার্তা শ্রবণ করে, তখন তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় এবং বলে, আমাদের জন্যে আমাদের কাজ এবং তোমাদের জন্যে তোমাদের কাজ। তোমাদের প্রতি সালাম। আমরা অজ্ঞদের সাথে জড়িত হতে চাই না। (সূরা কাসাসঃ ৫৫)
আল্লাহ তায়া’লা আরো বলেনঃ সমান নয় ভাল ও মন্দ। জওয়াবে তাই বলুন যা উৎকৃষ্ট। তখন দেখবেন আপনার সাথে যে ব্যক্তির শুত্রুতা রয়েছে, সে যেন অন্তরঙ্গ বন্ধু। (সূরা হা-মীম সিজদাঃ ৩৪)
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাহিস সালামের আখলাক ছিল মহাগ্রন্থ আল কোরআন। কেনই বা তাঁর চরিত্র এমন হবে না? আল্লাহ তায়া’লা তাঁর প্রশংসা করে বলেছেনঃ আপনি অবশ্যই মহান চরিত্রের অধিকারী। (সূরা ক্বলমঃ ৪)
এজন্যই রাসুল কে এমন এক রিসালাত দিয়ে প্রেরণ করা হয়েছে যার মধ্যে উত্তম আখলাককে সবচেয়ে বেশী মর্যাদা দেয়া হয়েছে । রাসুল বলেছেনঃ “মু’মিনদের মাঝে বেশী পরিপূর্ণ ঈমানের অধিকারী সে ব্যক্তি যার আচরণ বেশী সুন্দর, আর তাদের মধ্যে সেই উত্তম যে তার স্ত্রীদের নিকট উত্তম”। (বায়হাকী শরিফ)। রাসুল আরো বলেছেনঃ “সৎ কাজ হলো উত্তম চরিত্র। আর অসৎ কাজ হলো তাই, যা তোমার অন্তরে বাঁধা দেয় আর মানুষের সামনে প্রকাশ তা করতে অপছন্দ কর”। (মুসলিম শরিফ)। তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেছেনঃ “ইসলামে অশ্লীলতা করা ও অশ্লীলতা ছড়ানোর কোন স্থান নেই, সে ব্যক্তির ইসলাম উত্তম যার আখলাক উত্তম”। (মুসনাদে আহমদ)। তিনি আরো বলেছেনঃ “কিয়ামতের দিনে মু’মিনের দাঁড়িপাল্লায় উত্তম চরিত্রের চেয়ে কিছু ভারী হবেনা। আল্লাহ তায়া’লা নির্লজ্জ নোংরা অশ্লীলভাষীকে খুবই অপছন্দ করেন”। (বায়হাকী)
তিনি আরো বলেছেনঃ “তোমাদের মধ্যে আমার নিকট সবচেয়ে প্রিয় ও নিকটতম সেই ব্যক্তি যে চরিত্রে উত্তম, আর তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি আমার সবচেয়ে অপছন্দ ও আখেরাতে আমার সবচেয়ে বেশী দূরে থাকবে যার আখলাক নিকৃষ্টতম; তারা হলোঃ সত্য অতিক্রম করা বাচাল[1], মানুষকে উপহাসকারী যারা সতর্কতা ছাড়াই কথা বলতে থাকে)[2] ও অহংকারী”[3] (যারা মুখ কথায় ভরে রাখে)। (মুসনাদে আহমদ)।
ইসলামে আখলাক একটি পরিপূর্ণ ও ব্যাপক বিষয়। যার শুরুতে রয়েছেঃ
[1] যারা সত্য অতিক্রম করে বেশী করা বলে। [2] যারা সতর্কতা ছাড়াই কথা বলতে থাকে, কেউ কেউ বলেছেনঃ মানুষকে উপহাসকারী, আবার কেউ কেউ বলেছেনঃ যারা কথায় ভণিতা করে। [3] যারা সর্বদা মুখ কথায় ভরপূর রাখে। কেউ কেউ বলেছেন, যারা অহংকারী ও নির্বুদ্ধি।আল্লাহ তায়া’লার সাথে সুন্দর আচরণ তিনটি জিনিসকে শামিল করেঃ
প্রথমতঃ তাঁর উপর ঈমান আনা, তাঁর প্রদত্ত সকল সংবাদকে সত্যয়ণ করে গ্রহণ করা। আল্লাহ তায়া’লা নিজের সম্পর্কে বলেছেনঃ আল্লাহ ব্যতীত আর কোনোই উপাস্য নেই। অবশ্যই তিনি তোমাদেরকে সমবেত করবেন কেয়ামতের দিন, এতে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই। তাছাড়া আল্লাহর চাইতে বেশী সত্য কথা আর কার হবে। (সূরা নিসাঃ ৮৭)
তৃতীয়তঃ তাঁর নির্ধারিত পরিমাণ বা ভাগ্যের উপর সন্তুষ্টি থাকা ও ধৈর্যের সাথে গ্রহণ করা। কেননা আল্লাহর সাথে সুন্দর আচরণ বলতে মানুষ তাঁর নির্ধারিত পরিমাণের উপর খুশী থাকা, আল্লাহর নির্ধারিত ভাগ্য ও ফয়সালায় আত্মসমর্পণ ও পরিতুষ্ট থাকা বুঝায়। এজন্যই আল্লাহ তায়া’লা ধৈর্যশীলদের প্রশংসা করে বলেছেনঃ তবে সুসংবাদ দাও সবরকারীদের। যখন তারা বিপদে পতিত হয়, তখন বলে, নিশ্চয় আমরা সবাই আল্লাহর জন্য এবং আমরা সবাই তাঁরই সান্নিধ্যে ফিরে যাবো। (সূরা বাকারাঃ ১৫৫-১৫৬)
আল্লাহ তায়া’লা সব মানুষের সাথে সদ্ব্যবহার করতে নির্দেশ দিয়েছেন, বিশেষ করে পিতামাতা, আত্মীয়-স্বজন; (যাদের সাথে রক্তের সম্পর্ক রয়েছে ও তাদের সাথে সম্পর্ক রাখা ওয়াজিব) এবং প্রতিবেশী। আল্লাহ তায়া’লা বলেছেনঃ যখন আমি বনী-ইসরাঈলের কাছ থেকে অঙ্গীকার নিলাম যে, তোমরা আল্লাহ ছাড়া কারও উপাসনা করবে না, পিতা-মাতা, আত্নীয়-স্বজন, এতীম ও দীন-দরিদ্রদের সাথে সদ্ব্যবহার করবে, মানুষকে সৎ কথাবার্তা বলবে, নামায প্রতিষ্ঠা করবে এবং যাকাত দেবে, তখন সামান্য কয়েকজন ছাড়া তোমরা মুখ ফিরিয়ে নিলে, তোমরাই অগ্রাহ্যকারী। (সূরা বাকারাঃ ৮৩)
আল্লাহ তায়া’লা আরো বলেনঃ সৎকর্ম শুধু এই নয় যে, পূর্ব কিংবা পশ্চিমদিকে মুখ করবে, বরং বড় সৎকাজ হল এই যে, ঈমান আনবে আল্লাহর উপর কিয়ামত দিবসের উপর, ফেরেশতাদের উপর এবং সমস্ত নবী-রসূলগণের উপর, আর সম্পদ ব্যয় করবে তাঁরই মহব্বতে আত্নীয়-স্বজন, এতীম-মিসকীন, মুসাফির-ভিক্ষুক ও মুক্তিকামী ক্রীতদাসদের জন্যে। আর যারা নামায প্রতিষ্ঠা করে, যাকাত দান করে এবং যারা কৃত প্রতিজ্ঞা সম্পাদনকারী এবং অভাবে, রোগে-শোকে ও যুদ্ধের সময় ধৈর্য্য ধারণকারী তারাই হল সত্যাশ্রয়ী, আর তারাই পরহেযগার। (সূরা বাকারাঃ ১৭৭)
আল্লাহ তায়া’লা আরো বলেনঃ তোমার কাছে জিজ্ঞেস করে, কি তারা ব্যয় করবে? বলে দাও-যে বস্তুই তোমরা ব্যয় কর, তা হবে পিতা-মাতার জন্যে, আত্নীয়-আপনজনের জন্যে, এতীম-অনাথদের জন্যে, অসহায়দের জন্যে এবং মুসাফিরদের জন্যে। আর তোমরা যে কোন সৎকাজ করবে, নিঃসন্দেহে তা অত্যন্ত ভালভাবেই আল্লাহর জানা রয়েছে। (সূরা বাকারাঃ ২১৫)
আল্লাহ তায়া’লা আরো বলেনঃ আর যারা ঈমান এনেছে, নিজেদের ঘর-বাড়ী ছেড়েছে এবং আল্লাহর রাহে জেহাদ করেছে এবং যারা তাদেরকে আশ্রয় দিয়েছে, সাহায্য-সহায়তা করেছে, তাঁরা হলো সত্যিকার মুসলমান। তাঁদের জন্যে রয়েছে, ক্ষমা ও সম্মানজনক রুযী। আর যারা ঈমান এনেছে পরবর্তী পর্যায়ে এবং ঘর-বাড়ী ছেড়েছে এবং তোমাদের সাথে সম্মিলিত হয়ে জেহাদ করেছে, তারাও তোমাদেরই অন্তর্ভুক্ত। বস্তুতঃ যারা আত্নীয়, আল্লাহর বিধান মতে তারা পরস্পর বেশী হকদার। নিশ্চয়ই আল্লাহ যাবতীয় বিষয়ে সক্ষম ও অবগত। (সূরা আনফালঃ ৭৪-৭৫)
আল্লাহ তায়া’লা আরো বলেনঃ আর উপাসনা কর আল্লাহর, শরীক করো না তাঁর সাথে অপর কাউকে। পিতা-মাতার সাথে সৎ ও সদয় ব্যবহার কর এবং নিকটাত্নীয়,এতীম-মিসকীন,প্রতিবেশী, অসহায় মুসাফির এবং নিজের দাস-দাসীর প্রতিও। নিশ্চয়ই আল্লাহ পছন্দ করেন না দাম্ভিক-গর্বিতজনকে। (সূরা নিসাঃ ৩৬)
আল্লাহ তায়া’লা আরো বলেনঃ আল্লাহ ন্যায়পরায়ণতা, সদাচরণ এবং আত্নীয়-স্বজনকে দান করার আদেশ দেন এবং তিনি অশ্লীলতা, অসঙ্গত কাজ এবং অবাধ্যতা করতে বারণ করেন। তিনি তোমাদের উপদেশ দেন যাতে তোমরা স্মরণ রাখ। (সূরা নাহলঃ ৯০)
আল্লাহ তায়া’লা আরো বলেনঃ তোমার পালনকর্তা আদেশ করেছেন যে, তাঁকে ছাড়া অন্য কারও এবাদত করো না এবং পিতা-মাতার সাথে সদ্ব-ব্যবহার কর। তাদের মধ্যে কেউ অথবা উভয়েই যদি তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হয়; তবে তাদেরকে ‘উহ’ শব্দটিও বলো না এবং তাদেরকে ধমক দিও না এবং বল তাদেরকে শিষ্ঠাচারপূর্ণ কথা। তাদের সামনে ভালবাসার সাথে, নম্রভাবে মাথা নত করে দাও এবং বলঃ হে পালনকর্তা, তাদের উভয়ের প্রতি রহম কর, যেমন তারা আমাকে শৈশবকালে লালন-পালন করেছেন। তোমাদের পালনকর্তা তোমাদের মনে যা আছে তা ভালই জানেন। যদি তোমরা সৎ হও, তবে তিনি তওবাকারীদের জন্যে ক্ষমাশীল। আত্নীয়-স্বজনকে তার হক দান কর এবং অভাবগ্রস্ত ও মুসাফিরকেও। এবং কিছুতেই অপব্যয় করো না। নিশ্চয় অপব্যয়কারীরা শয়তানের ভাই। শয়তান স্বীয় পালনকর্তার প্রতি অতিশয় অকৃতজ্ঞ। এবং তোমার পালনকর্তার করুণার প্রত্যাশায় অপেক্ষামান থাকাকালে যদি কোন সময় তাদেরকে বিমুখ করতে হয়, তখন তাদের সাথে নম্রভাবে কথা বল। (সূরা বনী ইসরাঈলঃ ২৩-২৮)
আল্লাহ তায়া’লা আরো বলেনঃ আত্নীয়-স্বজনকে তাদের প্রাপ্য দিন এবং মিসকীন ও মুসাফিরদেরও। এটা তাদের জন্যে উত্তম, যারা আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা করে। তারাই সফলকাম। (সূরা রূমঃ ৩৮)
আল্লাহ তায়া’লা আরো বলেনঃ হে মানব সমাজ! তোমরা তোমাদের পালনকর্তাকে ভয় কর, যিনি তোমাদেরকে এক ব্যক্তি থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং যিনি তার থেকে তার সঙ্গীনীকে সৃষ্টি করেছেন; আর বিস্তার করেছেন তাদের দু’জন থেকে অগণিত পুরুষ ও নারী। আর আল্লাহকে ভয় কর, যাঁর নামে তোমরা একে অপরের নিকট যাচঞ্ঝা করে থাক এবং আত্নীয় জ্ঞাতিদের ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন কর। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের ব্যাপারে সচেতন রয়েছেন। (সূরা নিসাঃ ১)
আল্লাহ তায়া’লা আরো বলেনঃ ক্ষমতা লাভ করলে, সম্ভবতঃ তোমরা পৃথিবীতে অনর্থ সৃষ্টি করবে এবং আত্নীয়তা বন্ধন ছিন্ন করবে। (সূরা মুহাম্মদঃ ২২)
আল্লাহ তায়া’লা আরো বলেনঃ যে ব্যক্তি জানে যে, যা কিছু পালনকর্তার পক্ষ থেকে আপনার প্রতি অবর্তীর্ণ হয়েছে তা সত্য সে কি ঐ ব্যক্তির সমান, যে অন্ধ? তারাই বোঝে, যারা বোধশক্তি সম্পন্ন। এরা এমন লোক, যারা আল্লাহর প্রতিশ্রুতি পূর্ণ করে এবং অঙ্গীকার ভঙ্গ করে না। এবং যারা বজায় রাখে ঐ সম্পর্ক, যা বজায় রাখতে আল্লাহ আদেশ দিয়েছেন এবং স্বীয় পালনকর্তাকে ভয় করে এবং কঠোর হিসাবের আশঙ্কা রাখে। এবং যারা স্বীয় পালনকর্তার সন্তুষ্টির জন্যে সবর করে, নামায প্রতিষ্টা করে আর আমি তাদেরকে যা দিয়েছি, তা থেকে গোপনে ও প্রকাশ্য ব্যয় করে এবং যারা মন্দের বিপরীতে ভাল করে, তাদের জন্যে রয়েছে পরকালের গৃহ। তা হচ্ছে বসবাসের বাগান। তাতে তারা প্রবেশ করবে এবং তাদের সৎকর্মশীল বাপ-দাদা, স্বামী-স্ত্রী ও সন্তানেরা। ফেরেশতারা তাদের কাছে আসবে প্রত্যেক দরজা দিয়ে। বলবেঃ তোমাদের সবরের কারণে তোমাদের উপর শান্তি বর্ষিত হোক। আর তোমাদের এ পরিণাম-গৃহ কতই না চমৎকার। এবং যারা আল্লাহর অঙ্গীকারকে দৃঢ় ও পাকা-পোক্ত করার পর তা ভঙ্গ করে, আল্লাহ যে, সম্পর্ক বজায় রাখতে আদেশ করেছেন, তা ছিন্ন করে এবং পৃথিবীতে অশান্তি সৃষ্টি করে, ওরা ঐ সমস্ত লোক যাদের জন্যে রয়েছে অভিসম্পাত এবং ওদের জন্যে রয়েছে কঠিন আযাব। (সূরা রা’দঃ ১৯-২৫)
ইসলামে সদ্ব্যবহার শুধু বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশীর সাথেই সীমাবদ্ধ নয়; বরং ইহা শত্রুর সাথেও করতে হয়, এমনকি সে যদি তার বিরুদ্ধে যুদ্ধের ময়দানেও থাকে! এভাবেই সদ্ব্যবহার সকল মানুষকে শামিল করে। আল্লাহ তায়া’লা বলেনঃ সমান নয় ভাল ও মন্দ। জওয়াবে তাই বলুন যা উৎকৃষ্ট। তখন দেখবেন আপনার সাথে যে ব্যক্তির শুত্রুতা রয়েছে, সে যেন অন্তরঙ্গ বন্ধু। ( সূরা হা-মীম সিজদাঃ ৩৪)
আল্লাহ তায়া’লা সীমালঙ্ঘন করতে নিষেধ করেছেন, এমনকি যে ব্যক্তি আমাদের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হয় তার সাথেও। আল্লাহ তায়া’লা বলেনঃ আর লড়াই কর আল্লাহর ওয়াস্তে তাদের সাথে, যারা লড়াই করে তোমাদের সাথে। অবশ্য কারো প্রতি বাড়াবাড়ি করো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ সীমালঙ্ঘনকারীদেরকে পছন্দ করেন না। (সূরা বাকারাঃ ১৯০)
ইসলামে যুদ্ধের সময় শত্রুর সাথে সদ্ব্যবহারের নমুনা দেখুন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর সৈন্যবাহিনীকে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদে যাওয়া ও শত্রুর মোকাবিলার সময় নির্দেশ দিয়ে বলেছেনঃ “তোমরা ওয়াদা ভঙ্গ করোনা, গণিমতের মালে খেয়ানত করোনা, নিহতের অঙ্গ কেটে বিকৃত করোনা, শিশু ও গীর্যার লোকদেরকে হত্যা করবে না”। (মুসনাদে আহমদ)। এ ধর্মের আশ্চর্যের ব্যাপার হলো যুদ্ধরত শত্রুর সাথেও ভাল আচরণ করতে নির্দেশ দিয়েছে। আর যুদ্ধ ছাড়া –এমনকি শত্রু হলেও- আল্লাহ তায়া’লা তাদের সাথে সদাচরণ ও ইনসাফ করতে উৎসাহিত করেছেন। আল্লাহ তায়া’লা বলেনঃ ধর্মের ব্যাপারে যারা তোমাদের বিরুদ্ধে লড়াই করেনি এবং তোমাদেরকে দেশ থেকে বহিস্কৃত করেনি, তাদের প্রতি সদাচরণ ও ইনসাফ করতে আল্লাহ তোমাদেরকে নিষেধ করেন না। নিশ্চয় আল্লাহ ইনসাফকারীদেরকে ভালবাসেন। (সূরা মুমতাহিনাঃ ৮)
ইসলামে সদাচরণের পরিধি খুবই ব্যাপক; এমনকি জীব-জন্তুর সাথেও সদাচরণ করতে আদেশ দেয়া হয়েছে। রাসুল বলেছেনঃ “এক মহিলাকে একটি বিড়াল আটকে রেখে হত্যা করার কারণে আযাব দেয়া হয়েছিল, অতঃপর, সে জাহান্নামে প্রবেশ করেছে। সে বিড়ালটিকে আটকে রেখেছে, খাদ্য ও পানীয় দেয়নি, আবার ছেড়েও দেয়নি যে সে জমিনের কীটপতঙ্গ খাবে”। (বুখারী শরিফ)। বরং আল্লাহ তায়া’লা পশু জবাইয়ের সময়ও সদাচরণ করতে আদেশ দিয়েছেন। রাসুল বলেছেনঃ “আল্লাহ তায়া’লা সকলের সাথেই সদাচরণ করতে নির্দেশ দিয়েছেন, যখন তোমরা কোন প্রাণী হত্যা করবে বা জবাই করবে তখন তা উত্তমরূপে কর। সে যেন ছুরিতে ধাঁর দিয়ে নেয়, যাতে জবাইকৃত প্রাণী কষ্ট না পায়”। (মুসলিম শরিফ)।
এমনিভাবে ইসলাম পরিবেশ ও সাধারণ দৃশ্যের সাথেও শিষ্টাচার নিয়ে এসেছে। অপচয় করতে নিষেধ করেছে। এজন্যই প্রাকৃতিক সম্পদকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে বলেছে, ধ্বংস ও ক্ষয় করতে নিষেধ করেছে। আল্লাহ তায়া’লা বলেনঃ আল্লাহর দেয়া রিযিক খাও,পান কর। (সূরা বাকারাঃ ৬০)
আল্লাহ তায়া’লা আরো বলেনঃ এবং সীমালংঘনকারীদের আদেশ মান্য কর না। যারা পৃথিবীতে অনর্থ সৃষ্টি করে এবং শান্তি স্থাপন করে না। (সূরা শু’আরাঃ ১৫১-১৫২)
এমনিভাবে প্রকৃতির অন্যান্য উপাদান যেমনঃ পানি ইত্যাদির ব্যাপারে ইসলাম খুবই গুরুত্বারোপ করেছে। আল্লাহ তায়া’লা বলেনঃ কাফেররা কি ভেবে দেখে না যে, আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর মুখ বন্ধ ছিল, অতঃপর আমি উভয়কে খুলে দিলাম এবং প্রাণবন্ত সবকিছু আমি পানি থেকে সৃষ্টি করলাম। এরপরও কি তারা বিশ্বাস স্থাপন করবে না? (সূরা আম্বিয়াঃ ৩০)
আল্লাহ তায়া’লা আরো বলেনঃ আল্লাহ আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করেছেন, তদ্বারা যমীনকে তার মৃত্যুর পর পুনর্জীবিত করেছেন। নিশ্চয় এতে তাদের জন্যে নিদর্শন রয়েছে, যারা শ্রবণ করে। (সূরা নাহলঃ ৬৫)
কোরআনের পাশাপাশি রাসুল ও পরিবেশ ও এর উপাদানসমূহ রক্ষা করতে অনেক উৎসাহ দিয়েছেন। যেহেতু হাদীসে পরিবেশ সংরক্ষণের ব্যাপারে বার বার তাগিদ দিয়ে আহবান করা হয়েছে; যেন ভূমিধস, খরা ও অনাবৃষ্টি ইত্যাদি প্রাকৃতিক বিপর্যয় হতে রক্ষা পাওয়া যায়।
এ ব্যাপারে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ “তোমরা তিনটি অভিশাপের স্থান থেকে বেঁচে থাক, তা হলোঃ পানি প্রবাহের পথ, (মানুষ চলাচলের) রাস্তা ও ছায়ায় পেশাব পায়খানা করা থেকে বিরত থাক”। (আবু দাউদ শরিফ)। তিনি বলেছেনঃ “কোন মুসলমান যে শস্য বপন করে বা চারা রোপন করে, আর তা থেকে পাখি, মানুষ বা জীব জন্তু খায়, তবে উহা তার জন্য সদকা হবে”। (মুসলিম শরিফ)।
তিনি আরো বলেছেনঃ “যদি কিয়ামত এসে যায়, আর তোমাদের কারো হাতে একটি চারা থাকে, তাহলে যদি পারো তবে উহা রোপণ করো”। (মুসনাদে আহমদ)। একদা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত সা’দ (রাঃ) এর নিকট দিয়ে যাচ্ছিলেন, তিনি অযু করছিলেন। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে বললেনঃ তুমি (আযু করতে পানি বেশী ব্যবহার করে) অপচয় করছ কেন? তিনি বললেনঃ অযু করলেও কি অপচয় হবে? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ, যদিও তুমি প্রবাহমান নদীতে থাক তবুও”। (ইবনে মাজাহ)। সাহাবায়ে কিরামগণ পরিবেশের সাথে সদাচরণ করেছেন, এমনকি যুদ্ধের ময়দানে শত্রুদের সাথেও। হযরত আবু বকর সিদ্দীক (রাঃ) তার সেনাপতিকে উপদেশ দিয়ে বলেছেনঃ “শিশু, নারী, বয়ঃবৃদ্ধকে হত্যা করবে না, ফলদায়ক গাছ কাটবেনা, ছাগল, গরু খাওয়ার উদ্দেশ্য ব্যতীত হত্যা করবে না, ঘরবাড়ি ধ্বংস করবে না, খেজুর গাছ কাটবে না বা জ্বালিয়ে দিবে না”। (মুয়াত্তা মালিক)।
এখানে আল্লাহর কিতাব ও রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাহিস সালামের হাদীসে উত্তম চরিত্র সম্পর্কে যে সব উপদেশ এসেছে, সেগুলোর কিছু পেশ করা হলো। তন্মধ্যেঃ
পবিত্র কোরআনের উপদেশঃ
আল্লাহ তায়া’লা বলেনঃ নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদিগকে নির্দেশ দেন যে, তোমরা যেন প্রাপ্য আমানতসমূহ প্রাপকদের নিকট পৌছে দাও। আর যখন তোমরা মানুষের কোন বিচার-মীমাংসা করতে আরম্ভ কর, তখন মীমাংসা কর ন্যায় ভিত্তিক। আল্লাহ তোমাদিগকে সদুপদেশ দান করেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ শ্রবণকারী, দর্শনকারী। (সূরা নিসাঃ ৫৮)
আল্লাহ তায়া’লা আরো বলেনঃ আপনি বলুনঃ এস, আমি তোমাদেরকে ঐসব বিষয় পাঠ করে শুনাই, যেগুলো তোমাদের প্রতিপালক তোমাদের জন্যে হারাম করেছেন। তাএই যে, আল্লাহর সাথে কোন কিছুকে অংশীদার করো না, পিতা-মাতার সাথে সদয় ব্যবহার করো স্বীয় সন্তানদেরকে দারিদ্রের কারণে হত্যা করো না, আমি তোমাদেরকে ও তাদেরকে আহার দেই, নির্লজ্জতার কাছেও যেয়ো না, প্রকাশ্য হোক কিংবা অপ্রকাশ্য, যাকে হত্যা করা আল্লাহ হারাম করেছেন, তাকে হত্যা করো না; কিন্তু ন্যায়ভাবে। তোমাদেরকে এ নির্দেশ দিয়েছেন, যেন তোমরা বুঝ। এতীমদের ধনসম্পদের কাছেও যেয়ো না; কিন্তু উত্তম পন্থায় যে পর্যন্ত সে বয়ঃপ্রাপ্ত না হয়। ওজন ও মাপ পূর্ণ কর ন্যায় সহকারে। আমি কাউকে তার সাধ্যের অতীত কষ্ট দেই না। যখন তোমরা কথা বল, তখন সুবিচার কর, যদিও সে আত্নীয়ও হয়। আল্লাহর অঙ্গীকার পূর্ণ কর। তোমাদেরকে এ নির্দেশ দিয়েছেন, যেন তোমরা উপদেশ গ্রহণ কর। নিশ্চিত এটি আমার সরল পথ। অতএব, এ পথে চল এবং অন্যান্য পথে চলো না। তা হলে সেসব পথ তোমাদেরকে তাঁর পথ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিবে। তোমাদেরকে এ নির্দেশ দিয়েছেন, যাতে তোমরা সংযত হও। (সূরা আন’আমঃ ১৫১-১৫৩)
আল্লাহ তায়া’লা আরো বলেনঃ পৃথিবীকে কুসংস্কারমুক্ত ও ঠিক করার পর তাতে অনর্থ সৃষ্টি করো না। তাঁকে আহবান কর ভয় ও আশা সহকারে। নিশ্চয় আল্লাহর করুণা সৎকর্মশীলদের নিকটবর্তী। (সূরা আ’রাফঃ ৫৬)
আল্লাহ তায়া’লা আরো বলেনঃ আর ধৈর্য্যধারণ কর, নিশ্চয়ই আল্লাহ পূণ্যবানদের প্রতিদান বিনষ্ট করেন না। (সূরা হুদঃ ১১৫)
আল্লাহ তায়া’লা আরো বলেনঃ তুমি একেবারে ব্যয়-কুষ্ঠ হয়োনা এবং একেবারে মুক্ত হস্তও হয়ো না। তাহলে তুমি তিরস্কৃতি, নিঃস্ব হয়ে বসে থাকবে। নিশ্চয় তোমার পালকর্তা যাকে ইচ্ছা অধিক জীবনোপকরণ দান করেন এবং তিনিই তা সংকুচিতও করে দেন। তিনিই তাঁর বান্দাদের সম্পর্কে ভালোভাবে অবহিত,-সব কিছু দেখছেন। দারিদ্রের ভয়ে তোমাদের সন্তানদেরকে হত্যা করো না। তাদেরকে এবং তোমাদেরকে আমিই জীবনোপকরণ দিয়ে থাকি। নিশ্চয় তাদেরকে হত্যা করা মারাত্নক অপরাধ। আর ব্যভিচারের কাছেও যেয়ো না। নিশ্চয় এটা অশ্লীল কাজ এবং মন্দ পথ। সে প্রাণকে হত্যা করো না, যাকে আল্লাহ হারাম করেছেন; কিন্তু ন্যায়ভাবে। যে ব্যক্তি অন্যায়ভাবে নিহত হয়, আমি তার উত্তরাধিকারীকে ক্ষমতা দান করি। অতএব, সে যেন হত্যার ব্যাপারে সীমা লঙ্ঘন না করে। নিশ্চয় সে সাহায্যপ্রাপ্ত। আর, এতিমের মালের কাছেও যেয়ো না, একমাত্র তার কল্যাণ আকাংখা ছাড়া; সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির যৌবনে পদার্পন করা পর্যন্ত এবং অঙ্গীকার পূর্ন কর। নিশ্চয় অঙ্গীকার সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। মেপে দেয়ার সময় পূর্ণ মাপে দেবে এবং সঠিক দাঁড়িপালায় ওজন করবে। এটা উত্তম; এর পরিণাম শুভ। যে বিষয়ে তোমার কোন জ্ঞান নেই, তার পিছনে পড়ো না। নিশ্চয় কান, চক্ষু ও অন্তঃকরণ এদের প্রত্যেকটিই জিজ্ঞাসিত হবে। পৃথিবীতে দম্ভভরে পদচারণা করো না। নিশ্চয় তুমি তো ভূ পৃষ্ঠকে কখনই বিদীর্ণ করতে পারবে না এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না। এ সবের মধ্যে যেগুলো মন্দকাজ, সেগুলো তোমার পালনকর্তার কাছে অপছন্দনীয়। এটা ঐ হিকমতের অন্তর্ভূক্ত, যা আপনার পালনকর্তা আপনাকে ওহী মারফত দান করেছেন। আল্লাহর সাথে অন্য কোন উপাস্য স্থির করবেন না। তাহলে অভিযুক্ত ও আল্লাহর অনুগ্রহ থেকে বিতাড়িত অবস্থায় জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবেন। (সূরা বনী ইসরাঈলঃ ২৯-৩৯)
আল্লাহ তায়া’লা আরো বলেনঃ তোমরা তোমাদের পালনকর্তার ক্ষমা এবং জান্নাতের দিকে ছুটে যাও যার সীমানা হচ্ছে আসমান ও যমীন, যা তৈরী করা হয়েছে পরহেযগারদের জন্য। যারা স্বচ্ছলতায় ও অভাবের সময় ব্যয় করে, যারা নিজেদের রাগকে সংবরণ করে আর মানুষের প্রতি ক্ষমা প্রদর্শন করে, বস্তুতঃ আল্লাহ সৎকর্মশীলদিগকেই ভালবাসেন। (সূরা আলে ইমরানঃ ১৩৩-১৩৪)
আল্লাহ তায়া’লা আরো বলেনঃ মুমিনগণ, কেউ যেন অপর কাউকে উপহাস না করে। কেননা, সে উপহাসকারী অপেক্ষা উত্তম হতে পারে এবং কোন নারী অপর নারীকেও যেন উপহাস না করে। কেননা, সে উপহাসকারিণী অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ হতে পারে। তোমরা একে অপরের প্রতি দোষারোপ করো না এবং একে অপরকে মন্দ নামে ডেকো না। কেউ বিশ্বাস স্থাপন করলে তাদের মন্দ নামে ডাকা গোনাহ। যারা এহেন কাজ থেকে তওবা না করে তারাই যালেম। মুমিনগণ, তোমরা অনেক ধারণা থেকে বেঁচে থাক। নিশ্চয় কতক ধারণা গোনাহ। এবং গোপনীয় বিষয় সন্ধান করো না। তোমাদের কেউ যেন কারও পশ্চাতে নিন্দা না করে। তোমাদের কেউ কি তারা মৃত ভ্রাতার মাংস ভক্ষণ করা পছন্দ করবে? বস্তুতঃ তোমরা তো একে ঘৃণাই কর। আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ তওবা কবুলকারী, পরম দয়ালু। হে মানব, আমি তোমাদেরকে এক পুরুষ ও এক নারী থেকে সৃষ্টি করেছি এবং তোমাদেরকে বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে বিভক্ত করেছি, যাতে তোমরা পরস্পরে পরিচিতি হও। নিশ্চয় আল্লাহর কাছে সে-ই সর্বাধিক সম্ভ্রান্ত যে সর্বাধিক পরহেযগার। নিশ্চয় আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সবকিছুর খবর রাখেন। (সূরা হুজরাতঃ ১১-১৩)
আল্লাহ তায়া’লা আরো বলেনঃ হে বৎস, নামায কায়েম কর, সৎকাজে আদেশ দাও, মন্দকাজে নিষেধ কর এবং বিপদাপদে সবর কর। নিশ্চয় এটা সাহসিকতার কাজ। অহংকারবশে তুমি মানুষকে অবজ্ঞা করো না এবং পৃথিবীতে গর্বভরে পদচারণ করো না। নিশ্চয় আল্লাহ কোন দাম্ভিক অহংকারীকে পছন্দ করেন না। পদচারণায় মধ্যবর্তিতা অবলম্বন কর এবং কন্ঠস্বর নীচু কর। নিঃসন্দেহে গাধার স্বরই সর্বাপেক্ষা অপ্রীতিকর। (সূরা লোকমানঃ ১৭-১৯)
আল্লাহ তায়া’লা আরো বলেনঃ রহমান-এর বান্দা তারাই, যারা পৃথিবীতে নম্রভাবে চলাফেরা করে এবং তাদের সাথে যখন মুর্খরা কথা বলতে থাকে, তখন তারা বলে,সালাম। (সূরা ফুরকানঃ ৬৩)
আল্লাহ তায়া’লা আরো বলেনঃ আর উপাসনা কর আল্লাহর, শরীক করো না তাঁর সাথে অপর কাউকে। পিতা-মাতার সাথে সৎ ও সদয় ব্যবহার কর এবং নিকটাত্নীয়, এতীম-মিসকীন, প্রতিবেশী, অসহায় মুসাফির এবং নিজের দাস-দাসীর প্রতিও। নিশ্চয়ই আল্লাহ পছন্দ করেন না দাম্ভিক-গর্বিতজনকে। (সূরা নিসাঃ ৩৬)
আল্লাহ তায়া’লা আরো বলেনঃ আল্লাহর রহমতেই আপনি তাদের জন্য কোমল হৃদয় হয়েছেন পক্ষান্তরে আপনি যদি রাগ ও কঠিন হৃদয় হতেন তাহলে তারা আপনার কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতো। কাজেই আপনি তাদের ক্ষমা করে দিন এবং তাদের জন্য মাগফেরাত কামনা করুন এবং কাজে কর্মে তাদের পরামর্শ করুন। অতঃপর যখন কোন কাজের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে ফেলেন, তখন আল্লাহ তা’আলার উপর ভরসা করুন আল্লাহ তাওয়াক্কুল কারীদের ভালবাসেন। (সূরা আলে ইমরানঃ ১৫৯)
রাসুলের (সাঃ) হাদীসের উপদেশঃ
আমরা যদি রাসুলের হাদীসের বাগানে যাই তবে দেখব সেখানে ঈমানের অসংখ্য গাছ পালা রয়েছে, যা থেকে আমরা উত্তম চরিত্র ও সদাচরণের মৌলিক রীতি নীতির পক্ক ফল আহরণ করতে পারি। তন্মধ্যে কয়েকটি হলোঃ
-রাসুল বলেছেনঃ “প্রত্যেক দুর্বল, নম্র, সহজ ও মানুষের নিকটতম ব্যক্তিদের উপর জাহান্নাম হারাম করা হয়েছে”। (তিরমিজি)।
- রাসুল তাঁর এক সাহাবীকে বলেছেনঃ “তোমার মাঝে দু’টি বৈশিষ্ট্য আছে, যা আল্লাহ তায়া’লা পছন্দ করেনঃ ধৈর্যশীলতা ও ধীরতা”। (মুসনাদে আহমদ)।
- তিনি আরো বলেছেনঃ “আমার নিকট যে মাল থাকে তা তোমাদের না দিয়ে আমার নিকট জমা রাখি না। তবে, যে যাচনা থেকে বিরত থাকে, আল্লাহ তাকে বাঁচিয়ে রাখেন আর যে পরমুখাপেক্ষী না হয়, আল্লাহ তাকে অভাবমুক্ত রাখেন। যে ধৈর্য ধারন করে, আল্লাহ তাকে সবর দান করেন। সবরের চেয়ে উত্তম ও ব্যাপক কোন নিয়ামত কাউকে দেওয়া হয়নি”। (মুসলিম)
-তিনি অন্যত্রে বলেছেনঃ “বৈষয়িক প্রাচুর্য ঐশ্বর্য নয়; বুরং প্রকৃত ঐশ্বর্য হল অন্তরের ঐশ্বর্য”। (বুখারী)
-তিনি আর বলেছেনঃ “প্রকৃত বীর সে নয়, যে কাউকে কুস্তীতে হারিয়ে দেয়। বরং সেই প্রকৃত বাহাদুর যে ক্রোধের সময় নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম”। (বুখারী)।
- তিনি বলেছেনঃ “যে মানুষের শুকরিয়া করেনা, সে আল্লাহ তায়া’লারও শুকরিয়া জ্ঞাপন করেনা”। (মুসনাদে আহমদ)।
তিনি অন্যত্রে বলেছেনঃ “সব ভাল কাজই সদাকা, হাসি খুশী চেহারায় কারো সাথে মিলত হওয়া ও তোমার বালতি থেকে তোমার ভাইয়ের বালতি ভরে দেয়াও (বিশেষ করে যখন পানি উঠানোর রশি না থাকে) সৎকাজের অন্তর্ভুক্ত। (তিরমিজি)।
পরিশেষে বলব, প্রকৃত সুখ ও উত্তম আখলাকের মাঝে গভীর সম্পর্ক বিদ্যমান। উত্তম চরিত্রই মানব সন্তানের একমাত্র সুখ-শান্তির পথ। উত্তম আখলাক ছাড়া শান্তি আসতে পারে না। আখলাক ব্যতীত মানুষ জীবনে হতাশা, দুঃখ, দুর্দশা, বিষণ্ণতা ও কষ্ট ছাড়া কিছুই লাভ করতে পারে না। অতঃএব, সুখ-শান্তি হলো মানুষকে সুন্দর চরিত্র অর্জনের দিকে ধাবিতকারী অন্যতম গুরুত্বপূর্ন বিষয়। কেননা সে নিশ্চিতভাবে জানে যে, সচ্চরিত্র ব্যতীত কখনও প্রকৃত সুখ আসতে পারে না, এমনকি একদিনের জন্যও কোন আনন্দ-খুশী আসে না।