বনী ইসরাইল নিজেরা কিতাব পাঠ জানতে পারল যে, ইবরাহীমের (আঃ) বংশধর থেকে একজন বালকের আবির্ভাব হবেন যার হাতে মিশরের সম্রাটের ধ্বংস হবে। বনী ইসরাইলের মাঝে এ সুসংবাদ সকলেরই জ্ঞাত ছিল। এ খবর কতিপয় লোকদের মাধ্যমে ফেরাউনের কানে গেল। সে তখন বনী ইসরাইলের সব পুত্র সন্তান হত্যার নির্দেশ দিল, যাতে করে সে সন্তানের আবির্ভাব না হতে পারে। ফলে বনী ইসরাইলরা ফেরাউনের সময় অনেক জুলুম, অত্যাচার ও নির্যাতনের মাঝে বসবাস করত। ফেরাউন তার দেশে উদ্ধত হয়েছিল এবং সে দেশবাসীকে বিভিন্ন দলে বিভক্ত করে তাদের একটি দলকে দূর্বল করে দিয়েছিল। সে তাদের পুত্র-সন্তানদেরকে হত্যা করত এবং নারীদেরকে জীবিত রাখত। নিশ্চয় সে ছিল অনর্থ সৃষ্টিকারী। (কাসাসঃ ৪)
আল্লাহ তায়া’লা অসহায় বনী ইসরাইলদেরকে দয়া ও রহমত করতে চাইলেনঃদেশে যাদেরকে দূর্বল করা হয়েছিল, আমার ইচ্ছা হল তাদের প্রতি অনুগ্রহ করার, তাদেরকে নেতা করার এবং তাদেরকে দেশের উত্তরাধিকারী করার। এবং তাদেরকে দেশের ক্ষমতায় আসীন করার এবং ফেরাউন, হামান ও তাদের সৈন্য-বাহিনীকে তা দেখিয়ে দেয়ার, যা তারা সেই দূর্বল দলের তরফ থেকে আশংকা করত। (কাসাসঃ ৫-৬)
যদিও মূছা (আঃ) এর আবির্ভাব যাতে না হতে পারে সে জন্য ফেরাউন সব ধরণের সতর্কতা অবলম্বন করল, এমনকি তার লোকেরা গর্ভবর্তীদের কাছে গিয়ে প্রসবের সময় সম্পর্কে খবর নিত, অতঃপর যখনই কোন পুত্র সন্তান জন্মগ্রহণ করত তখনই তাকে হত্যা করা হত। কিন্তু আল্লাহ তায়া’লা ফেরাউন, হামান ও তাদের সৈন্যবাহিনীকে তার কুদরত দেখাতে চাইলেন, তারা যে কারণে ভয় করত তাই তিনি বাস্তবায়ন করে দেখালেন।
মূছা (আঃ) এর জননী যখন তাকে জন্ম দিলেনঃ আমি মূসা-জননীকে আদেশ পাঠালাম যে, তাকে স্তন্য দান করতে থাক। অতঃপর যখন তুমি তার সম্পর্কে বিপদের আশংকা কর, তখন তাকে দরিয়ায় নিক্ষেপ কর এবং ভয় করো না, দুঃখও করো না। আমি অবশ্যই তাকে তোমার কাছে ফিরিয়ে দেব এবং তাকে পয়গম্বরগণের একজন করব। (কাসাসঃ ৭)
তিনি তার সন্তানের ব্যাপারে ভীত হলেন, তিনি তাকে একটি কাঠের বাক্সে করে সমুদ্রে ভাসিয়ে দিলেন।অতঃপর ফেরাউন পরিবার মূসাকে কুড়িয়ে নিল, যাতে তিনি তাদের শত্রু ও দুঃখের কারণ হয়ে যান। নিশ্চয় ফেরাউন, হামান, ও তাদের সৈন্যবাহিনী অপরাধী ছিল। (কাসাসঃ ৮)
ফেরাউনের স্ত্রীর মনে মূছা (আঃ) এর প্রতি ভালবাসা জাগিয়ে দেয়া হলো।ফেরাউনের স্ত্রী বলল,এ শিশু আমার ও তোমার নয়নমণি, তাকে হত্যা করো না। এ আমাদের উপকারে আসতে পারে অথবা আমরা তাকে পুত্র করে নিতে পারি। প্রকৃতপক্ষে পরিণাম সম্পর্কে তাদের কোন খবর ছিল না। (কাসাসঃ ৯)
আর মূছা (আঃ) এর মাঃসকালে মূসা জননীর অন্তর অস্থির হয়ে পড়ল। যদি আমি তাঁর হৃদয়কে দৃঢ় করে না দিতাম, তবে তিনি মূসাজনিত অস্থিরতা প্রকাশ করেই দিতেন। দৃঢ় করলাম, যাতে তিনি থাকেন বিশ্ববাসীগণের মধ্যে। তিনি মূসার ভগিণীকে বললেন, তার পেছন পেছন যাও। সে তাদের অজ্ঞাতসারে অপরিচিতা হয়ে তাকে দেখে যেতে লাগল। (কাসাসঃ ১০-১১) পূর্ব থেকেই আমি ধাত্রীদেরকে মূসা থেকে বিরত রেখেছিলাম। মূসার ভগিনী বলল, আমি তোমাদেরকে এমন এক পরিবারের কথা বলব কি, যারা তোমাদের জন্যে একে লালন-পালন করবে এবং তারা হবে তার হিতাকাঙ্ক্ষী? অতঃপর আমি তাকে জননীর কাছে ফিরিয়ে দিলাম, যাতে তার চক্ষু জুড়ায় এবং তিনি দুঃখ না করেন এবং যাতে তিনি জানেন যে, আল্লাহর ওয়াদা সত্য, কিন্তু অনেক মানুষ তা জানে না। (কাসাসঃ ১২-১৩)
মূছা (আঃ) অত্যাচারী সীমালঙ্ঘনকারী ফেরাউনের গৃহে বড় হতে লাগলেনঃ যখন মূসা যৌবনে পদার্পন করলেন এবং পরিণত বয়স্ক হয়ে গেলেন, তখন আমি তাঁকে প্রজ্ঞা ও জ্ঞানদান করলাম। এমনিভাবে আমি সৎকর্মীদেরকে প্রতিদান দিয়ে থাকি। তিনি শহরে প্রবেশ করলেন, যখন তার অধিবাসীরা ছিল বেখবর। তথায় তিনি দুই ব্যক্তিকে লড়াইরত দেখলেন। এদের একজন ছিল তাঁর নিজ দলের এবং অন্য জন তাঁর শত্রু দলের। অতঃপর যে তাঁর নিজ দলের সে তাঁর শত্রু দলের লোকটির বিরুদ্ধে তাঁর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করল। তখন মূসা তাকে ঘুষি মারলেন এবং এতেই তার মৃত্যু হয়ে গেল। মূসা বললেন, এটা শয়তানের কাজ। নিশ্চয় সে প্রকাশ্য শত্রু, বিভ্রান্তকারী। তিনি বললেন, হে আমার পালনকর্তা, আমি তো নিজের উপর জুলুম করে ফেলেছি। অতএব, আমাকে ক্ষমা করুন। আল্লাহ তাকে ক্ষমা করলেন। নিশ্চয় তিনি ক্ষমাশীল, দয়ালু। তিনি বললেন, হে আমার পালনকর্তা, আপনি আমার প্রতি যে অনুগ্রহ করেছেন, এরপর আমি কখনও অপরাধীদের সাহায্যকারী হব না। (কাসাসঃ ১৪-১৭)
কিন্তু যখন তিনি তার ও বনী ইসরাইলদের শত্রুকে হত্যা করলেনঃঅতঃপর তিনি প্রভাতে উঠলেন সে শহরে ভীত-শংকিত অবস্থায়। হঠাৎ তিনি দেখলেন, গতকল্য যে ব্যক্তি তাঁর সাহায্য চেয়েছিল, সে চিৎকার করে তাঁর সাহায্য প্রার্থনা করছে। মূসা তাকে বললেন, তুমি তো একজন প্রকাশ্য পথভ্রষ্ট ব্যক্তি। অতঃপর মূসা যখন উভয়ের শত্রুকে শায়েস্তা করতে চাইলেন, তখন সে বলল, গতকল্য তুমি যেমন এক ব্যক্তিকে হত্যা করেছিলে, সে রকম আমাকেও কি হত্যা করতে চাও? তুমি তো পৃথিবীতে স্বৈরাচারী হতে চাচ্ছ এবং সন্ধি স্থাপনকারী হতে চাও না। এসময় শহরের প্রান্ত থেকে একব্যক্তি ছুটে আসল এবং বলল, হে মূসা, রাজ্যের পরিষদবর্গ তোমাকে হত্যা করার পরমর্শ করছে। অতএব, তুমি বের হয়ে যাও। আমি তোমার হিতাকাঙ্ক্ষী। অতঃপর তিনি সেখান থেকে ভীত অবস্থায় বের হয়ে পড়লেন পথ দেখতে দেখতে। তিনি বললেন, হে আমার পালনকর্তা, আমাকে জালেম সম্প্রদায়ের কবল থেকে রক্ষা কর। (কাসাসঃ ১৮-২১)
তখন তিনি মিশর থেকে মাদায়েনের দিকে রওয়ানা হলেন। যখন তিনি মাদইয়ান অভিমুখে রওয়ানা হলেন তখন বললেন, আশা করা যায় আমার পালনকর্তা আমাকে সরল পথ দেখাবেন। যখন তিনি মাদইয়ানের কূপের ধারে পৌছলেন, তখন কূপের কাছে একদল লোককে পেলেন তারা জন্তুদেরকে পানি পান করানোর কাজে রত। এবং তাদের পশ্চাতে দূ’জন স্ত্রীলোককে দেখলেন তারা তাদের জন্তুদেরকে আগলিয়ে রাখছে। তিনি বললেন, তোমাদের কি ব্যাপার? তারা বলল, আমরা আমাদের জন্তুদেরকে পানি পান করাতে পারি না, যে পর্যন্ত রাখালরা তাদের জন্তুদেরকে নিয়ে সরে না যায়। আমাদের পিতা খুবই বৃদ্ধ। অতঃপর মূসা তাদের জন্তুদেরকে পানি পান করালেন। অতঃপর তিনি ছায়ার দিকে সরে গেলেন এবং বললেন, হে আমার পালনকর্তা, তুমি আমার প্রতি যে অনুগ্রহ নাযিল করবে, আমি তার মুখাপেক্ষী। (কাসাসঃ ২২-২৪)
দু’কন্যা তাদের পিতা – আল্লাহর নবী শোয়াইব (আঃ)- কে তার কাজ সম্পর্কে অবহিত করলেন, শোয়াইব (আঃ) এক কন্যাকে মূছা (আঃ) এর নিকট পাঠালেন। অতঃপর বালিকাদ্বয়ের একজন লজ্জাজড়িত পদক্ষেপে তাঁর কাছে আগমন করল। বলল, আমার পিতা আপনাকে ডাকছেন, যাতে আপনি যে আমাদেরকে পানি পান করিয়েছেন,তার বিনিময়ে পুরস্কার প্রদান করেন। (কাসাসঃ ২৫)
মূছা (আঃ) শোয়াইব (আঃ) নিকট এলেন। অতঃপর মূসা যখন তাঁর কাছে গেলেন এবং সমস্ত বৃত্তান্ত বর্ণনা করলেন, তখন তিনি বললেন, ভয় করো না, তুমি জালেম সম্প্রদায়ের কবল থেকে রক্ষা পেয়েছ। (কাসাসঃ ২৫)
তার আমানতদারিতা দেখে কন্যাদের একজন বললঃবালিকাদ্বয়ের একজন বলল পিতাঃ তাকে চাকর নিযুক্ত করুন। কেননা,আপনার চাকর হিসেবে সে-ই উত্তম হবে,যে শক্তিশালী ও বিশ্বস্ত। (কাসাসঃ ২৬)
শোয়াইব (আঃ) মূছা (আঃ) এর কাছে এক কন্যাকে বিবাহ করতে অনুরোধ করলেনঃ পিতা মূসাকে বললেন, আমি আমার এই কন্যাদ্বয়ের একজনকে তোমার সাথে বিবাহে দিতে চাই এই শর্তে যে, তুমি আট বছর আমার চাকুরী করবে, যদি তুমি দশ বছর পূর্ণ কর, তা তোমার ইচ্ছা। আমি তোমাকে কষ্ট দিতে চাই না। আল্লাহ চাহেন তো তুমি আমাকে সৎকর্মপরায়ণ পাবে। মূসা বললেন, আমার ও আপনার মধ্যে এই চুক্তি স্থির হল। দু’টি মেয়াদের মধ্য থেকে যে কোন একটি পূর্ণ করলে আমার বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ থাকবে না। আমরা যা বলছি, তাতে আল্লাহর উপর ভরসা। (কাসাসঃ ২৭-২৮)
মূছা (আঃ) সেখানে চুক্তিকৃত নির্ধারিত দিন কাটিয়ে পরিবার নিয়ে দেশে রওয়ানা হলেনঃ অতঃপর মূসা (আঃ) যখন সেই মেয়াদ পূর্ণ করল এবং সপরিবারে যাত্রা করল, তখন সে তুর পর্বতের দিক থেকে আগুন দেখতে পেল। সে তার পরিবারবর্গকে বলল, তোমরা অপেক্ষা কর, আমি আগুন দেখেছি। সম্ভবতঃ আমি সেখান থেকে তোমাদের কাছে কোন খবর নিয়ে আসতে পারি অথবা কোন জ্বলন্ত কাষ্ঠখন্ড আনতে পারি, যাতে তোমরা আগুন পোহাতে পার। (কাসাসঃ ২৯)
তখন আল্লাহ তায়া’লা তাঁর কাছে ওহী পাঠালেনঃ যখন সে তার কাছে পৌছল, তখন পবিত্র ভূমিতে অবস্থিত উপত্যকার ডান প্রান্তের বৃক্ষ থেকে তাকে আওয়াজ দেয়া হল, হে মূসা! আমি আল্লাহ, বিশ্ব পালনকর্তা। আরও বলা হল, তুমি তোমার লাঠি নিক্ষেপ কর। অতঃপর যখন সে লাঠিকে সর্পের ন্যায় দৌড়াদৌড়ি করতে দেখল, তখন সে মুখ ফিরিয়ে বিপরীত দিকে পালাতে লাগল এবং পেছন ফিরে দেখল না। হে মূসা, সামনে এস এবং ভয় করো না। তোমার কোন আশংকা নেই। তোমার হাত বগলে রাখ। তা বের হয়ে আসবে নিরাময় উজ্জ্বল হয়ে এবং ভয় হেতু তোমার হাত তোমার উপর চেপে ধর। এই দু’টি ফেরাউন ও তার পরিষদবর্গের প্রতি তোমার পালনকর্তার তরফ থেকে প্রমাণ। নিশ্চয় তারা পাপাচারী সম্প্রদায়। (কাসাসঃ ৩০-৩২)
কিন্তু মূছা (আঃ) ইতিপূর্বে তার শত্রুকে হত্যার কারণে ফেরাউনের ভয় পাচ্ছিলেন, এছাড়াও তার জিহ্বার জড়তার কারণেওঃ মূসা বলল, হে আমার পালনকর্তা, আমি তাদের এক ব্যক্তিকে হত্যা করেছি। কাজেই আমি ভয় করছি যে, তারা আমাকে হত্যা করবে। আমার ভাই হারুণ, সে আমা অপেক্ষা প্রাঞ্জলভাষী। অতএব, তাকে আমার সাথে সাহায্যের জন্যে প্রেরণ করুন। সে আমাকে সমর্থন জানাবে। আমি আশংকা করি যে, তারা আমাকে মিথ্যাবাদী বলবে। (কাসাসঃ ৩৩-৩৪)
তিনি আল্লাহর কাছে তার ভাই হারুন (আঃ) কে সহযোগী হিসেবে চাইলেনঃ এবং আমার পরিবারবর্গের মধ্য থেকে আমার একজন সাহায্যকারী করে দিন। আমার ভাই হারুনকে। তার মাধ্যমে আমার কোমর মজবুত করুন। এবং তাকে আমার কাজে অংশীদার করুন। যাতে আমরা বেশী করে আপনার পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষনা করতে পারি। এবং বেশী পরিমাণে আপনাকে স্মরণ করতে পারি। আপনি তো আমাদের অবস্থা সবই দেখছেন। আল্লাহ বললেনঃ হে মূসা, তুমি যা চেয়েছ তা তোমাকে দেয়া হল। (ত্বহাঃ ২৯-৩৬)
তারা দু’জন যখন ফেরাউনের নিকট গিয়ে , তাকে এক আল্লাহর তাওহীদের দিকে ডাকলেন, যার কোন শরিক নেই, এবং বন্দী বনী ইসরাইলদেরকে মুক্ত করে দিতে বললেন, তাদেরকে ছেড়ে দিতে বললেন যেন তারা নিজেদের ইচ্ছামত প্রভুর ইবাদত করতে পারে, তারা যেন তাওহীদের উপর চলতে পারে ও এক আল্লাহর কাছেই নত শিকার করে, তখন এতে ফেরাউন দম্ভ ও অহংকার করল। সে মূছা (আঃ) এর দিকে অবমাননা ও প্রতিশোধের দৃষ্টিতে তাকিয়েবললঃ ফেরাউন বলল, আমরা কি তোমাকে শিশু অবস্থায় আমাদের মধ্যে লালন-পালন করিনি? এবং তুমি আমাদের মধ্যে জীবনের বহু বছর কাটিয়েছ। তুমি সেই-তোমরা অপরাধ যা করবার করেছ। তুমি হলে কৃতঘ্ন। (শুয়ারাঃ ১৮-১৯)
মূছা (আঃ) তাকে জবাব দিলেনঃ মূসা বলল, আমি সে অপরাধ তখন করেছি, যখন আমি ভ্রান্ত ছিলাম। (শুয়ারাঃ ২০)
অর্থাৎ আমার উপর অহী নাযিলের আগে। অতঃপর আমি ভীত হয়ে তোমাদের কাছ থেকে পলায়ন করলাম। এরপর আমার পালনকর্তা আমাকে প্রজ্ঞা দান করেছেন এবং আমাকে পয়গম্বর করেছেন। (শুয়ারাঃ ২১)
এরপরে ফেরাউন তাকে (আঃ) লালন পালনে করেছে বলে যে সব দয়ার কথা বললেন তার উত্তরে তিনি বললেনঃ আমার প্রতি তোমার যে অনুগ্রহের কথা বলছ, তা এই যে, তুমি বনী-ইসলাঈলকে গোলাম বানিয়ে রেখেছ। (শুয়ারাঃ ২২)
অর্থাৎ আমাকে লালন পালনের সে সব অনুগ্রহের কথা তুমি বললে , আর আমি নিজে বনী ইসরাইলের একজন যাদেরকে তুমি গোলাম করে রেখেছ, তারা তোমার সব খেদমত করতেছে। অতঃপর ফেরাউন মূছা (আঃ) য রবের দিকে ডাকেন সে রবের ব্যাপারে বলতে বললঃ ফেরাউন বলল, বিশ্বজগতের পালনকর্তা আবার কি? (শুয়ারাঃ ২৩)
মূছা (আঃ) যথাযথভাবে জবাব দিলেনঃ মূসা বলল, তিনি নভোমন্ডল, ভূমন্ডল ও এতদুভয়ের মধ্যবর্তী সবকিছুর পালনকর্তা যদি তোমরা বিশ্বাসী হও। (শুয়ারাঃ ২৪)
এতে ফেরাউন উপহাস করতে লাগলঃ ফেরাউন তার পরিষদবর্গকে বলল, তোমরা কি শুনছ না? (শুয়ারাঃ ২৫)
কিন্তু মূছা (আঃ) তাঁর দাওয়াত চালিয়ে গেলেনঃ মূসা বলল, তিনি তোমাদের পালনকর্তা এবং তোমাদের পূর্ববর্তীদেরও পালনকর্তা। (শুয়ারাঃ ২৬)
কিন্তু ফেরাউনের দম্ভ ও অহংকার বেড়েই চললঃ ফেরাউন বলল, তোমাদের প্রতি প্রেরিত তোমাদের রসূলটি নিশ্চয়ই বদ্ধ পাগল। (শুয়ারাঃ ২৭)
কিন্তু আল্লাহর নবী মূছা (আঃ) তার দাওয়াতি কাজ থেকে ক্ষান্ত হননি। মূসা বলল, তিনি পূর্ব, পশ্চিম ও এতদুভয়ের মধ্যবর্তী সব কিছুর পালনকর্তা, যদি তোমরা বোঝ। (শুয়ারাঃ ২৮)
অত্যাচারী, অহংকারী দাম্ভিক রাজা ফেরাউন যুক্তি তর্ক, বিবেক বুদ্ধি বাদ দিয়ে হুমকি ধমকি দিতে লাগল। ফেরাউন বলল, তুমি যদি আমার পরিবর্তে অন্যকে উপাস্যরূপে গ্রহণ কর তবে আমি অবশ্যই তোমাকে কারাগারে নিক্ষেপ করব। (শুয়ারাঃ ২৯)
মূছা (আঃ) কে যেভাবে অবমাননা ও উপহাস দাওয়াতী কাজ থেকে বিরত রাখতে পারেনি, তেমনিভাবে ফেরাউনের হুমকি ধমকিও তাকে সে কাজ থেকে বিরত রাখতে পারেনি। মূসা বলল, আমি তোমার কাছে কোন স্পষ্ট বিষয় নিয়ে আগমন করলেও কি? ফেরাউন বলল, তুমি সত্যবাদী হলে তা উপস্থিত কর। অতঃপর তিনি লাঠি নিক্ষেপ করলে মুহূর্তের মধ্যে তা সুস্পষ্ট অজগর হয়ে গেল। আর তিনি তার হাত বের করলেন, তৎক্ষণাৎ তা দর্শকদের কাছে সুশুভ্র প্রতিভাত হলো। (শুয়ারাঃ ৩০-৩৩)
ফেরাউন সাধারণ লোকজনের ঈমান আনার ভয় করছিল। ফেরাউন তার পরিষদবর্গকে বলল, নিশ্চয় এ একজন সুদক্ষ জাদুকর। সে তার জাদু বলে তোমাদেরকে তোমাদের দেশ থেকে বহিস্কার করতে চায়। অতএব তোমাদের মত কি? তারা বলল, তাকে ও তার ভাইকে কিছু অবকাশ দিন এবং শহরে শহরে ঘোষক প্রেরণ করুন। তারা যেন আপনার কাছে প্রত্যেকটি দক্ষ জাদুকর কে উপস্থিত করে। (শুয়ারাঃ ৩৪-৩৭)
ফেরাউন সব ধরণের দলিল প্রমাণ ও যুক্তি দেখেও অহংকার ও মিথ্যারোপ করতে লাগল, সে মূছা (আঃ) কে নবী হিসেবে অস্বীকার করলঃ আমি ফেরাউনকে আমার সব নিদর্শন দেখিয়ে দিয়েছি, অতঃপর সে মিথ্যা আরোপ করেছে এবং অমান্য করেছে। সে বললঃ হে মূসা, তুমি কি যাদুর জোরে আমাদেরকে দেশ থেকে বহিষ্কার করার জন্যে আগমন করেছ? অতএব, আমরাও তোমার মোকাবেলায় তোমার নিকট অনুরূপ যাদু উপস্থিত করব। সুতরাং আমাদের ও তোমার মধ্যে একটি ওয়াদার দিন ঠিক কর, যার খেলাফ আমরাও করব না এবং তুমিও করবে না একটি পরিষ্কার প্রান্তরে। মূসা বললঃ তোমাদের ওয়াদার দিন উৎসবের দিন এবং পূর্বাহ্নে লোকজন সমবেত হবে। অতঃপর ফেরাউন প্রস্থান করল এবং তার সব কলাকৌশল জমা করল অতঃপর উপস্থিত হল। (ত্বহাঃ ৫৬-৬০)
মূছা (আঃ) তাদের উপর আল্লাহর গযবের আশঙ্কা করেন। মূসা (আঃ) তাদেরকে বললেনঃ দুর্ভাগ্য তোমাদের; তোমরা আল্লাহর প্রতি মিথ্যা আরোপ করো না। তাহলে তিনি তোমাদেরকে আযাব দ্বারা ধবংস করে দেবেন। যে মিথ্যা উদভাবন করে, সেই বিফল মনোরথ হয়েছে। (ত্বহাঃ ৬১)
তারা পরস্পরে মতবিরোধ করতে লাগল, কেহ কেহ বলল, ইহা কোন যাদুকরের কথা নয়ঃ অতঃপর তারা তাদের কাজে নিজেদের মধ্যে বিতর্ক করল এবং গোপনে পরামর্শ করল। (ত্বহাঃ ৬২)
কিন্তু পরিশেষে তারা ফিরে এলো, অধিকাংশ লোক বললঃ তারা বললঃ এই দুইজন নিশ্চিতই যাদুকর, তারা তাদের যাদু দ্বারা তোমাদেরকে তোমাদের দেশ থেকে বহিস্কার করতে চায় এবং তোমাদের উৎকৃষ্ট জীবন ব্যবস্থা রহিত করতে চায়। অতএব, তোমরা তোমাদের কলাকৌশল সুসংহত কর, অতঃপর সারিবদ্ধ হয়ে আস। আজ যে জয়ী হবে, সেই সফলকাম হবে। (ত্বহাঃ ৬৩-৬৪) তারা বললঃ হে মূসা, হয় তুমি নিক্ষেপ কর, না হয় আমরা প্রথমে নিক্ষেপ করি। মূসা বললেনঃ বরং তোমরাই নিক্ষেপ কর। তাদের যাদুর প্রভাবে হঠাৎ তাঁর মনে হল, যেন তাদের রশিগুলো ও লাঠিগুলো চুটাছুটি করছে। (ত্বহাঃ ৬৬)
সাধারণ লোকজন যাদুকরের দ্বারা ফিতনায় পড়তে পারে এ আশঙ্কা মূছা (আঃ) করছিলেন। অতঃপর মূসা মনে মনে কিছুটা ভীতি অনুভব করলেন। (ত্বহাঃ ৬৭)
আল্লাহর পক্ষ থেকে তাকে নির্দেশ দেয়া হলোঃ আমি বললামঃ ভয় করো না, তুমি বিজয়ী হবে। তোমার ডান হাতে যা আছে তুমি তা নিক্ষেপ কর। এটা যা কিছু তারা করেছে তা গ্রাস করে ফেলবে। তারা যা করেছে তা তো কেবল যাদুকরের কলাকৌশল। যাদুকর যেখানেই থাকুক, সফল হবে না। (ত্বহাঃ ৬৮-৬৯) তারপর আমি ওহীযোগে মূসাকে বললাম, এবার নিক্ষেপ কর তোমার লাঠিখানা। অতএব সঙ্গে সঙ্গে তা সে সমুদয়কে গিলতে লাগল, যা তারা বানিয়েছিল যাদু বলে। সুতরাং এভাবে প্রকাশ হয়ে গেল সত্য বিষয় এবং ভুল প্রতিপন্ন হয়ে গেল যা কিছু তারা করেছিল। (আ’রাফঃ ১১৭-১১৮)
মজার ব্যাপার হলোঃ সুতরাং তারা সেখানেই পরাজিত হয়ে গেল এবং অতীব লাঞ্ছিত হল। এবং যাদুকররা সেজদায় পড়ে গেল। বলল, আমরা ঈমান আনছি মহা বিশ্বের পরওয়ারদেগারের প্রতি। যিনি মূসা ও হারুনের পরওয়ারদেগার। (আ’রাফঃ ১১৯-১২২) অতঃপর যাদুকররা সেজদায় পড়ে গেল। তারা বললঃ আমরা হারুন ও মূসার পালনকর্তার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করলাম। (ত্বহাঃ ৭০)
ফলে ফেরাউন বোকার মত আবারো হুমকি ধমকি দিলঃ ফেরাউন বললঃ আমার অনুমতি দানের পূর্বেই? তোমরা কি তার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করলে; দেখছি সেই তোমাদের প্রধান, সে তোমাদেরকে যাদু শিক্ষা দিয়েছে। অতএব আমি অবশ্যই তোমাদের হস্তপদ বিপরীত দিক থেকে কর্তন করব এবং আমি তোমাদেরকে খর্জুর বৃক্ষের কান্ডে শূলে চড়াব। (ত্বহাঃ ৭১)
তাদের জবাব ছিল ফেরাউনের জন্য আরেক বিস্ময় এবং ঈমান কিভাবে ব্যক্তিকে রুপান্তরিত করে তারই এক বর্ণনাঃ তারা বলল, কোন ক্ষতি নেই। আমরা আমাদের পালনকর্তার কাছে প্রত্যাবর্তন করব। আমরা আশা করি, আমাদের পালনকর্তা আমাদের ক্রটি-বিচ্যুতি মার্জনা করবেন। কারণ, আমরা বিশ্বাস স্থাপনকারীদের মধ্যে অগ্রণী। (শুয়ারাঃ ৫০-৫১)
ফেরাউন মু’মিনদেরকে নির্যাতন করতে লাগল। ফলে আল্লাহ তায়া’লা তাকে ও তার লোকজনদেরকে শাস্তি দিলেনঃ তারপর আমি পাকড়াও করেছি-ফেরাউনের অনুসারীদেরকে দুর্ভিক্ষের মাধ্যমে এবং ফল ফসলের ক্ষয়-ক্ষতির মাধ্যমে যাতে করে তারা উপদেশ গ্রহণ করে। অতঃপর যখন শুভদিন ফিরে আসে, তখন তারা বলতে আরম্ভ করে যে, এটাই আমাদের জন্য উপযোগী। আর যদি অকল্যাণ এসে উপস্থিত হয় তবে তাতে মূসার এবং তাঁর সঙ্গীদের অলক্ষণ বলে অভিহিত করে। শুনে রাখ তাদের অলক্ষণ যে, আল্লাহরই এলেমে রয়েছে, অথচ এরা জানে না। (আ’রাফঃ ১৩০-১৩১)
তারা ঈমান আনেনি, তাওবাও করেনিঃ তারা আরও বলতে লাগল, আমাদের উপর জাদু করার জন্য তুমি যে নিদর্শনই নিয়ে আস না কেন আমরা কিন্তু তোমার উপর ঈমান আনছি না। সুতরাং আমি তাদের উপর পাঠিয়ে দিলাম তুফান, পঙ্গপাল, উকুন, ব্যাঙ ও রক্ত প্রভৃতি বহুবিধ নিদর্শন একের পর এক। তারপরেও তারা গর্ব করতে থাকল। বস্তুতঃ তারা ছিল অপরাধপ্রবণ। (আ’রাফঃ ১৩২-১৩৩)
যখন তাদের উপর আযাব আসেঃ আর তাদের উপর যখন কোন আযাব পড়ে তখন বলে, হে মূসা আমাদের জন্য তোমার পরওয়ারদেগারের নিকট সে বিষয়ে দোয়া কর যা তিনি তোমার সাথে ওয়াদা করে রেখেছেন। যদি তুমি আমাদের উপর থেকে এ আযাব সরিয়ে দাও, তবে অবশ্যই আমরা ঈমান আনব তোমার উপর এবং তোমার সাথে বনী-ইসরাঈলদেরকে যেতে দেব। অতঃপর যখন আমি তাদের উপর থেকে আযাব তুলে নিতাম নির্ধারিত একটি সময় পর্যন্ত-যেখান পর্যন্ত তাদেরকে পৌছানোর উদ্দেশ্য ছিল, তখন তড়িঘড়ি তারা প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করত। (আ’রাফঃ ১৩৪-১৩৫)
তারা যখন অঙ্গিকারকৃত কিছুই পালন করেনি, বরং ওয়াদা ভঙ্গ করেছেঃ সুতরাং আমি তাদের কাছে থেকে বদলা নিয়ে নিলাম-বস্তুতঃ তাদেরকে সাগরে ডুবিয়ে দিলাম। কারণ, তারা মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছিল আমার নিদর্শনসমূহকে এবং তৎপ্রতি অনীহা প্রদর্শন করেছিল। (আ’রাফঃ ১৩৬)
মিসরবাসীরা তাদের রাজা ফেরাউনের অনুসরণে যখন কুফুরী, দৃষ্টতা ও অহমিকায় বেড়েই চলল, তারা আল্লাহর নবী মুসা (আঃ) এর বিরোধিতা করতে লাগল; অথচ আল্লাহ তায়া’লা মিসরবাসীর নিকট অকাট্য দলিল প্রমাণ পেশ করেন, তাদেরকে এমন মু’জিযা দেখালেন যাতে চক্ষু চমকে যায়, আকল দিশেহারা হয়ে যায়, এতদসত্যেও তারা কুফুরী থেকে ফিরেনি, আল্লাহর পথে আসেনি। ফেরাউনের দলের অল্প সংখ্যক লোক, যাদুকরেরা ও বনী ইসরাইলের সবাই ঈমান আনে। ফেরাউনের অত্যাচার ও নির্যাতনের ভয়ে তাদের ঈমান ছিল গোপনে। আল্লাহ তায়া’লা মুসা ও হারুন (আঃ) কে তাদের জাতির জন্য আলাদা বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন বাড়ি বানানোর নির্দেশ দিলেন, যাতে তাদের বাড়িগুলো ফেরাউনের অনুসারীদের বাড়ি থেকে আলাদা দেখায়, যেন তারা নিজেরা নিজেদেরকে চিনতে পারেন ও আল্লাহর আদেশে দেশ ছেড়ে যাবার জন্য প্রস্তুত থাকতে পারেন এবং যেন সে ঘরে আল্লাহর ইবাদত করতে পারেনঃ আর আমি নির্দেশ পাঠালাম মূসা এবং তার ভাইয়ের প্রতি যে, তোমরা তোমাদের জাতির জন্য মিসরের মাটিতে বাস স্থান নির্ধারণ কর। আর তোমাদের ঘরগুলো বানাবে কেবলামুখী করে এবং নামায কায়েম কর আর যারা ঈমানদার তাদেরকে সুসংবাদ দান কর। (ইউনুসঃ ৮৭)
অতঃপর আল্লাহ তায়া’লা তার বান্দাহ মুসা (আঃ) কে অহীর মাধ্যমে নির্দেশ দিলেনঃ আমি মূসাকে আদেশ করলাম যে, আমার বান্দাদেরকে নিয়ে রাত্রিযোগে বের হয়ে যাও, নিশ্চয় তোমাদের পশ্চাদ্ধাবন করা হবে। (শুয়ারাঃ ৫২)
তখন ফেরাউনের প্রতিক্রিয়া ছিল এরূপঃ অতঃপর ফেরাউন শহরে শহরে সংগ্রাহকদেরকে প্রেরণ করল, নিশ্চয় এরা (বনী-ইসরাঈলরা) ক্ষুদ্র একটি দল। এবং তারা আমাদের ক্রোধের উদ্রেক করেছে। এবং আমরা সবাই সদা শংকিত। (শুয়ারাঃ ৫৩-৫৬)
আর আল্লাহ তায়া’লা চাইলেনঃ অতঃপর আমি ফেরআউনের দলকে তাদের বাগ-বাগিচা ও ঝর্ণাসমূহ থেকে বহিষ্কার করলাম। এবং ধন-ভান্ডার ও মনোরম স্থানসমূহ থেকে। এরূপই হয়েছিল এবং বনী-ইসলাঈলকে করে দিলাম এসবের মালিক। (শুয়ারাঃ ৫৭-৫৯)
তারা বনী ইসরাইলদেরকে ধাওয়া করতে লাগলঃ অতঃপর সুর্যোদয়ের সময় তারা তাদের পশ্চাদ্ধাবন করল। (শুয়ারাঃ ৬০)
যখন তারা বনী ইসরাইলকে পেলঃ যখন উভয় দল পরস্পরকে দেখল, তখন মূসার সঙ্গীরা বলল, আমরা যে ধরা পড়ে গেলাম। (শুয়ারাঃ ৬১)
কিন্তু আল্লাহর নবী মুসা (আঃ) এর আল্লাহর উপর ভরসা, তাকে জানা ও তার উপর তাওক্কুলে ভরপূর জবাব ছিল এরূপঃ মূসা বলল, কখনই নয়, আমার সাথে আছেন আমার পালনকর্তা। তিনি আমাকে পথ বলে দেবেন। (শুয়ারাঃ ৬২)
তখন আল্লাহর হেদায়েত ও রহমত নাযিল হলোঃ অতঃপর আমি মূসাকে আদেশ করলাম, তোমার লাঠি দ্বারা সমূদ্রকে আঘাত কর। ফলে, তা বিদীর্ণ হয়ে গেল এবং প্রত্যেক ভাগ বিশাল পর্বতসদৃশ হয়ে গেল। আমি সেথায় অপর দলকে পৌঁছিয়ে দিলাম। এবং মূসা ও তাঁর সংগীদের সবাইকে বাঁচিয়ে দিলাম। অতঃপর অপর দলটিকে নিমজ্জত কললাম। নিশ্চয় এতে একটি নিদর্শন আছে এবং তাদের অধিকাংশই বিশ্বাসী ছিল না। আপনার পালনকর্তা অবশ্যই পরাক্রমশালী, পরম দয়ালু। (শুয়ারাঃ ৬৩-৬৮)
এ ভয়ানক অবস্থায়ঃ আর বনী-ইসরাঈলকে আমি পার করে দিয়েছি নদী। তারপর তাদের পশ্চাদ্ধাবন করেছে ফেরাউন ও তার সেনাবাহিনী, দুরাচার ও বাড়াবাড়ির উদ্দেশে।। (ইউনুসঃ ৯০)
ফেরাউন তখন মৃত্যু ও ডুবে যাওয়ার ব্যাপারে নিশ্চিত হলোঃ এমনকি যখন তারা ডুবতে আরম্ভ করল, তখন বলল, এবার বিশ্বাস করে নিচ্ছি যে, কোন মা’বুদ নেই তাঁকে ছাড়া যাঁর উপর ঈমান এনেছে বনী-ইসরাঈলরা। বস্তুতঃ আমিও তাঁরই অনুগতদের অন্তর্ভুক্ত। (ইউনুসঃ ৯০)
কিন্তু সে বিলম্ব করে ফেলেছে; ফলে মৃত্যুর কবলে পতিত হলো। এখন একথা বলছ! অথচ তুমি ইতিপূর্বে না-ফরমানী করছিলে। এবং পথভ্রষ্টদেরই অন্তর্ভুক্ত ছিলে। (ইউনুসঃ ৯১)
শত্রুকে ডুবে মারার দ্বারা আল্লাহ পাক বনী ইসরাইলের উপর তার নিয়ামত পূর্ণ করলেন, কিন্তু তারা যখন সমুদ্র পার হয়ে ওপাড়ে গেলঃ বস্তুতঃ আমি সাগর পার করে দিয়েছি বনী-ইসরাঈলদিগকে। তখন তারা এমন এক সম্প্রদায়ের কাছে গিয়ে পৌছাল, যারা স্বহস্তনির্মিত মূর্তিপুজায় নিয়োজিত ছিল। তারা বলতে লাগল, হে মূসা; আমাদের উপাসনার জন্যও তাদের মূর্তির মতই একটি মূর্তি নির্মাণ করে দিন। তিনি বললেন, তোমাদের মধ্যে বড়ই অজ্ঞতা রয়েছে। (আ’রাফঃ ১৩৮)
অর্থাৎ ফেরাউন ও তার দল থেকে রক্ষা করে আল্লাহ যে অনুগ্রহ করেছেন তা ভুলে গিয়ে তারা এমন অদ্ভুত জিনিস চাইলঃ তিনি বললেন, তোমাদের মধ্যে বড়ই অজ্ঞতা রয়েছে। এরা যে, কাজে নিয়োজিত রয়েছে তা ধ্বংস হবে এবং যা কিছু তারা করেছে তা যে ভুল! (আ’রাফঃ ১৩৮-১৩৯)
অতঃপর মুসা (আঃ) তার প্রভুর দেয়া প্রতিশ্রুতি পালনে গেলেনঃ আর আমি মূসাকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছি ত্রিশ রাত্রির এবং সেগুলোকে পূর্ন করেছি আরো দশ দ্বারা। বস্তুতঃ এভাবে চল্লিশ রাতের মেয়াদ পূর্ণ হয়ে গেছে। আর মূসা তাঁর ভাই হারুনকে বললেন, আমার সম্প্রদায়ে তুমি আমার প্রতিনিধি হিসাবে থাক। তাদের সংশোধন করতে থাক এবং হাঙ্গামা সৃষ্টিকারীদের পথে চলো না। (আ’রাফঃ ১৪২)
আল্লাহ তায়া’লা মুসা (আঃ) এর সাথে কথা বললেন, তাকে আল্লাহর কালাম ও রিসালাতের মাধ্যমে খাছ করলেন। (পরওয়ারদেগার) বললেন, হে মূসা, আমি তোমাকে আমার বার্তা পাঠানোর এবং কথা বলার মাধ্যমে লোকদের উপর বিশিষ্টতা দান করেছি। সুতরাং যা কিছু আমি তোমাকে দান করলাম, গ্রহণ কর এবং কৃতজ্ঞ থাক। (আ’রাফঃ ১৪৪)
তাকে কতিপয় উপদেশ ও আল্লাহর আহকাম সম্বলিত তাওরাত দান করেছেন। আর আমি তোমাকে পটে লিখে দিয়েছি সর্বপ্রকার উপদেশ ও বিস্তারিত সব বিষয়। অতএব, এগুলোকে দৃঢ়ভাবে ধারণ কর এবং স্বজাতিকে এর কল্যাণকর বিষয়সমূহ দৃঢ়তার সাথে পালনের নির্দেশ দাও। (আ’রাফঃ ১৪৫)
যখন মুসা (আঃ) আল্লাহর নির্ধারিত প্রতিশ্রুতি পূর্ণ করলেন এবং আল্লাহ তায়া’লা তাকে তাওরাত দান করলেন, তখন তিনি জাতির কাছে ফিরে গেলেন, কিন্তু তিনি তাদেরকে দেখতে পেলেনঃ আর বানিয়ে নিল মূসার সম্প্রদায় তার অনুপস্থিতিতে নিজেদের অলংকারাদির দ্বারা একটি বাছুর তা থেকে বেরুচ্ছিল ‘হাম্বা হাম্বা’ শব্দ। তারা কি একথাও লক্ষ্য করল না যে, সেটি তাদের সাথে কথাও বলছে না এবং তাদেরকে কোন পথও বাতলে দিচ্ছে না! তারা সেটিকে উপাস্য বানিয়ে নিল। বস্তুতঃ তারা ছিল জালেম। অতঃপর যখন তারা অনুতপ্ত হল এবং বুঝতে পারল যে, আমরা নিশ্চিতই গোমরাহ হয়ে পড়েছি, তখন বলতে লাগল, আমাদের প্রতি যদি আমাদের পরওয়ারদেগার করুণা না করেন, তবে অবশ্যই আমরা ধবংস হয়ে যাব। (আ’রাফঃ ১৪৮-১৪৯)
এ সংবাদ মুসা (আঃ) কে খুবই বিচলিত করলঃ তারপর যখন মূসা নিজ সম্প্রদায়ে ফিরে এলেন রাগাম্বিত ও অনুতপ্ত অবস্থায়, তখন বললেন, আমার অনুপস্থিতিতে তোমরা আমার কি নিকৃষ্ট প্রতিনিধিত্বটাই না করেছ। তোমরা নিজ পরওয়ারদেগারের হুকুম থেকে কি তাড়াহুড়া করে ফেললে এবং সে তখতীগুলো ছুঁড়ে ফেলে দিলেন এবং নিজের ভাইয়ের মাথার চুল চেপে ধরে নিজের দিকে টানতে লাগলেন। ভাই বললেন, হে আমার মায়ের পুত্র, লোকগুলো যে আমাকে দুর্বল মনে করল এবং আমাকে যে মেরে ফেলার উপক্রম করেছিল। সুতরাং আমার উপর আর শত্রুদের হাসিও না। আর আমাকে জালিমদের সারিতে গন্য করো না। মূসা বললেন, হে আমার পরওয়ারদেগার, ক্ষমা কর আমাকে আর আমার ভাইকে এবং আমাদেরকে তোমার রহমতের অন্তর্ভুক্ত কর। তুমি যে সর্বাধিক করুণাময়। (আ’রাফঃ ১৫০-১৫১)
গো বাছুর তৈরিকারী সামেরীকে তিনি জিজ্ঞেস করলেন, বললেনঃ মূসা বললেন হে সামেরী, এখন তোমার ব্যাপার কি? (ত্বহাঃ ৯৫)
সে জবাব দিলঃ সে বললঃ আমি দেখলাম যা অন্যেরা দেখেনি। অতঃপর আমি সেই প্রেরিত ব্যক্তির পদচিহ্নের নীচ থেকে এক মুঠি মাটি নিয়ে নিলাম। অতঃপর আমি তা নিক্ষেপ করলাম। আমাকে আমার মন এই মন্ত্রণাই দিল। (ত্বহাঃ ৯৬)
মুসা (আঃ) এর জবাব ছিল খুবই শক্তিশালী ও শিরক বিরোধী। মূসা বললেনঃ দূর হ, তোর জন্য সারা জীবন এ শাস্তিই রইল যে, তুই বলবি; আমাকে স্পর্শ করো না, এবং তোর জন্য একটি নির্দিষ্ট ওয়াদা আছে, যার ব্যতিক্রম হবে না। তুই তোর সেই ইলাহের প্রতি লক্ষ্য কর, যাকে তুই ঘিরে থাকতি। আমরা সেটি জালিয়ে দেবই। অতঃপর একে বিক্ষিপ্ত করে সাগরে ছড়িয়ে দেবই। তোমাদের ইলাহ তো কেবল আল্লাহই, যিনি ব্যতীত অন্য কোন ইলাহ নেই। সব বিষয় তাঁর জ্ঞানের পরিধিভুক্ত। (ত্বহাঃ ৯৭-৯৮)
তাওরাতের খন্ডসমূহ তুলে নেয়ার পর মুসা (আঃ) তাদের নিয়ে বাইতুল মুকাদ্দাসের দিকে রওয়ানা হলেনঃ তারপর যখন মূসার রাগ পড়ে গেল, তখন তিনি তখতীগুলো তুলে নিলেন। আর যা কিছু তাতে লেখা ছিল, তা ছিল সে সমস্ত লোকের জন্য হেদায়েত ও রহমত যারা নিজেদের পরওয়ারদেগারকে ভয় করে। (আ’রাফঃ ১৫৪)
বনী ইসরাইলের কেউ কেউ তাওরাত গ্রহণ করতে চায়নি, ফলে আল্লাহ তায়া’লা তাদের মাথার উপর পাহাড় তুলে ধরলেনঃ আর যখন আমি তুলে ধরলাম পাহাড়কে তাদের উপরে সামিয়ানার মত এবং তারা ভয় করতে লাগল যে, সেটি তাদের উপর পড়বে, তখন আমি বললাম, ধর, যা আমি তোমাদের দিয়েছি, দৃঢ়ভাবে এবং স্মরণ রেখো যা তাতে রয়েছে, যেন তোমরা বাঁচতে পার। (আ’রাফঃ ১৭১)
তাওরাতের হেদায়েত ও রহমত স্বত্বেও তারা পাহাড় পড়ে যাওয়ার ভয়ে উহা গ্রহণ করল। আল্লাহর নবী মুসা (আঃ) এর সাথে বনী ইসরাইলের হঠকারিতা চলতে থাকল। একদা তারা এক লোককে হত্যা করল, সে বনী ইসরাইলের মধ্যে ধনাঢ্য ব্যক্তি ছিল। একরাতে তার চাচাতো ভাইয়ের ছেলে তাকে হত্যা করে। হত্যাকারীকে চিহ্নিত করতে তাদের মধ্যে বিরোধ দেখা দেয়, তারা একে অন্যের ঘাড়ে দোষ চাপাতে থাকে, আল্লাহর নবী মুসা (আঃ) এর কাছে বিচার চাইল। তারা অহমিকা ও বেয়াদবীবশে বললঃ হে মুসা (আঃ) আপনি যদি আল্লাহর নবী হন তাহলে আপনার রবকে জিজ্ঞেস করুন কে হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে? তখন আল্লাহ তায়া’লা মুসা (আঃ) কে নির্দেশ দিলেনঃ হে মুসা তুমি বনী ইসরাইলকে বল একটা গাভী জবাই করতে, এরপর সে গাভীর একটা অংশ দিয়ে মৃত্যু ব্যক্তিকে আঘাত করলে আমি আমার কুদরতে তাকে জীবিত করে দিব, সে কথা বলবে ও বলে দিবে কে তাকে হত্যা করেছে। আল্লাহ তায়া’লা বলেনঃ যখন তোমরা একজনকে হত্যা করে পরে সে সম্পর্কে একে অপরকে অভিযুক্ত করেছিলে। যা তোমরা গোপন করছিলে, তা প্রকাশ করে দেয়া ছিল আল্লাহর অভিপ্রায়। অতঃপর আমি বললামঃ গরুর একটি খন্ড দ্বারা মৃতকে আঘাত কর। এভাবে আল্লাহ মৃতকে জীবিত করেন এবং তোমাদেরকে তাঁর নিদর্শণ সমূহ প্রদর্শন করেন-যাতে তোমরা চিন্তা কর। (বাকারাঃ ৭২-৭৩)
তখন মুসা (আঃ) একটি গাভী জবাই করতে বললেন, তারা যদি গরুর পাল থেকে যে কোন একটি গাভী জবাই করত তা যথেষ্ট হত, কিন্তু তারা গোঁড়ামি ও অহমিকা করল, তখন আল্লাহ তায়া’লা মুসা (আঃ) এর জবানে বললেনঃ আল্লাহ তোমাদের একটি গরু জবাই করতে বলেছেন। তারা বলল,তুমি কি আমাদের সাথে উপহাস করছ? মূসা (আঃ) বললেন,মূর্খদের অন্তর্ভুক্ত হওয়া থেকে আমি আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করছি। (বাকারাঃ ৬৭)
তার জাতি বললঃ তারা বলল,তুমি তোমার পালনকর্তার কাছে আমাদের জন্য প্রার্থনা কর,যেন সেটির রূপ বিশ্লেষণ করা হয়। (বাকারাঃ ৬৮)
তারা নিজেরা নিজেদের জন্য কঠোরতা করল, ফলে আল্লাহ তায়া’লাও তাদের জন্য কঠিন করে দিলেন। মূসা (আঃ) বললেন,তিনি বলছেন, সেটা হবে একটা গাভী, যা বৃদ্ধ নয় এবং কুমারীও নয়। (বাকারাঃ ৬৮)
যা বেশি বয়ষ্ক ও না, আবার অল্প বয়ষ্ক ও না। মাঝারি বয়সের। মূসা (আঃ) বললেন,তিনি বলছেন,সেটা হবে একটা গাভী, যা বৃদ্ধ নয় এবং কুমারীও নয়-বার্ধক্য ও যৌবনের মাঝামাঝি বয়সের। এখন আদিষ্ট কাজ করে ফেল। (বাকারাঃ ৬৮)
তারা নিজেদের উপর পরিধি সঙ্কুচিত করল। তারা বলল,তোমার পালনকর্তার কাছে আমাদের জন্য প্রার্থনা কর যে,তার রঙ কিরূপ হবে? (বাকারাঃ ৬৯)
অথচ আল্লাহ তায়া’লা তাদেরকে কোন রঙয়ের ব্যাপারে বলেননি, কোন রঙ নির্দিষ্ট করেননি। মূসা (আঃ) বললেন, তিনি বলেছেন যে, গাঢ় পীতবর্ণের গাভী-যা দর্শকদের চমৎকৃত করবে। (বাকারাঃ ৬৯)
তারা রুদ্ধদ্বার বৈঠক করল, এরপর এসে বললঃ তারা বলল,আপনি প্রভুর কাছে প্রার্থনা করুন-তিনি বলে দিন যে,সেটা কিরূপ? কেননা,গরু আমাদের কাছে সাদৃশ্যশীল মনে হয়। ইনশাআল্লাহ এবার আমরা অবশ্যই পথপ্রাপ্ত হব। (বাকারাঃ ৭০)
তাদের উত্তরে মুসা (আঃ) বললেনঃ মূসা (আঃ) বললেন,তিনি বলেন যে,এ গাভী ভূকর্ষণ ও জল সেচনের শ্রমে অভ্যস্ত নয়-হবে নিষ্কলঙ্ক,নিখুঁত। তারা বলল, এবার সঠিক তথ্য এনেছ। অতঃপর তারা সেটা জবাই করল, অথচ জবাই করবে বলে মনে হচ্ছিল না। (বাকারাঃ ৭১)
তারা বনী ইসরাইলের সব শহর গ্রাম ঘুরে অনেক কষ্টে ও উচ্চ মূল্য দিয়ে সে গাভী পেল। তারা উহা জবাই করল, যদিও তারা জবাই করতে আগ্রহী ছিলনা। অতঃপর এর একটি অংশ দিয়ে উক্ত মৃত্যু ব্যক্তিকে আঘাত করায় সে আল্লাহর ইচ্ছায় কবর থেকে জীবিত বের হয়ে তাদের সামনে দাঁড়ায়। তখন মুসা (আঃ) তাকে জিজ্ঞেস করলেনঃ কে তোমাকে হত্যা করেছে? সে বললঃ এই ব্যক্তিঃ অতঃপর আমি বললামঃ গরুর একটি খন্ড দ্বারা মৃতকে আঘাত কর। এভাবে আল্লাহ মৃতকে জীবিত করেন এবং তোমাদেরকে তাঁর নিদর্শণ সমূহ প্রদর্শন করেন-যাতে তোমরা চিন্তা কর। (বাকারাঃ ৭৩)
যখন তারা বাইতুল মুকাদ্দাসে গেল, সেখানে এক পরাক্রমশালী এক জাতিকে পেলঃ যখন মূসা স্বীয় সম্প্রদায়কে বললেনঃ হে আমার সম্প্রদায়, তোমাদের প্রতি আল্লাহর নেয়ামত স্মরণ কর, যখন তিনি তোমাদের মধ্যে পয়গম্বর সৃষ্টি করেছেন, তোমাদেরকে রাজ্যাধিপতি করেছেন এবং তোমাদেরকে এমন জিনিস দিয়েছেন, যা বিশ্বজগতের কাউকে দেননি। হে আমার সম্প্রদায়, পবিত্র ভুমিতে প্রবেশ কর, যা আল্লাহ তোমাদের জন্যে নির্ধারিত করে দিয়েছেন এবং পেছন দিকে প্রত্যাবর্তন করো না। অন্যথায় তোমরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়বে। তারা বললঃ হে মূসা, সেখানে একটি প্রবল পরাক্রান্ত জাতি রয়েছে। আমরা কখনও সেখানে যাব না, যে পর্যন্ত না তারা সেখান থেকে বের হয়ে যায়। তারা যদি সেখান থেকে বের হয়ে যায় তবে নিশ্চিতই আমরা প্রবেশ করব। (মায়েদাঃ ২০-২২) তারা বললঃ হে মূসা, আমরা জীবনেও কখনো সেখানে যাব না, যতক্ষণ তারা সেখানে থাকবে। অতএব, আপনি ও আপনার পালনকর্তাই যান এবং উভয়ে যুদ্ধ করে নিন। আমরা তো এখানেই বসলাম। (মায়েদাঃ ২৪)
আল্লাহ তায়া’লা তাদের এ সিদ্ধানের কারনে ভৎসণা করলেন, জিহাদ ও রাসুলের বিরোধিতা করার ফলে তাদেরকে দিশেহারা হয়ে ময়দান-প্রান্তরে ঘুরে বেড়ানোর শাস্তি দিলেন। মুসা (আঃ) বললেনঃ মূসা বললঃ হে আমার পালনকর্তা, আমি শুধু নিজের উপর ও নিজের ভাইয়ের উপর ক্ষমতা রাখি। অতএব, আপনি আমাদের মধ্যে ও এ অবাধ্য সম্প্রদায়ের মধ্যে সম্পর্কচ্ছেদ করুন। (মায়েদাঃ ২৫)
আল্লাহ তায়া’লা তার দোয়া কবুল করলেনঃ বললেনঃ এ দেশ চল্লিশ বছর পর্যন্ত তাদের জন্যে হারাম করা হল। তারা ভুপৃষ্ঠে উদভ্রান্ত হয়ে ফিরবে। অতএব, আপনি অবাধ্য সম্প্রদায়ের জন্যে দুঃখ করবেন না। (মায়েদাঃ ২৬)
তারা দিবা রাত্রি, সকাল সন্ধ্যা উদ্দেশ্যহীনভাবে জমিনে ঘুরতো।