তাদের পূর্বনির্ধারিত সময়মত বন্ধুরা একত্রিত হলে মাইকেল কথা বলার অনুমতি চেয়ে বলতে শুরু করলঃ
আজকে আমি এক প্রাচ্যবিদের উত্তেজনাপূর্ণ একটি বই পড়েছি, তিনি তাতে ইসলামী শরিয়ত নিয়ে অনেক আলোচনা করেছেন। আমি এগুলো নিয়ে তোমাদের সাথে আলোচনা করতে চাই।
রাজিবঃ বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
রাশেদঃ সম্ভব হলে এক এক করে উল্লেখ কর, যাতে আমরা আলোচনা করতে পারি।
মাইকেলঃঠিক আছে, আমার দৃষ্টিতে সবচেয়ে বেশি উত্তেজনাপূর্ণ বিষয়টি উল্লেখ করছি; বইটিতে যা আছে তার বাইরেও এ বিষয়ে রাজিবের কাছে কোন প্রশ্ন থাকলে তা জিজ্ঞেস করতে পারো।
রাশেদঃ ঠিক আছে, আলোচনা শুরু কর।
মাইকেলঃবইটিতে উল্লেখ আছে যে, ইসলামী শরিয়ত রোমান আইন থেকে সংগৃহীত, কিছু কিছু বিস্তারিত ব্যাখ্যায় সেটার সাদৃশ্য রয়েছে।
রাশেদঃ এবার আমাকে বলতে দাও, এ কথাগুলো অনেক পুরাতন, বর্তমানের অনেক প্রাচ্যবিশেষজ্ঞগণ আর একথা বলেন না। ইসলামী শরিয়ত ও আইন বিশেষজ্ঞ রাশিয়ার এক বড় প্রাচ্যবিদের সাথে একদা আমি সাক্ষাৎ করেছিলাম, তার নাম প্রফেসর “লিউনিড সুকিয়ানান”, তিনি বলেনঃ “পাশ্চাত্য গবেষকরা এখন আর এ ধারণা পোষণ করেন না যে, ইসলামী শরিয়ত রোমান আইন থেকে সংগৃহীত, সপ্তদশ শতাব্দীতে কিছু পশ্চিমা গবেষকের কাছে এ ধারণা ছিল। এখন পাশ্চাত্যের আইন গবেষনা বিনা দ্বিধা ও নিঃশর্তে স্বীকার করে যে, ইসলামী শরিয়তের আইন সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র, রোমান আইন দ্বারা প্রভাবিত নয়।
দ্বিতীয়তঃ ইসলামী শরিয়তের মূল উৎস অন্যান্য আইনের মূল উৎস থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন। যেমন আমি তোমাদেরকে অনেক বার বলেছি যে, ইসলাম একটি পরিপূর্ণ জীবন বিধান। এর বিধিবিধানগুলো সৃষ্টির উপর স্রষ্টার অধিকার সম্পর্কিত। , তদেরকে সৃষ্টির উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করতে বিভিন্ন আদেশ নিষেধ করা হয়েছে। আর স্রষ্টার অধিকার হলো, মানুষ তার আনুগত্য হতে বের না হওয়া; কেননা সে তার রাজ্যে তারই গোলাম। এজন্যই ইসলামী শরিয়তের মূল উৎস হলো ওহী, যা কোরআন ও হাদিসকে বুঝায়। আমরা সকলেই জানি যে, ইসলামের নবী মুহাম্মদ (সাঃ) নিরক্ষর ছিলেন, পার্থিব অর্থে কোন লেখা পড়া করতে জানতেন না। কাজেই এ রকম একজন ব্যক্তির পক্ষে – সংগ্রহ তো দূরের কথা – সে সব আইন জানারই কোন সুযোগ ছিলনা, আর বিশেষ করে সেটা যদি হয় অন্য ভাষায়।
এটাই প্রাচ্যবিশেষজ্ঞ ডেভিড দি স্যান্টিল্যানা (David de Santillana )বলেছেনঃ “প্রাচ্য এবং পশ্চিমের দু’টি আইনের ( ইসলাম ও রোমান আইন) মূল উৎস এক খোঁজা একটি বৃথা চেষ্টা মাত্র। কেননা ইসলামী শরিয়ত নির্দিষ্ট সীমারেখা ও স্থায়ী মৌলিক বিষয়াবলী ও নীতিমালায় প্রতিষ্ঠিত, যাকে অন্য কোন শরিয়ত বা আইনের সাথে সম্পৃক্ত করা সম্ভব নয়। কেননা ইহা ধর্মীয় শরিয়ত, যার চিন্তা ধারা আমাদের চিন্তাধারা থেকে ভিন্নতর।”
অন্যদিকে দু’টি আইনের মধ্যে যে সাদৃশ্য দেখা যায় তার মূল কারণ হলো মানব জাতির সমস্যার মধ্যে সাদৃশ্য হওয়া, অতঃপর এ সমস্যা সমাধানে সাদৃশ্য পাওয়া ; যা কখনো কখনো হয়ে থাকে, সমস্যা ও সমাধান একই ধরনের পরিবেশে হওয়ার কারণে। অথবা এটা হয়ে থাকে মানুষের স্বভাবজাত প্রকৃতির বিষয়গুলোতে , যেমনঃ রাসুল সাঃ বলেছেনঃ “দাবীকারীকে প্রমাণ দিতে হবে, আর অস্বীকারকারীকে শপথ করতে হবে”।
মাইকেলঃ তবে ইহুদি ও খৃষ্টান আইন থেকে ইসলামী শরিয়ত সংগৃহীত হওয়ারও সম্ভাবনা রয়েছে, কেননা ইসলামের আগেই এদুটো আসমানী ধর্ম।
রাশেদঃ এ ব্যাপারে একজন বিশিষ্ট পাশ্চাত্য গবেষকের কথা দ্বারাই তোমার কথার জবাব দিব, জার্মান প্রাচ্যবিশেষজ্ঞ জোসেফ শাখত (Joseph Schacht) বলেনঃ “ইসলামী শরিয়ত একটি নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে উন্নত নীতিমালায় প্রতিষ্ঠিত, যাকে আমরা ধর্মীয় আইন বলতে পারি, বরং অন্য দুটি শরিয়ত যাকে আমরা দ্বীনি আইন বলে থাকি তা ঐতিহাসিক এবং ভৌগলিক দিক থেকে ইসলামী শরিয়তের কাছাকাছি।সে দুটি হলো ইহুদী এবং খ্রীষ্টান ধর্মের আইন কানুন। তবে এ দুটি ধর্ম ইসলামী শরিয়তের বিধিবিধানের থেকে অনেকটাই ভিন্ন। কেননা অন্যদুটি ধর্মের চেয়ে ইসলামী শরিয়তে অনেক শাখা-উপশাখা ও বৈচিত্র্য রয়েছে। যেহেতু এ ক্ষেত্রে ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে অনেক বিচার-বিবেচনা এবং সূক্ষ্ম পর্যবেক্ষণের পর আইনের এমন বিষয়গুলো প্রবর্তিত হয়েছে যেগুলো একই ধরনের হওয়াটা দুষ্কর।”
বরং তিনি এর উল্টো সম্ভাবনাও পেশ করেছেন, তিনি বলেছেনঃ “অন্যদিকে ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে আইনের বিভিন্ন শাখা উপশাখায় ইসলামী শরিয়ত অনেক প্রভাব ফেলেছে।... এছাড়াও ইসলামী শরিয়ত ইহুদি ও খৃষ্টান ধর্মের সেসব অনুসারিদের আইন-কানুনের মাঝেও অনেক প্রভাব ফেলেছে যারা ইসলামের উদারতা পেয়েছে এবং ইসলামী রাষ্ট্রে বসবাস করেছে।...আর এতে কোন সন্দেহ নাই যে, প্রাচ্যের খ্রিস্টানদের বড় দুটি দল ইয়াকুবিয়া ও নাস্তোরিয়ানরা ইসলামী শরিয়তের আইন থেকে কোন আইন গ্রহণ করার ব্যাপারে কোন সংকোচ করনা। এমন সকল বিষয়ে তারা ইসলামী আইন সংগ্রহ করে যেগুলোর ব্যাপারে ধারণা করা যায় যে তা মুসলিম বিচারকের দৃষ্টিতে আসতে পারে।”
রাজিবঃ তাহলে এবার তুমি যদি ইসলামী শরিয়ত ও অন্যান্য শরিয়তের মাঝে পার্থক্যগুলো আলোচনা করতে।
রাশেদঃ সবগুলো পার্থক্য উল্লেখ করা কঠিন, বিশেষ করে তুমি নির্দিষ্ট একটি শরিয়তকে ঠিক না করলে। তবে আমি ইসলামী শরিয়তের বৈশিষ্ট্যাবলী উল্লেখ করব, তুমি তখন সে বৈশিষ্ট্যগুলোর সাথে অন্যান্য শরিয়তের পার্থক্য করতে পারবে।
রাজিবঃ অসুবিধে নেই,
রাশেদঃ ইসলামী শরিয়তের মূল বৈশিষ্ট্যাবলী নিম্নরূপঃ
১। আল্লাহ প্রদত্ত জীবন বিধানঃ –যেমন আগে আমি উল্লেখ করেছি- এর মৌলিক উপাদানগুলো দুটি মূল উৎস কোরআন ও হাদিস থেকে নির্যাসিত। আর মানুষের ভূমিকা হলো জীবনের বাস্তবতায় উক্ত দুই উৎস থেকে বিধি- বিধান উদ্ভাবন করা। আল্লাহ প্রদত্ত উৎস হওয়ায় এর আরেকটি বৈশিষ্ট্য হলোঃ এর বিধি-বিধানের মূল লক্ষ্য হলো মানুষের সাথে স্রষ্টার সম্পর্ক সৃষ্টি করা।
২। স্থায়িত্ব এবং নমনীয়তা বা যুগের সাথে মিল রেখে চলাঃ এর মৌলিক, সামষ্টিক ও অকাট্যভাবে সাব্যস্ত বিধিবিধানগুলো স্থায়ী ও অপরিবর্তনশীল, এতে কোন ধরণের পরিবর্তন হবেনা, এ আইনগুলো সংরক্ষিত যা অন্য কোন বিধি বিধানে বিলীন হয়ে যাবেনা।
আর নমনীয়তা বা যুগের সাথে মিল রেখে চলার বৈশিষ্ট্য হলোঃ এর শাখা-উপশাখা ও যেসব বিধান প্রবল ধারণাপ্রসূত দলিল দ্বারা সাব্যস্ত সেগুলো যুগের চাহিদা অনুযায়ী বিভিন্ন যুগে বিভিন্ন রকমের বিধান হয়ে থাকে। অর্থাৎ ইসলামী শরিয়ত সেকেলে,বরং যুগের প্রতিটি নতুন সমস্যায় তার সমাধান রয়েছে।
৩। ব্যাপকতাঃ (সময়, স্থান, মানুষ ও বিধানের দিক থেকে) সময়ের ব্যাপকতা মানে এর বিধি বিধান সব যুগে সব সময় প্রযোজ্য। স্থানের ব্যাপকতা মানে ভৌগলিক কোন সীমারেখা নির্ধারিত না করে যে কোন জায়গায় এ শরিয়তের বিধিবিধান বাস্তবায়ন করা যায়। আর মানুষ বলতে, এর বিধানাবলীতে সব মানুষকে উদ্দেশ্য করা হয়েছে। আর এর বিধানের ব্যাপকতা বলতে, মানব জীবনের সব প্রয়োজনের সমাধান এতে রয়েছে;যেহেতু ইহা মানুষের জীবনের সব ধাপে, সব বিষয়ে বিধান প্রনয়ন করেছে এবং মানুষের জীবনের সর্বস্তরে এর বিধিবিধান চলে, চাই সে ভ্রূণ হোক, শিশু হোক, যুবক হোক, বা বৃদ্ধ হোক। ইহা মৃতকেও সম্মান করে। মানুষের সাথে তার স্রষ্টার সম্পর্ক এবং মানুষের নিজের সাথে এবং অন্যদের সাথে তার সম্পর্কের ক্ষেত্রে ও বিধান করে দিয়েছে।
৪। বাস্তব সম্মতঃ ইসলামী শরিয়তের বিধি বিধানগুলো আদিষ্ট লোকদের বাস্তবতাকে গুরুত্বসহকারে দেখে আদেশ নিষেধ করেছে। ইহা যেমন মানুষের শারীরিক আত্মিক, বিবেক জ্ঞান, ব্যক্তিগত ও সামাজিক বিষয়গুলো লক্ষ্য রেখেছে, তেমনিভাবে এগুলো বাস্তবায়নে ব্যক্তি ও সমষ্টির শক্তিকে অবমূল্যায়ন করেনি। অর্থাৎ তাদের শক্তি সামর্থ অনুযায়ী আদেশ নিষেধ করেছে।
৫। মধ্যমপন্থা ও সমতা বিধানঃ ইসলামী শরিয়ত সবক্ষেত্রে সুস্থিতি ও সমতা বজায় রেখে চলে, অতি বাড়াবাড়ি ও অতি ছাড়াছাড়ির মাঝে মধ্যমপন্থা অবলম্বন করে চলে। ফলে ইহা শক্তি ও স্থায়ীত্ব অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। যেমনঃ ইসলামী শরিয়ত ব্যক্তি মালিকানাকে কতিপয় শর্তাবলী ও নিয়ম নীতির মাধ্যমে স্বীকৃতি দিয়েছে। অন্যদিকে সমাজতন্ত্রে ব্যক্তিমালিকানা সম্পূর্ণ বাতিল করা হয়েছে, আর পুঁজিবাদে কোন ধরণের শর্তাবলী ছাড়াই স্বাধীনভাবে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। ইসলাম এ দুয়ের মাঝামাঝি পন্থা অবলম্বন করেছে। ইসলাম বীরত্বকে উৎসাহিত করেছে, ইহা ভীরুতা এবং উম্মত্ততা ও অদূরদর্শিতার মাঝামাঝি। আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করতে আদেশ দিয়েছে। তবে কৃপণতা ও অপচয়ের মাঝামাঝি পন্থা অবলম্বন করতে বলেছে।এমনিভাবে ইসলামের সব বিধি বিধান বাড়াবাড়ি এবং উদাসীনতা ও ছাড়াছাড়ির মাঝামাঝি।
৬। দুনিয়া ও আখেরাতের প্রতিদানের মাঝে সমন্বয় সাধনঃ কোন আইন লঙ্ঘন করলে অন্যান্য ধর্ম ও আইনের মত ইসলামী শরিয়ত ও দুনিয়াবী শাস্তির বিধান করেছে। তবে মানব রচিত আইন মানুষকে আখেরাতের শাস্তি দিতে পারেনা। পক্ষান্তরে ইসলামী শরিয়ত ইহার বিধান লঙ্ঘনকারীর ব্যাপারে আখেরাতে শাস্তির অঙ্গিকার করেছে।ফলে ইহা দুটি পরিণাম একত্রিত করেছে।
৭। মানুষের স্বার্থ ও প্রয়োজনের প্রতি লক্ষ্য রেখেছে এবং যেসব বিষয়ে মানুষের সাথে বিজ্ঞানের সম্পর্ক রয়েছে সে সব বিষয়ে জ্ঞান-বিজ্ঞানের সাথে বিরোধ করেনি।
মাইকেলঃরাশেদ! তুমি সব সময় তোমার ধর্মের ভাবমূর্তি ও রূপকে সুন্দর করতে বিচক্ষণতা ও দক্ষতার সাথে চেষ্টা কর।
রাশেদঃ আসলে ব্যাপারটা ধর্মীয় কট্টরতা নয়। তাহলে তুমি বিখ্যাত জার্মান কবি গ্যাটের কথাকে কিভাবে বিবেচনা করবে? তিনি বলেছেনঃ “পাশ্চাত্যের আইন ইসলামী আইনের তুলনায় অসম্পূর্ণ। আমরা ইউরোপের সবাই এখনও আমাদের সব চিন্তাধারা ও ধারণাসমুহ নিয়ে মুহাম্মদ (সাঃ) যেখানে পৌছেছেন সেখানে পৌঁছতে পারিনি। আর কেউই তার উপরে উঠতে পারবেনা”। গ্যাটে কি মুসলমান হওয়ার কারনে একথাগুলো বলেছেন?!
রাজিবঃ ইসলামী শরিয়তের বৈশিষ্ট্যের শেষ পয়েন্টটি আরো স্পষ্ট করতে আলোচনার দরকার আছে!
রাশেদঃ বিজ্ঞানের সাথে ইসলামী শরিয়তের বিরোধ নেই, এ ব্যাপারে তোমাকে উদাহরণ দিচ্ছিঃ ইসলামী শরিয়ত যেসব বিষয় বিশেষ গুরুত্বসহকারে আদেশ করেছে তার মধ্যে খাওয়ার জন্য প্রাণী জবাই করার নির্ধারিত পদ্ধতিতে জবাই করতে বলেছে। তাছাড়া পশুকে নির্দিষ্ট শ্রেণীতে সীমাবদ্ধ করেছে, আবার জবাই করার জন্য কতিপয় শর্ত দিয়েছে। আমি শুধু জবাই করার পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করব।
ইসলামী পদ্ধতিতে পশু জবাই করতে হবে জীবিতাবস্থায়, ঘাড়ের দুই শিরার মাঝে, জবাইকৃত পাণীর ঘাড় দেহ থেকে ছিন্ন করা যাবেনা। কেননা এতে জবাইয়ের পরে পেশীগুলো নড়াচড়া করতে থাকে, ফলে পশু স্বাভাবিকভাবে নড়াচড়া করতে পারে, যা যথাসম্ভব রক্ত মুক্ত করে (পূর্ণ রক্ত শূন্য করে)। অন্যদিকে অনৈসলামী পদ্ধতিতে জবাইয়ে পশুকে আল্লাহর নাম না নিয়ে হত্যা করা হয়, ভুল পদ্ধতিতে জবাই করা হয়, যেমনঃ গ্যাস দ্বারা শ্বাসরোধ করে হত্যা, বৈদ্যুতিক আঘাতে মৃত্যু, গুলি করে হত্যা ইত্যাদি পদ্ধতিতে জবাইয়ে পশুর মাংসপেশী নড়াচড়া করতে পারেনা। এ কারনে শরীরে রক্ত জমাট হয়ে থাকে। এ জমাট রক্ত বিভিন্ন জীবাণু জন্ম দেয়, ফলে এ মাংস ভক্ষণে জমাটকৃত রক্ত মানুষের শরীরে বিষাক্ত উপাদান সৃষ্টি করে। এছাড়াও এসব পদ্ধতিতে জবাই করলে পশু বেশি ব্যথা অনুভব করে।
আমাকে আরেকটি সূক্ষ্ম বিষয় বলতে সুযোগ দাও, সেটা হলোঃ জবাইয়ে সময় বিসমিল্লাহ বলার শর্ত, যদিও বাহ্যিক বা বস্তুগত দৃষ্টিকোণে পশুকে খাদ্যে পরিণত করার জন্য এর প্রয়োজনীয়তা নেই। কিন্তু ইসলাম সব কিছুকে আল্লাহর একত্ববাদের সাথে সম্পৃক্ত করে দিয়েছে। ইসলামী শরিয়ত বড় কয়েকটি বিষয় (তথা আল্লাহ, মহাবিশ্ব, মানুষ ও এ সবের শেষ পরিণতি) মোতাবেক ধর্মীয় একটি পরিপূর্ণ জীবন বিধানের সাথে সম্পৃক্ত। এ সব দৃষ্টিকোণে মানুষ আল্লাহর সৃষ্টিকূলের একটি সৃষ্ট জীব, তাই এসব প্রাণীর স্রষ্টার অনুমতি ছাড়া অন্যান্য সৃষ্টির উপর আক্রমণ বা সীমালঙ্ঘন করার অধিকার তার নেই; এমনকি যদিও এগুলো তাদের জীবনধারণের জন্য হোক। এজন্যই জবাইয়ের সময় বিসমিল্লাহ বলে আল্লাহর অনুমতি নেয়া হয়। মুসলমান এসব কাজ তার স্রষ্টার অনুমতি নিয়ে করে, যিনি তার জন্য এসব জিনিস হালাল করেছেন। মুসলিম তার রবের সামনে সর্বদা নতঝানু ও আত্মসমর্পণকারী।
মাইকেলঃ আমি স্বীকার করছি যে, ইসলামী শরিয়তের পরিচয়, ইহার বাস্তব প্রকৃতি ও বিধানাবলীর রহস্য বুঝতে আরো অনেক গভীর পড়াশুনা ও অধ্যয়নের দরকার আছে।